খুলনা | শনিবার | ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২

রূপসার কাজদিয়া গ্রামে শাঁখার চুড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ৭০ পরিবার

আল মাহমুদ প্রিন্স |
০১:২৪ এ.এম | ১৯ এপ্রিল ২০২৫


খুলনার রূপসার কাজদিয়া শাঁখারিপাড়া গ্রামে শাঁখার চুড়ি (পলা) তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে অন্তত ৭০টি পরিবার। যুগযুগ ধরে তারা পূর্ব পূরুষের এ পেশাকে একমাত্র পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে অর্থ্যাৎ, সনাতন ধর্ম যখন থেকে শুরু হয়েছে তখন থেকে হিন্দু স¤প্রদায়ের বিভিন্ন পরিবারের পুরুষ সদস্য এ পেশা বেছে নিয়েছেন। প্রাচীন যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মেও বিবাহিত মহিলারা শাঁখা-পলা ব্যবহার করেন স্বামীর মঙ্গল কামনায়। শাঁখা-পলা একজন মহিলার বৈবাহিক জীবনের চিহ্ন। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, শাঁখা-পলা ছাড়া বিয়ে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। 
সরেজমিনে জানা গেছে, রূপসার কাজদিয়া গ্রামের শাঁখারিপাড়ায় শাঁখার চুড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে যুগের পর যুগ। শাঁখা তৈরির পেশায় নিয়োজিত আছেন অন্তত সত্তরটি পরিবার। পূর্ব পূরুষের এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে তারা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কাজদিয়া শাঁখারি পাড়ার পুরুষেরা। শ্রীলঙ্কা থেকে শঙ্খ বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। জেলেরা সমুদ্র থেকে এ শঙ্ক আহরণ করে বিক্রি করেন। কাজদিয়া গ্রামের শাঁখারি পাড়া ছাড়া রাজশাহীর জামরগর, পাবনার হান্ডিজাল, যশোর, ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় এ শাঁখার পলা তৈরি করা হয়। 
কাজদিয়া গ্রামের শাঁখারি পাড়ায় তৈরি করা শাঁখা গ্রামে-গঞ্জে, শহরে বিক্রি করা হয়। চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসায়িরা বাড়ি বাড়ি এসে শাঁখার পলা ক্রয় করে।  রপ্তানিকৃত এ শিল্প রপ্তানি করে অর্থ উপার্জন করেন এ পেশার মানুষ। এ শাঁখার পলা সর্বোচ্চ এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকা এবং সর্বনি¤œ তিনশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। এদিকে যেসব কর্মচারী শাঁখা তৈরি করেন তাদের একজোড়া শাঁখা তৈরির মজুরি দেওয়া দশ টাকা থেকে পাঁচশ’ টাকা। 
কাজদিয়া গ্রামের শাঁখারি পাড়ায় গণেশ চন্দ্র নন্দী, শিব দত্ত, শংকর নন্দী, সাধন দাস, সুজিত দত্ত, বিপ্লব সেনসহ অন্তত সত্তর জন পুরুষ এ পেশার সাথে সরাসরি জড়িত। 
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের মতে, প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মহাভারতের সময়কাল থেকে শাঁখার ব্যবহার শুরু হয়। সেই সময়ে শঙ্খাসুর নামে এক অসুরের তান্ডবে ত্রিভুবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। স্বর্গের দেবতারা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শরণাপন্ন হন বিষ্ণুর। বিষ্ণুদেব তখন এই অসুরকে বধ করে দেবতাদের রক্ষা করেন। এর পর তার ধর্মপরায়ণ স্ত্রী তুলসী নারায়ণের কাছে স্বামীকে ফেরত পাওয়ার জন্য ধ্যান শুরু করেন। তুলসীর প্রার্থনায় নারায়ণ সারা দিলেও শঙ্খাসুরকে ফিরিয়ে দেওয়ার মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে পারেন না। তখন নারায়ণ শঙ্খাসুরের প্রতীক হিসাবে তারই হাঁড় দিয়ে এই শাঁখা তৈরি করেন এবং তুলসীকে দেন। সেই থেকেই বিবাহিত মহিলারা স্বামীর মঙ্গল কামনায় এটি ব্যবহার করা শুরু করেন।
কাজদিয়া গ্রামের শাঁখারি পাড়ার বাসিন্দা কারিগর গনেশ চন্দ্র নন্দী এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি অন্তত ৪৫ বছর ধরে এ পেশার সাথে জড়িত। তিনি বলেন, ঠাঁকুর দাদারা এ পেশায় জড়িত ছিলেন। তাই এ শিল্পকে ধরে রাখতে তিনি এ পেশায় জড়িত রয়েছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পেশায় জড়িত থাকবেন। একই গ্রামের মিঠুন নন্দী বলেন, হিন্দু মেয়েদের বিয়ের পরে যে শাঁখা পড়ে শুধুমাত্র তাই তৈরি করা হয়। তিনি বলেন, এ পেশা পূর্ব পূরুষের পেশা। তাই তিনি এ পেশাকে প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।  

্রিন্ট

আরও সংবদ