খুলনা | বুধবার | ০২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১

মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে প্রায় ৪০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানে প্রতিশ্রুতি

২১০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ-ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি চীনের

খবর প্রতিবেদন |
০১:১৭ এ.এম | ২৯ মার্চ ২০২৫


প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ঐতিহাসিক চীন সফরে দেশটির সরকার ও কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ, ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্র“তি পেয়েছে বাংলাদেশ।
ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চীনের প্রায় ৩০টি কোম্পানি বাংলাদেশের বিশেষ চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে। এটা প্রধান উপদেষ্টা বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশের উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগ করতে আহŸান জানানোর পর এসেছে।
চীন মোংলা বন্দর আধুনিকীকরণ প্রকল্পে প্রায় ৪০ কোটি ডলার ঋণ প্রদান, চীনা শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে ৩৫ কোটি ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা হিসেবে আরও ১৫ কোটি ডলার বরাদ্দ প্রদানের পরিকল্পনা করেছে। বাকি অর্থ অনুদান ও অন্যান্য ঋণ সহায়তা হিসেবে আসবে।
প্রধান উপদেষ্টার চার দিনের চীন সফরের প্রসঙ্গ উলে­খ করে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ সফর।’
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, এই সফর বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় অধ্যাপক ইউনূস চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে বাংলাদেশে চীনের বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে বিনিয়োগের জন্য সবুজ সংকেত দেওয়ার অনুরোধ জানান।
আশিক চৌধুরী জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট নিশ্চিত করেছেন, চীনের কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদন কেন্দ্র  বৈচিত্র্যময় করতে চাইলে বাংলাদেশে স্থানান্তরের জন্য তিনি উৎসাহিত করবেন। তিনি বলেন, ‘এই সফর চীনের অনেক কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে রাজি করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি কেবল সময়ের ব্যাপার।’
শুক্রবার অধ্যাপক ইউনূস ও আশিক চৌধুরী বেইজিংয়ে কিছু বৃহৎ চীনা কোম্পানিসহ ১০০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যেখানে বাংলাদেশে উৎপাদন খাতে বিশেষ করে উন্নত টেক্সটাইল, ওষুধশিল্প, হালকা প্রকৌশল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আহŸান জানানো হয়।
৯ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই : বাংলাদেশ এবং চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি এবং আটটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারকগুলো বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ ও উন্নয়নের দিগন্ত উন্মোচন করছে। শুক্রবার এই চুক্তি ও স্মারকগুলো স্বাক্ষরিত হয়, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে সহায়ক হবে।
এই চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে, বিভিন্ন সেক্টরে সহযোগিতার অঙ্গীকার দেখা যাচ্ছে, যেমন সাংস্কৃতিক বিনিময়, গণমাধ্যম, ক্রীড়াক্ষেত্র, স্বাস্থ্যখাতে সহায়তা, এবং শিল্পকলা ও সাহিত্য আদান-প্রদান। বিশেষত, দুই দেশের সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনুবাদ এবং সৃজনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করা হবে।
এছাড়াও দু’টি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত পাঁচটি প্রধান চুক্তি এই ধরনের সহায়তার ক্ষেত্রে আরও গভীর এবং বহুমুখী সহযোগিতার পথ তৈরি করবেÑ
বিনিয়োগ আলোচনা শুরু করা: এই চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ এবং চীন যৌথভাবে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে আলোচনা শুরু করবে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।
চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু: এই বিশেষায়িত অঞ্চলটি বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে এবং বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্য খাতে উন্নয়ন ঘটাবে।
মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও স¤প্রসারণ: মোংলা বন্দর বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর, এবং এটি আধুনিকীকরণের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হবে।
রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ: চীনা প্রযুক্তির সহায়তায় বাংলাদেশে একটি রোবট ফিজিওথেরাপি এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, যা স্বাস্থ্যখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
কার্ডিয়াক সার্জারি গাড়ি অনুদান: এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে চীনের পক্ষ থেকে বিশেষ ধরনের কার্ডিয়াক সার্জারি গাড়ি প্রদান করা হবে, যা দ্রুত সেবায় সহায়তা করবে এবং হৃদরোগের চিকিৎসায় প্রভূত সুবিধা নিয়ে আসবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ