খুলনা | শনিবার | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

সাংবাদিক মনিরুল হুদার ইন্তেকাল, আজ জানাজা শেষে দাফন

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০২:০৭ এ.এম | ১২ এপ্রিল ২০২৫


খুলনা পৌরসভার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, প্রথিতযশা কর আইনজীবী, সিনিয়র রোটারিয়ান মনিরুল হুদা শুক্রবার সকালে ঢাকায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিলাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন...আমরা তো আলাহর এবং আমরা আলাহর কাছেই ফিরে যাবো)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন কন্যা ও এক পুত্রের জনক ছিলেন। গতকাল যোহর বাদ ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদে মরহুমের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। 
আজ শনিবার বাদ জোহর খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে মরহুমের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে টুটপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হবে। মরহুমের পরিবারের পক্ষে খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহŸায়ক এড. শফিকুল আলম মনা জানাযা ও দাফন কাজ তদারকি করছেন। 
তাঁর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশসহ মরহুমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে সময়ের খবর পরিবার। 
মনিরুল হুদা খুলনার সকল স্তরের মানুষের কাছে শ্রদ্ধাভাজন ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন, ছিলেন আস্থার প্রতীক। খুলনার সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতায় জীবন্ত কিংবদন্তী। এ অঞ্চলের সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের গর্ব ও অহংকারের অগ্রজ সহকর্মী। তিনি দক্ষ পেশাজীবী হিসেবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উদাহরণ। পাকিস্তান পর্বে এবং বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরের নানান ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। ১৯৫২ সাল থেকে শুরু করে আজ অবধি তিনি সংবাদপত্র জগতে পদচারণা করে চলেছেন। এ গর্ব দক্ষিণাঞ্চলবাসীর। খুলনার সাংবাদিকতায় এক অনন্য ইতিহাস। ৭০ বছর সংবাদকর্মী হিসেবে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে উদাহরণ একমাত্র তিনি। দীর্ঘ সময়ে খুলনার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, শিল্প-কলকারখানা স্থাপন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, পীর খানজাহান আলী (রঃ) সেতু, মেডিকেল কলেজ, বিমান বন্দর, শহর রক্ষা প্রকল্প, মোংলা বন্দর আধুনিকায়ন, সর্বোপরি সুন্দরবনকে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি ধীমান সাংবাদিকের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর নানামুখী প্রতিভা দৃশ্যমান। তিনি ভাষা সৈনিক, সাবেক ছাত্রনেতা, সাংবাদিক নেতা, আয়কর আইনজীবী ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। 
বৃটিশ শাসনামলে মনিরুল হুদা বাগেরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। দিনটি ১৯৩৭ সালের ২৭ নভেম্বর। মরহুম সামছুল হুদা তাঁর পিতা। তিনি বাগেরহাটে মহকুমা প্রশাসক ছিলেন। মরহুমা আমেনা খাতুন তাঁর মা। তাঁর মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্বটি কেটেছে বাগেরহাটে। সেখানেই তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। একই বছর ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সংবাদ ও কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যযুগ পত্রিকায় বাগেরহাট থেকে ডাকযোগে সংবাদ পাঠাতে শুরু করেন। নিছক কৌতুহল বশতঃ খবর লিখে পাঠানো, পরবর্তীতে তা ছাপার অক্ষরে দেখা এবং তা-ই সারাজীবন নেশার মতোই তাঁকে তাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়েছে। শুরুর পর্বে স্বাভাবিকভাবে তিনি ছিলেন খন্ডকালীন সংবাদদাতা। পেশাজীবী নন। তবে ওটাই তাঁর সাংবাদিকতার শুরু। পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি ১৯৫৩ সালে তার সম্পাদনায় বাগেরহাট থেকে মাসিক বিদ্যুৎ নামে পত্রিকা প্রকাশ করেন। এখানে বলে রাখা ভালো, ১৯৫৩ সালে কবি হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় ঢাকা হতে একুশে সংকলন প্রকাশিত হয়। আর সারা পূর্ব-পাকিস্তানের জেলা-মহকুমা পর্যায়ে অসংখ্য সংকলন প্রকাশিত হতে শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরেও অনেকদিন একুশে ফেব্র“য়ারিকে ঘিরে এরকম অগণিত পত্রিকা, স্মরণিকা প্রকাশিত হতো। মনিরুল হুদা সম্পাদিত বিদ্যুৎ নামের পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হতো। পর পর আট সংখ্যা প্রকাশিত হয়। তারপর মনিরুল হুদা উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে যান রাজশাহী কলেজে। ফলে বাগেরহাট হতে বিদ্যুৎ-এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। 
এর আগেই ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বরের একটি ঘটনা তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা ঘটনা। ওইদিন চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ-এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। পশুর নদীর জয়মনির গোল-এ “সিটি অব লিয়ন্স” নামের একটি বিদেশী জাহাজ নোঙ্গর করে। বন্দরে নোঙ্গর করা জাহাজটির ছবি তিনি ক্যামেরাবন্দি করেন। তখন তিনি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী। পিতা বাগেরহাট মহকুমার প্রশাসক। এ কারণেই তিনি বন্দরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর ধারণ করা ছবিটিই পরবর্তীতে বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত ইয়ার-বুকে ছাপা হয়। 
১৯৫৩ সালে মনিরুল হুদা বাগেরহাট টাউন হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। রাজশাহী কলেজ থেকে ১৯৫৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৫৭ সালে একই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে রাজশাহী কলেজ ছাত্র-সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তবে বিশেষ কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। প্রত্যক্ষভাবে কখনোই রাজনীতির সাথে জড়িত হননি। 
১৯৫৯ সালে তিনি আয়কর আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৬-২০১৯ বাংলাদেশ ট্যাক্স ল’ইয়ার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। 
সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহের কারণেই ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি দৈনিক পাকিস্তান-এ যোগ দেন। আত্মপ্রকাশের প্রথম দিন থেকে ১৯৯৭ সালে দৈনিক বাংলা বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত তিনি খুলনা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ পত্রিকার ইতিহাসে তিনিই দীর্ঘদিনের কর্মী হিসেবে রেকর্ড সৃষ্টি করেন। 
দৈনিক বাংলা থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি বেশ কিছুদিন সংবাদপত্র হতে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। আবারও ২০০৬ সালের ১০ জানুয়ারীতে তিনি দৈনিক জন্মভূমি’র প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন। আমৃত্যু তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। 
বিভিন্ন মহলের শোক : খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, প্রবীণ সাংবাদিক মনিরুল হুদার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ, মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে বিভিন্ন মহল।
বিবৃতিদাতারা হলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক যথাক্রমে শেখ সাদী, মাসুদ পারভেজ বাবু, চৌধুরী হাসানুর রশীদ মিরাজ প্রমুখ।  
অনুরূপ শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।  
অনুরূপ শোক বিবৃতি দিয়েছেন খুলনা প্রেসক্লাবের আহবায়ক এনামুল হক ও সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুলসহ নির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দ। 
অনুরূপ বিবৃতি দিয়েছেন বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান, মহাসচিব অ্যাড. শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ, মোঃ নিজামউর রহমান লালু, মিনা আজিজুর রহমান, শাহীন জামাল পন, অধ্যাপক মোঃ আবুল বাশার, অধ্যক্ষ রেহানা আক্তার, মিজানুর রহমান বাবু, অধ্যাপক মোঃ আযম খান, মোঃ খলিলুর রহমান, মামুনুরা জাকির খুকুমনি, মোঃ মনিরুজ্জামান রহিম, সরদার রবিউল ইসলাম রবি, মোল্লা মারুফ রশীদ, সৈয়দ এনামুল হাসান ডায়মন্ড, মনিরুল ইসলাম (মাস্টার), শেখ গোলাম সরোয়ার, মতলুবুর রহমান মিতুল, প্রফেসর সেলিনা বুলবুল, এড. মনিরুল ইসলাম পান্না, শেখ আব্দুস সালাম (শিরোমনি), প্রকৌশলী রফিকুল আলম সরদার, শেখ আরিফ নেওয়াজ, বিশ্বাস জাফর আহমেদ, জি এম রেজাউল ইসলাম, এস এম আকতার উদ্দিন পান্নু, প্রকৌশলী সেলিমুল আজাদ, মোঃ হায়দার আলী, মনজুর হাসান অপু, রকিব উদ্দিন ফারাজী, মোঃ শফিকুর রহমান, শিকদার আব্দুল খালেক, মোঃ ইলিয়াস মোল্লা, মোঃ আব্দুস সালাম, এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব, এস এম মুর্শিদুর রহমান, এড. মিনা মিজানুর রহমান, এড. শেখ আবুল কাসেম, এড. কুদরত ই খুদা, আফজাল হোসেন রাজু, আসাদুজ্জামান মুরাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবু জাফর, মামুন রেজা, তরিকুল ইসলাম, এইচ এম আলাউদ্দিন, মোরশেদ উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম পিয়াস প্রমুখ। 
আরও শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন খুলনা জেলা কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি খান মনিরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আওরঙ্গজেবসহ সমিতির কার্যকরী কমিটির নেতৃবৃন্দ।

্রিন্ট

আরও সংবদ