খুলনা | শুক্রবার | ২৫ এপ্রিল ২০২৫ | ১২ বৈশাখ ১৪৩২

খুলনায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

পহেলা বৈশাখ বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য ও সর্বজনীন উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৫৩ এ.এম | ১৬ এপ্রিল ২০২৫


ভিন্ন আমেজে এবার উদযাপিত খুলনার বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে হলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ সাল। সোমবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েটসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি উদ্যাপন হয়। কর্মসূচির মধ্যে চিল বর্নাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পান্তা উৎসব। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রেরিত রিপোর্ট।
খুলনা জেলা প্রশাসন : আনন্দঘন পরিবেশে সোমবার খুলনায় বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদ্যাপিত হয়। খুলনা জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিলো বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, লোকজ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকালে রেলওয়ে স্টেশন প্রাঙ্গণ থেকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহিদ হাদিস পার্কে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন।   
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে খুলনা শহিদ হাদিস পার্কে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ফিরোজ সরকার বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য ও সর্বজনীন উৎসব। বাঙালির লোকসংস্কৃতির সাথে বাংলা নববর্ষ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোঃ হুসাইন শওকত, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি) দেবপ্রসাদ পাল, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলম, পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
নববর্ষের কর্মসূচি অনুযায়ী জেলা কারাগার, হাসপাতাল ও সরকারি শিশু পরিবার, এতিমখানাসমূহে ঐতিহ্যবাহী বাংলা খাবার পরিবেশন এবং শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া জেল কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রদর্শনী, কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নাটক প্রদর্শন করা হয়। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্ব-স্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে। পহেলা বৈশাখে শহিদ হাদিস পার্কে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের খুলনা কার্যালয়ের আয়োজনে দিনব্যাপী লোকজ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলাসমূহ অনুরূপ কর্মসূচি উদযাপন করে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় : উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। দিনব্যাপী নানা আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার বরণ করে নেয় বাংলা নতুন বছরকে। সকালে ‘এসো হে বৈশাখ, এসো.. এসো ...’ বর্ষ আবাহন সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে সূচনা হয় দিনব্যাপী বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতার। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম।  
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হারুনর রশীদ খান, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ নূরুন্নবী, বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন কমিটির সভাপতি এবং ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ নূর আলম, কমিটির সদস্য সচিব ও ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ নাজমুস সাদাত।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে চারুকলা স্কুল থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। মুখোশ, আলপনা, ঢাক-ঢোল, কাঠের তৈরি কারুকাজ ও নানা ঐতিহ্যবাহী অনুষঙ্গে সজ্জিত শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে ছড়িয়ে দেয় নববর্ষের রঙিন বার্তা।
দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী মেলা। শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বসানো হয় পিঠা-পুলি, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও পণ্যের স্টল। শিশুদের জন্য ছিল নাগরদোলা, ম্যাজিক শো ও অন্যান্য আনন্দ আয়োজন। মেলায় দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে গোটা প্রাঙ্গণ।
এছাড়াও বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় গান, কবিতা, নৃত্য ও নাটকের মাধ্যমে বাংলা সংস্কৃতির নান্দনিক রূপ তুলে ধরা হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয় এক আনন্দঘন উৎসবের আবহ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয় পুরো অনুষ্ঠানমালা।
নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি : আনন্দঘন পরিবেশে বাংলা বর্ষবরণ-১৪৩২ এর অনুষ্ঠানমালা বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০ টায় নগরীর শেখ পাড়াস্থ একাডেমিক ভবন-২ চত্বর থেকে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়ে সোনাডাঙ্গাস্থ প্রশাসনিক ভবন-১ অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডীন ও পহেলা বৈশাখ উদযাপন কমিটির আহবায়ক ড. মোঃ রউফ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হয়ে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য মোঃ মিজানুর রহমান।
আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সৈয়দ হাফিজুর রহমান, মোঃ আজিজুল হক, ট্রেজারার কানাই লাল সরকার, ডিরেক্টর লিয়াজো শেখ মাহরুফুর রহমান, ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির ডীন মোঃ ইনজামাম-উল-হোসেন, প্রক্টর শাকীল আহমদ, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানগণ, সহকারি প্রক্টরবৃন্দ, সিনিয়র সহকারী রেজিস্ট্রার ড. শাহিদা খানম, সহকারী রেজিস্ট্রার ও সহকারী জনসংযোগ পরিচালক মিনা অছিকুর রহমান দোলন, সহকারী রেজিস্ট্রার শেখ মাকছেদুর রহমান, বিভিন্ন মহলের সূধীজনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। 
পরে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে পান্তা ইলিশ খাওয়া, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বাউল সংগীত, স্থায়ী ক্যাম্পাসের মাঠে বাহারি রঙের ঘুড়ি উড়ানো উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খুলনা মহানগর বিএনপি’র সভাপতি অ্যাড. এস এম শাফিকুল আলম মনা। 
কয়রায় বিএনপি’র শোভাযাত্রা : বাঙ্গালীর উৎসব বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে এক বণার্ঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টায় উপজেলার বিভিন্ন সড়কে শোভাযাত্রাটি প্রদিক্ষণ শেষে দলীয় কার্যালয় এসে শেষ হয়। খুলনা জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক এড. মোমরেজুল ইসলামের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়  উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি’র সদস্য এম এ হাসান, আবু সাঈদ বিশ্বাস, বিএনপি নেতা সরদার মতিয়ার রহমান, কোহিনূর ইসলাম, আঃ সামাদ, এফ এম মনিরুজ্জামান, আঃ রহিম সানা, ইয়াকুব আলী, গাজী সিরাজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, আবুল বাশার ডাবলু, প্রভাষক মঞ্জুর মোর্শেদ, ডি এম হাফিজুল ইসলাম, এড. নজরুল ইসলাম, রওশন মোল­া, মুনছুর রহমান মফিজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জাহিদুর রহমান শোভন, যুবদল নেতা এহসানুর রহমান, আকবার হোসেন, আবুল কালাম আজাদ কাজল, আছাদুল ইসলাম, ইউনুছ আলী, মিজানুর রহমান লিটন, দেলোয়ার হোসেন, মাসুদুর রহমান, কৃষক দল নেতা এস এম গোলাম রসুল, আবু সাঈদ মালী, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ডাঃ নুর ইসলাম খোকন, নুরুল ইসলাম খোকা, ডিএম হেলাল উদ্দিন, প্রভাষক রবিউল ইসলাম, ওবায়দুল্যাহ, রিয়াছাদুজ্জামান বাবলু, ছাত্র নেতা আরিফ বিল­াহ সবুজ, মাহমুদ হাসান, ইমরান হোসেন, রানা, মিনার হোসেন,মাশরাফি সহ উপজেলা বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ ঐতিহ্যের বিভিন্ন জিনিসপত্র শোভাযাত্রায় প্রদর্শন করা হয়।   
মুহসিন মহিলা কলেজ : নববর্ষ  উপলক্ষে সকাল ৯টায় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বেলা ১১টায় কলেজ অডিটরিয়ামে আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল লতিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কেসিসির সাবেক কাউন্সিলর কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শেখ কামরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সাবেক ব্যাংকার সমাজসেবক মোঃ আব্দুল মান্নান শেখ, বিদ্যোৎসাহী সদস্য কবি ও সাংবাদিক শেখ আবু আসলাম বাবু, পর্ষদ সদস্য আড়ংঘাটা ইউপির চেয়ারম্যান এস এম ফরিদ আখতার এবং অভিভাবক সদস্য শেখ কামাল হোসেন। শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাধব কৃষ্ণ মন্ডলের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন ও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক প্রতিনিধি অধ্যাপক আয়েশা সিদ্দিকা, অধ্যাপক মোঃ জগলুল আলম, অধ্যাপক মোঃ মাহফুজুর রহমান, অধ্যাপক মোঃ জাকির হোসেন, অধ্যাপক শিখা রানী মন্ডল, অধ্যাপক ইব্রাহীম শেখ প্রমুখ। আলোচনা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।    
আসাস : আলোড়ন সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ আসাসের ১০৯৭তম সাহিত্যাসর ও ১৪৩২ সনের শুভ নববর্ষ অনুষ্ঠান পর পর দু’দিনব্যাপী এক চমকপ্রদ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ওয়াহিদুজ্জামান আল ওয়াহিদ। প্রধান অতিথি ছিলেন এস এম মনির হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মোঃ নুরুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক এম এম নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক দুলাল বেদনাথ, দিলরুবা ইয়াসমিন কলি, আবু জাফর সালেহ, শিক্ষক রতন কুমার মন্ডল, নাসিমা রহমান শিঊলী, মোঃ সেকেন্দার আলী, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, হাফিজুর রহমান তারেক, সাব্বির হাসান অনিক, বিদগ্ধ বেলাল, ড. জাকারিয়া জাকির, মীনা রবিউল, আরিফ বিল­াহ, জাহানারা আক্তারী, শিক্ষক শাহানা বেগম, ডাঃ মাহবুবুর রহমান, এম এম হাসান, গোলাম রসুল খোকন প্রমুখ।

্রিন্ট

আরও সংবদ