খুলনা | শনিবার | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

পেঁয়াজ আমদানির পাঁয়তারা সিন্ডিকেটে, এখনই রুখতে হবে

|
১২:০৪ এ.এম | ১৯ এপ্রিল ২০২৫

একদল ব্যক্তি বা কোম্পানি সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে পরস্পরের স্বার্থ সুরক্ষায় একত্রে কাজ করে সিন্ডিকেট তৈরি করে। ব্যবসায়ীদের অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে এ দেশের জনসাধারণ নিত্যপণ্য ক্রয়ে উচ্চমূল্যের শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন পণ্যের জন্য ব্যবসায়ীদের রয়েছে আলাদা সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেশনের ফলে নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে জনসাধারণ উচ্চমূল্যের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে পেঁয়াজ আমদানির পাঁয়তারা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমের মধ্যেই হঠাৎ করে দাম বেড়ে গেছে। মাত্র তিন-চার দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। আগামী দিনে দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ উঠেছে, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির পাঁয়তারা করছেন কিছু আমদানিকারক।
তাঁরাই সিন্ডিকেট করে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। অন্যদিকে পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে দাম বাড়ার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করছে সাধারণ ক্রেতারা। গত বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়তে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় হঠাৎ করেই পাইকারিতে দাম বেড়ে গেছে।
ঢাকায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আসে ফরিদপুর থেকে। ফরিদপুরে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই ঢাকার বাজারে তার প্রভাব পড়ছে। ক্রেতারা বলেন, ‘দাম বাড়ার পেছনে খুচরা বিক্রেতাদের কোনো হাত নেই। পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কিনি, সেই অনুযায়ী বিক্রি করি।’ আড়তদারদের ভাষ্য, এবার মুড়ি কাটা পেঁয়াজে কৃষকরা দাম না পেয়ে লোকসান গুনেছেন।
ফলে তাঁরা হালি পেঁয়াজ সব বাজারে না ছেড়ে মজুদের দিকে ঝুঁকছেন। এতে সরবরাহ কমে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে আড়ত, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে। এদিকে পেঁয়াজের উৎপাদন মৌসুমে ন্যায্য দাম পাননি কৃষকরা। এখন তাঁদের হাতে তেমন পেঁয়াজ নেই, মজুদদারদের হাতে চলে গেছে পেঁয়াজ। এই সুযোগে সিন্ডিকেট করে তাঁরা দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছেন বলে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। 
পেঁয়াজের আকস্মিক দাম বাড়ার বিষয়ে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বিষয়টি ব্যবসায়ীদের নেতিবাচক ব্যবসা চর্চার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার এবং এই খাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজির অংশ। আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসতে বিলম্ব হলেই এখানে দাম বেড়ে যেতো। এখন পেঁয়াজের আড়তদার, কমিশন এজেন্ট, দাদন ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কিনে মজুদ করে রাখছেন। সে কারণে দাম বেড়েছে। অন্যদিকে পেঁয়াজের বাজারে কোনো তদারকি হয় না। 
ভোক্তা অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসন এখানে কোনো তদারকি করে না।’ গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, ‘আমাদের ভোক্তা অধিকার বলি আর কম্পিটিশন কমিশন বলি, খুবই রিয়্যাক্টিভ। কিছু একটা হলো, তখন তারা যায় অভিযানে। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক এবং সার্বক্ষণিক নজরদারির একটা ব্যাপার আছে।’ আসলে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের কোনো সংস্থাই তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ