খুলনা | বুধবার | ০২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১

মালিককে তুলে এনে রাতে ছেড়ে দিল পুলিশ

কালীগঞ্জের বারবাজার জননী আছিয়া প্রাইভেট হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি |
১১:৩২ পি.এম | ২৯ মার্চ ২০২৫


ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় সাথী আক্তার (৩০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার বারাবাজারে জননী আছিয়া প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই গৃহবধূ মারা যায়। নিহত সাথী বারোবাজার বাদেডিহি গ্রামের শরিফুল ইসলামের মেয়ে। এদিকে ঘটনায় পর নিহতের স্বজন ও স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা হাসপাতালটি ঘেরাও করে মালিককে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে কালীগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হাসপাতালের মালিক জামাত আলীকে উদ্ধার করলেও রাতেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।  
নিহত গৃহবধূর পিতা শরিফুল ইসলাম জানান শুক্রবার দুপুরের পর তার মায়ের সাথে করে অন্তঃসত্ত¡া মেয়ে সাথী খাতুনের সিজারের জন্য বারবাজারের জননী আছিয়া প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠায়। সন্ধ্যায় ডাক্তারের সিজারের পর একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু সাথীকে ওটি রুম থেকে বেডে স্থানান্তরের পর পরই প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। মেয়ের এমন শ্বাসকষ্ট দেখে তিনি বার বার হাসপাতাল মালিকদের কাছে গিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেয়েকে বাইরে পাঠানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে বাইরে পাঠানো লাগবে না। কিছু সময়ের মধ্যেই রোগী সেরে উঠবে। 
তবে সিজারিয়ান গৃহবধূ সাথী খাতুনের শ্বাসকষ্ট ক্রমেই বাড়তে থাকে। অপারেশনের দেড় ঘন্টা পর সাথীর মৃত্যু হয়। পিতার ভাষ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে সাথীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বজন ও স্থানীয় বিক্ষুব্ধ শত শত জনতা ওই হাসপাতালটি ঘেরাও করে। এসময় মালিক জামাত আলী হাসপাতালটির মধ্যেই ছিলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে খবর পেয়ে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি টিম এসে জামাত আলীকে তুলে নিয়ে যায়। তবে রাতেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, রোগী মৃত্যুর ঘটনায় শত শত জনতা হাসপাতালটির মালিকসহ অন্যান্য স্টাফদের ঘেরাও করে রেখেছিল। পরিস্থিতি শান্ত ও দুর্ঘটনা এড়াতে তিনি তাৎক্ষণিক পুলিশ টিম পাঠিয়ে হাসপাতালের মালিক জামাত আলীকে তুলে নিয়ে আসেন। তাকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। সর্বশেষ ওই ঘটনায় লিখিত কোন অভিযোগ না থাকায় হাসপাতালের মালিককে নিরাপদে ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানান তিনি। 
কোন ডাক্তার সিজার করেছে জানতে শনিবার বিকালে হাসপাতালের মালিক জামাত আলীর ০১৯৪২৭০৫৬৩২ নং মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের পর থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার কোন প্রাইভেট ক্লিনিক বা প্রাইভেট হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করা নাই। এ ছাড়াও এসব সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নেই, অপরিচ্ছন্ন হাসপাতালটিতে বৈধ কোন চিকিৎসক বা নার্স নেই। দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে এসব প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলো। 
এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ কামরুজ্জামান বলেন ঘটনাটি কেউ আমাকে জানায়নি, আমি এখনই কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে ফোন করছি। তিনি ঘটনা তদন্তপূর্বক বারবাজারের ওই প্রাইভেট হাসপাতালটি বন্ধ করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন। জানা গেছে, কালীগঞ্জের প্রাইভেট হাসপাতালগুলো ২০২০ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স নবায়ন করা আছে, ২০২০ সালের পর থেকে একটা প্রতিষ্ঠান ও নবায়ন করা নেই। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রয়োজনে যে সমস্ত সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের  লাইসেন্স নবায়ন করা নেই আমি সেগুলো সব বন্ধ করার ব্যবস্থা করবো বলে জানা এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

 

্রিন্ট

আরও সংবদ