খুলনা | সোমবার | ৩১ মার্চ ২০২৫ | ১৭ চৈত্র ১৪৩১

জ্বালানির অভাবে পিছিয়ে আছে খুলনার অর্থনীতি

ভোলার গ্যাস ঢাকায় দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ খুলনাবাসী, নাগরিক সমাজের ক্ষোভ

রামিম চৌধুরী |
০১:৫৬ এ.এম | ২৮ মার্চ ২০২৫


খুলনায় আবারো অনিশ্চয়তায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের কার্যক্রম। বদলে যাচ্ছে ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপ লাইনের রুট। ভোলা-বরিশাল অংশ অপরিবর্তিত রেখে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেট্রোবাংলা। এতে খুলনায় গ্যাস আসার সম্ভবনা প্রায় শেষ হতে চলেছে বলে আশঙ্কা নাগরিক সমাজের। থমকে আছে শিল্পের অগ্রগতিসহ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। 
এক সময়ের শিল্পনগরী খুলনা এখন হারিয়েছে তার শিল্পের জৌলুস। কখনো ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি এ অঞ্চল জুড়ে। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান করার জন্য আছে পর্যাপ্ত ফাকা জায়গা, ভাল রয়েছে যাতায়াত ব্যবস্থা, পাশেই রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর। তাহলে কেনো খুলনায় বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা? মূলত একটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে জ¦ালানী হিসাবে বড় ধরনের ভ‚মিকা পালন করে গ্যাস। সেই জ্বালানী গ্যাসের সরবরাহই নেই খুলনাতে। এতে আগ্রহ হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। 
খুলনায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস না আসার কারনে শুধু যে শিল্পখাতের ক্ষতি হচ্ছে তা কিন্তু নয়। এখানে এরই মধ্যে হাজার কোটি টাকা খরচ করে বানানো হয়েছে বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর কিছু প্রকল্প একবারেই বন্ধ রয়েছে, আবার কিছু প্রকল্প চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। জ্বালানীর সরবরাহ নিশ্চিত না করেই খুলনায় একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। খুলনায় বর্তমানে মোট ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানই গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। তবে গ্যাস না পেয়ে বেশি খরচে হাই স্পিড ডিজেল ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক জায়গায়। নগরীর খালিশপুর এলাকায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয়েছে রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটি নির্মান করা হয়েছে গ্যাসের ওপর নির্ভর করেই। তবে গ্যাস কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছে। শুধুমাত্র গ্যাসের অভাবে নষ্ট হওয়ার পথে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্প। এছাড়াও খুলনার ২৩০ ও ৩৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলো চালানো হচ্ছে হাইস্পিড ডিজেলের মাধ্যমে। প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটের উৎপাদন ব্যয় হয় ৫ টাকার মতো। অন্যদিকে জ্বালানি তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয়। প্রতি ইউনিটে খরচ দাঁড়ায় প্রায় ২০ টাকা।
খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় গ্যাস সরবারহের দায়িত্ব রয়েছে পেট্রোবাংলার আওতাধীন সুন্দরবন গ্যাস  কোম্পানির। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে ২০১২ সালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে খুলনার আড়ংঘাটা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটি। নির্মাণ করা হয় গ্যাস ট্রান্সমিশন ল্যান্ড ফিল্ডও। সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি প্রস্তুত থাকলেও গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়নি পেট্রোবাংলার গড়িমসিতে। সবশেষ ভোলার গ্যাস বরিশাল হয়ে ঢাকা ও খুলনায় সরবরাহের সিদ্ধান্তে অনেকটা আশ^স্ত হয় খুলনাবাসী। তবে খুলনায় গ্যাসের প্রয়োজনীতা কম এমন কথার উপর ভিত্তি করে খুলনায় পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের কার্যক্রম পেছানো হয়েছে। ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে প্রথমে গ্যাস যাবে ঢাকায়। প্রথম ধাপে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে, বরিশাল-ঢাকা পাইপ লাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গত ৫ মার্চ স্বাক্ষর করা হয়েছে ফাইল। সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার সরকার সময়ের খবরকে বলেন, ভোলার গ্যাস খুলনা ও ঢাকা দুই জায়গায়ই পর্যায়ক্রমে সরবারহ করা হবে। পেট্রো বাংলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগে ঢাকায় যাবে তারপর গ্যাস আসবে খুলনাতে। 
ভোলার গ্যাস আগে ঢাকায় যাওয়ার খবরে অনেকটা হতাশায় পড়েছে খুলনাবাসী। যুগ যুগ ধরে গ্যাসের এই চাহিদা আলোর মুখ দেখতে দেখতে আবারো নিভতে বসেছে। নাগরিক নেতাদের মতে, এবার আগে খুলনায় গ্যাস না আসলে আর খুলনাবাসীর এই চাহিদা পূরণ হবে না। হবে না অর্থনীতির আগ্রগতি, বাড়বে না শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সেই সাথে বন্ধ হবে হাজার হাজার কোটি টাকার বেশ কিছু প্রকল্প। তাই ঢাকার আগে খুলনায় গ্যাস সরবরাহের দাবি নাগরিক নেতাদের। 

্রিন্ট

আরও সংবদ