খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১০ এপ্রিল ২০২৫ | ২৭ চৈত্র ১৪৩১

খুলনা নাগরিক সমাজের সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা

খুলনায় গ্যাস সরবরাহের দাবি কোনো দয়া বা করুণার বিষয় নয় এটি জাতীয় সুষম উন্নয়নের প্রশ্ন

খবর বিজ্ঞপ্তি |
০২:০০ এ.এম | ০৬ এপ্রিল ২০২৫


ভোলা-বরিশাল-খুলনা পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প স্থগিত/বাতিলের প্রতিবাদে খুলনা নাগরিক সমাজের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। 
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এড. মোঃ বাবুল হাওলাদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, খুলনায় পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে পেট্রোবাংলার অধীন সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ভেড়ামারা হতে খুলনায় পাইপ লাইন বসানোর কাজ শুরু করে ২০১২ সালে। এ প্রকল্পের আওতায় ভেড়ামারা হতে খুলনা আড়ংঘাটা পর্যন্ত ১৬৫ কিলোমিটার পাইপ বসানোর পর কর্তৃপক্ষ উক্ত প্রকল্প পতিত ঘোষণা করে পরবর্তীতে পাইপসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে পেট্রোবাংলার উদাসীনতাই মূলত দায়ী। এ প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় হলেও মজার ব্যাপার কর্তৃপক্ষকে কোনো প্রকার জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হয়নি। পরবর্তীতে ভোলা-বরিশাল-খুলনা রুটে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্তে এ অঞ্চলের মানুষ পুনরায় আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু এ প্রকল্পের আওতায় ভোলা-বরিশাল সম্ভাব্যতা যাচাইসহ বেশকিছু কাজ এগোনোর পর অকস্মাৎ গত (মার্চ) মাসের প্রথম সপ্তাহে খুলনায় গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প স্থগিত/বাতিল করে বরিশাল-ঢাকা রুটে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের সিদ্ধান্তের সংবাদ এ অঞ্চলের মানুষকে মারাত্মভাবে আহত করে। পুনরায় স্বপ্নভঙ্গের খবর আমাদেরকে রীতিমতো হতাশ করে। 
লিখিত বক্তব্য আরও বলা হয় খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো লোকসানের অজুহাতে রাতের অন্ধকারে তৎকালীন সরকার তাদের পেটোয়াবাহিনী দ্বারা একটি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বন্ধ করে দেয়। এর পূর্বাপর আরো অনেক ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্প বন্ধ করে শিল্পনগরী খুলনাকে বিরাণভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। খুলনায় ন্যূনতম ইন্ডাস্ট্রিয়াল কানেকশনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করতে পারলে, বন্ধ কারখানাগুলোর যান্ত্রিক ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে, গ্যাসের ব্যবহার উপযোগী করে পতিত থাকা বিকেল অংকের ভূমি এবং অবকাঠামো, সাথে সাথে বিপুল অংকের বেতনা ভাতা প্রাপ্ত জনবল কাজে লাগিয়ে এগুলোকে লাভজনক খাতে পরিণত করা সম্ভব।  এখানে রয়েছে দেশের ২য় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর, পদ্মাসেতু নির্মাণ হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থারও অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখযোগ্য। খুলনায় গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার যে সুযোগ তৈরি হবে, তাতে করে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা। বাড়বে ব্যক্তি উদ্যোক্তাও। গ্যাস না থাকার কারণে এ অঞ্চলে বিনিয়োগে উৎসাহ নেই শিল্প উদ্যোক্তাদের। 
লিখিত বক্তব্য বলা হয় দেশের টেকসই জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে দেশের অভ্যন্তরের সকল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে সুপরিকল্পিত ভাবে। উন্নয়ন হতে হবে সুষম। ছোট আয়তন এবং সীমিত সম্পদ বিবেচনায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। খুলনায় শিল্প-কারাখানা গড়ে উঠলে বা বন্ধ শিল্প-কারখানা চালু হলে শুধুমাত্র খুলনার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাই হবে না, কমবেশি এ সুবিধা ভোগ করবেন সমগ্র দেশের মানুষ। খুলনায় উৎপাদনের চাকা সচল হলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতেও। সুতরাং খুলনায় গ্যাস সরবরাহ এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি কোনো দয়া বা করুণার বিষয় নয়। এটি জাতীয় উন্নয়নের প্রশ্ন। সম্ভাবনাময়ী একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে অবহেলিত-বঞ্চিত রেখে, উন্নয়নের মূল ধারা থেকে পাশ কাটিয়ে রেখে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। 
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় পেট্রোবাংলা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে খুলনা নাগরিক সমাজ প্রয়োজনে সর্বস্তরের নাগরিকদের সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবে।
কর্মসূচি : উপরোল্লিখিত দাবি পূরণের লক্ষ্যে স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। পরবর্তীতে বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনে বৃহৎ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। 
সংগঠনের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এড. আ ফ ম মহসীনের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের অন্যতম সদস্য এস এম দেলোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য যথাক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক নিতাই পাল, গণসংহতি আন্দোলনের খুলনা জেলা আহবায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, সিপিবি নেতা মিজানুর রহমান বাবু, আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসীর সাধারণ সম্পাদক সরদার আবু তাহের, কবি সাংবাদিক শেখ আবু আসলাম বাবু, নজরুল গবেষক কবি সৈয়দ আলী হাকিম, কবি নুরুন নাহার হীরা, আজকের জনকথা’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আহম্মেদ হোসাইন ছানু, সাইফুর মিনা, খ ম শাহীন হোসেন, এড. মেহেদী হাসান, এস এম চন্দন, কবি আজাদুল হক, চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস, কবি হোসাইন মাহমুদ বাচ্চু, কবি রহমত আলী, এজাজুর রহমান প্রমুখ। 

্রিন্ট

আরও সংবদ