খুলনা | বুধবার | ০৯ এপ্রিল ২০২৫ | ২৫ চৈত্র ১৪৩১

নিজ অফিসেই মৃত্যু শিক্ষা কর্মকর্তার নেপথ্যে সাংবাদিকদের তদবিরের চাপ!

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪১ এ.এম | ০৭ এপ্রিল ২০২৫


ঈদের ছুটি কাটিয়ে প্রথম কর্মদিবসে অফিসে এসেই স্ট্রোক করে মারা গেলেন খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শামসুল হক (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন...আমরা তো আল্লাহর এবং আমরা আল্লাহর কাছেই ফিরে যাবো)। দুপুর ১২টার দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন। হঠাৎ কাঁপতে কাঁপতে  চেয়ারে পড়ে যান। দ্রুত সহকর্মীরা তাকে খুলনার  বেসরকারি সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে সহকর্মীরা একে স্বাভাবিক মৃত্যু মানতে নারাজ। 
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সাংবাদিক পরিচয়দানকারী চারজন বহিরাগত একটি তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের বিষয়ে তার ওপর চাপ প্রয়োগ ও বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হওয়ার একপর্যায়ে তিনি স্ট্রোক করেন।
বাদ আসর মরহুম মোহাম্মদ শামসুল হকের জানাজা শিক্ষা অফিস চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুলসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষা বিভাগের সহকর্মীবৃন্দ জানাজায় অংশ নেন। জানাজা শেষে তার মরদেহ রাজশাহীর পবায় গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। এ সময় শামসুল হকের সহকর্মীদের মধ্যে ছিল চাপা ক্ষোভ। উপস্থিত জনসাধারণ ও সাংবাদিকদের সামনে তারা মুখ খুলতে নারাজ ছিলেন। তবে প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের কাছে জানিয়েছেন ঘটনার বিস্তারিত। 
জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার এ কে বি কে  মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৪ সালের জুন মাসে আয়া পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন বীথিকা রানী রায়। নিয়োগটি বিধিমোতাবেক হয়নি বলে উপ-পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন দেবাশীষ মন্ডল ও অমিত মন্ডল নামে দুই ব্যক্তি। অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পান মোহাম্মদ সামছুল হক। তদন্তে গিয়ে দেখেন অভিযোগকারীদের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। যার কারণে যথাসময়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারেননি।
রোববার বেলা ১১টার দিকে দু’টি টিভি চ্যানেল ও একটি স্থানীয় দৈনিক সংবাদপত্রের সাংবাদিক ও তাদের এক সহযোগীকে নিয়ে শামসুল হকের কক্ষে প্রবেশ করেন। তারা তদন্ত রিপোর্টটি দ্রুত জমা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। এ সময় ওই রুমে ওই চার সাংবাদিক ছাড়া অন্য কেউ ছিলেন না। 
এর আগেও এই বিষয়ে কথা বলতে তারা ৩/৪ বার তার কাছে এসেছিলেন। একপর্যায়ে তিনি সহকর্মী পরিদর্শক বাবুল হাওলাদারকে রুমে ডাকেন। বাবুল রুমে প্রবেশ করতেই তিনি বলেন, দেখেন তো সাংবাদিকরা কি দাবি করছেন? এ কথা বলেই তিনি মাথা চেপে ধরে ঢলে পড়েন। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 
অন্যদিকে শিক্ষা কর্মকর্তার আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার সহকর্মীদের মাঝে। খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসের হিসাব রক্ষক শেখ শাহিনুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটি কাটিয়ে রোববার সকালে শামসুল হক কাজে যোগ দেন। দুপুর ১২টায় নিজের কক্ষে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন তিনি। কথা বলতে বলতে হঠাৎ তিনি চেয়ারে পড়ে যান। আমরা দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু ততক্ষণে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। 
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে পথেই তার মৃত্যু হয়েছে। বিকেলে মরদেহ গোসল করিয়ে রাজশাহীতে তার গ্রামের বাড়ি উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সহকর্মীরা জানান, খুলনায় তিনি একাই থাকতেন। তার দুই স্ত্রীর একজন সাতক্ষীরা এবং একজন ঢাকায় থাকেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে খুলনা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

্রিন্ট

আরও সংবদ