খুলনা | বুধবার | ০২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১

‘পাকিস্তানের সহযোগীরা এখন বুক ফুলিয়ে কথা বলছেন’

আ’লীগকে গণতন্ত্রের সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারি না : মির্জা ফখরুল

খবর প্রতিবেদন |
০৩:৩৬ পি.এম | ২৫ মার্চ ২০২৫


১৯৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত বাকশালের ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদেরকে বারবার বলতে হবে, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করতো না। আওয়ামী লীগ বারবার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। সুতরাং, আওয়ামী লীগকে আর কোন গণতন্ত্রের সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারি না।  মঙ্গলবার রাজধানী রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২৫ মার্চের এই কালো দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই দেশের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। হত্যা করেছে লাখো নিরীহ মানুষকে। কিন্তু পাকিস্তান এখনও ক্ষমা চায়নি। এ কথা বলছি এ কারণে, একটি গোষ্ঠী এই বিষয় আমলে নিচ্ছে না। তারা বলেছ, ৭১ কোন ঘটনা না। তারা বরং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছে। তাদের নাম বলতে চাই না। এখন তারা আবার গলা ফুলিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছে। ইতিহাস তো ইতিহাস। এটা যেন আমরা ভুলে না যাই।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে। এটাই এদের চরিত্র। ওরা দেখে, জনগণ যখন ক্ষেপে উঠে, তখন ওরা এভাবে কর্মীদের অরক্ষিত রেখে পালিয়ে যায়। এবার তাই করেছে, জনতার ক্ষোভে ভারতে পালিয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কার প্রথম শুরু হয়েছে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে, পরে করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের মৌলিক সংস্কার কিন্তু বিএনপি’র হাতে দিয়েই হয়েছে। এখন ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে তো বিএনপি, ১৬ সালে বিএনপি’র নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০৩০ ভীষন দিয়েছে। সংস্কার কোন নতুন বিষয় নয়। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের পাহাড় এনেছে। আমরা সংস্কারের প্রস্তাবনায় মতামত দিয়েছি, পক্ষে-বিপক্ষে। আমরা বলেছি, নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। এটি নিয়ে আজ ষড়যন্ত্র সৃষ্টি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু কুতুবের আবির্ভাব হয়েছে। তারা যে বাংলাদেশকে কোথায় নিতে চায় আমাদের জানা নেই। দেশের সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। যেটা আমরা মেনে নেব না। কারণ সেনাবাহিনী দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, আন্দোলনের ভিত্তি তো বিএনপি করেছে। হঠাৎ করেই একটা বিপ্লব হয়নি, বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের মধ্যে উঠে এসেছে। 
তিনি বলেন, বিএনপি খারাপ কাজ করে এমন কথা যেন না শুনতে হয়। এতে সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যাবে। আগামীর বাংলাদেশ আপনাদের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বাস করি, ওরা গাড়ি বহর নিয়ে যা করুক, সমস্যা নেই। আমরা জানি ওরা কি করতে পারবে। আগামীতে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে ইনশাআল­াহ। 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার ড মোশাররফ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্যকে আমরা সফল করতে পারিনি। দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বারবার হোঁচট খেয়েছি। শুধু কি তাই, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করেছিল স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ। জিয়ার অবদানকে অস্বীকার করতে গিয়ে বারবার আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।  অথচ জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন। দেশের মানুষ প্রমাণ করতেছে, ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে সরকার পরিবর্তন করতে পারে, যেটা তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে দেখিয়েছে। 
বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জনগণের আকাক্সিক্ষত ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে, উছিলা সামনে আনার চেষ্টা করেছে। জনগণ সন্দেহ পোষন করছে, আমরা কিন্তু বুঝি। কেউ বলছে, সংস্কার আবার স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এগুলো বলে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিলম্ব করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। দেশ নির্বাচনমুখী হলে যত ষড়যন্ত্র আসুক না কেন, জনগণ তা মোকাবিলা করবে। 
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশীয় যারা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার সহযোগী ছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী ছিল তারা এখন ‘বুক ফুলিয়ে’ কথা বলছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, পাকিস্তান একাত্তরের বর্বরতার জন্য এখনো ক্ষমা চায়নি। কিন্তু অনেকে এখন একাত্তরে কিছু হয়নি এমন বলার চেষ্টা করে। মুক্তিযুদ্ধের অবস্থা আমরা ভুলে যাচ্ছি বা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিলো তারা এখন বুক ফুলিয়ে কথা বলে। কারো নাম নিতে চাই না। তিক্ততা সৃষ্টি করতে চাই না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কাছে অত্যন্ত আবেগের। এটি আমরা ভুলতে পারি না। জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার অবদান ভুলে যাওয়ার নয়।
নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান-অবজ্ঞা প্রদর্শন না করা ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে তাগিদ দেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, নতুন প্রজন্মের ধৃষ্টতা তারা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রশ্ন করে। যারা ইতিহাস জানে না তারা জনগণের কোনো উপকার করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, ৭১-৭৫ দুঃসহ সময় ছিলো। আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সুতারাং তাদের আর কোনো গণতন্ত্রের সুবিধা দেওয়ার কারণ নেই। সংস্কার কথা অনেকেই বলেছে তবে দেশে মৌলিক সংস্কার হয়েছে বিএনপি’র হাত ধরে। ৩১ দফা সংস্কার বিএনপি দিয়েছে। বর্তমান সরকার সংস্কারের নামে বিশাল পাহাড় নিয়ে এসেছে। যেগুলো অনেক কিছুই জনগণ বোঝে না। বিএনপি পরিষ্কার করে বলেছে জনগণের জন্য যা উপকারী সেই সংস্কার করতে হবে। তবে এই গণতন্ত্রের পথে যাত্রার একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। নতুন করে ষড়যন্ত্র ও সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন নতুন কুতুব তৈরি হয়েছে যারা বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে নিতে চায় না। 
এ সময় সেনাবাহিনীকে নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক না ছড়ানোর আহŸান জানান ফখরুল। বলেন, সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। যা মেনে নিতে পারি না। 
নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, এমন কোনো কথা যেন না শুনতে হয় যে বিএনপি খারাপ কিছু করছে। যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে শোডাউন করে তারা কী করবে তা বোঝা যাচ্ছে। তাই নিজেরা সতর্ক থাকুন। 
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্টজন, বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ