খুলনা | সোমবার | ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

স্মারকলিপি দেওয়ার দাবি, অস্বীকার জেলা প্রশাসকের : প্রশাসনের নীবর ভূমিকায় উদ্বেগ বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের

নগরীতে এক দিনে বিভিন্ন স্থানে আ’লীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেফতার ২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১০:৫৩ পি.এম | ২০ এপ্রিল ২০২৫


খুলনার বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। রোববার সকালে জিরো পয়েন্ট এলাকায় মিছিল করার পর দুপুরে সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার মজিদ সরণি, বয়রা এলাকার মহিলা কলেজ সড়ক ও দৌলতপুরে ঝটিকা মিছিল করা হয়। এরপর সেগুলো ফেসবুকেও পোস্ট করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
এর আগে আ’লীগের মিছিলের সূত্রপাত হয় শহরতলির জিরোপয়েন্ট এলাকা থেকে। ঝটিকা মিছিল করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সেখানে একটি মিছিল বের করে কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়। মিছিলের ব্যানারে শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ছবি ছিল। আয়োজক হিসেবে লেখা ছিল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ খুলনা জেলা শাখা’। পরে সেই মিছিলের একটি ভিডিও ক্লিপ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
এদিকে রোববার রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মিছিল করার অভিযোগে ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া এন্ড সিপি) মোহাঃ আহসান হাবীব। তিনি জানান, অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খুলনায় এটাই আওয়ামী লীগের প্রথম কোনো কর্মসূচি পালিত হলো। গতকাল সকালের ওই মিছিলের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই ভিডিও এবং ছবি থেকে দেখা যায়, একদল লোক ব্যানার নিয়ে জিরো পয়েন্ট এলাকায় বিক্ষোভ করছেন। ব্যানারে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি আছে। এ সময় ‘শেখ হাসিনা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘শেখ হাসিনার সরকার, বার বার দরকার’, ‘শেখ হাসিনা ফিরবে আবার বীরের বেশে’ প্রভৃতি শ্লোগান দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের খুলনা জেলা শাখার নেতা পরিচয়ধারী সাইফুল ইসলাম সাইফ এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা অসিত বরণ বিশ্বাস নামে আইডি থেকে ঝটিকা মিছিলের ভিডিওটি পোস্ট করা হয়।
তবে ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আমাদের নির্দেশনা ছিল মিছিলে পরিচিত কোনো মুখ থাকবে না। এ কারণে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের অপরিচিত নেতা-কর্মীদের দিয়ে মিছিল করানো হয়েছে।’
জিরো পয়েন্ট এলাকাটি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) হরিণটানা থানার মধ্যে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল বাশার বলেন, হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমেই ঝটিকা মিছিল করে পালিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সকালের দিকে হওয়ায় সে সময় রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা ছিল। পুলিশ মিছিলকারীদের আটক করতে তৎপর আছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, যারাই দেশে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করছে, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। নিষিদ্ধ, সন্ত্রাসী, ফ্যাসিস্ট সংগঠনের যারাই বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবে, এমনকি তাদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা করবে তাদের শক্ত হাতে দমন করা হবে।
এদিকে ঝটিকা মিছিলের ঘটনায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে নির্লিপ্ততার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অন্যদিকে প্রশাসনের নিরব ভূমিকার প্রতিবাদ জানিয়ে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খুলনা বিএনপি, মহানগর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
স্মারকলিপি : শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রতিবাদ এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যানারে ওই মিছিল করা হয়। এ ছাড়া সকালে মিছিলের পর জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়ার দাবি করেছেন দলটির নেতারা। তবে জেলা প্রশাসক স্মারকলিপি পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সকালে জিরো পয়েন্ট এলাকায় মিছিল শেষে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রহসনমূলক, ঘৃণ্যতম অসাংবিধানিক ও বেআইনি কার্যক্রমের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি কোনো স্মারকলিপি পাননি। তবে ফ্রন্ট ডেস্কে কেউ স্মারকলিপি দিয়ে গেছেন কি না, তিনি জানেন না। সূত্র : প্রথম আলো অনলাইন।
উদ্বেগ নিন্দা ও ক্ষোভ খুলনা বিএনপি’র : ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মাত্র আটমাসের মাথায় আওয়ামী লীগের সক্রিয় হওয়া এবং ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে রাজপথে প্রকাশ্যে ঝটিকা মিছিল করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ, নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে খুলনা বিএনপি।
রোববার বিএনপি মিডিয়া সেল প্রদত্ত বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, হঠাৎ করে নগরীর একাধিক জায়গায় আওয়ামী লীগের ব্যানারে ঝটিকা মিছিলের নেপথ্যে থেকে তাদের মদদ দিচ্ছে এবং কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা মাঠে নামছেন মোটা দাগে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে শেখ হাসিনা। তার পালিয়ে যাওয়ার মধ্যদিয়ে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের  স্বৈরশাসকের অবসান ঘটেছে। কিন্তু প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাজারো শহিদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ফের ফিরে আসার জানান দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা যে সকল আওয়ামী দোসররা সবুজ সংকেত দিয়ে মাঠে নামতে সহায়তা করেছেন তাদের চিহ্নিত করার এখনই সময়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বড় অপরাধীরা দেশ ছেড়ে পালালেও ঘাপটি মেরে থাকা দোসররা বিভিন্ন কায়দায় একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করছে। নানা রূপে বিভিন্ন মহলে মিশে দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে এবং মিছিলকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিদাতারা হলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনা, জেলার আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব আবু হোসেন বাবু প্রমূখ।
দ্রæত গ্রেফতারের দাবি ইসলামী আন্দোলনের : খুলনার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলকারিদের দ্রæত গ্রেফতারের দাবি ও প্রশাসনের নিরব ভূমিকার প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগরের নেতা-কর্মীরা। রোববার গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠায় দলটি।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, স¤প্রতি খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি দেশের ইতিহাসে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে মিছিল করেছে। ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগের হাতে প্রায় দুই হাজার নাগরিককে হত্যার রক্ত লেগে আছে ও হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনি হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে বিতাড়িত করার ৮ মাসের মধ্যে এই সন্ত্রাসী সংগঠনের দেশব্যাপী সিরিজ কর্মসূচি জুলাই-পরবর্তী বাংলাদেশের অস্তিত্বে বার বার আঘাত হানার অপচেষ্টা। ছাত্র-জনতা এই অপচেষ্টাকে এবার কঠোরভাবে প্রতিহত করবে। নেতৃবৃন্দ বলেন এটি শুধু স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা নয়, বরং গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নিয়োজিত প্রশাসনের দুর্বলতার প্রতিফলন।
বিবৃতিদানকারীরা হলেন মহানগর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুফতী আমানুল্লাহ, সেক্রেটারী মুফতি ইমরান হুসাইন, সহ-সভাপতি শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন, আবু তাহের, হাফেজ আব্দুল লতিফ, মাওঃ দ্বীন ইসলাম, মোঃ ইমরান হোসেন মিয়া, মাওঃ সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, মোঃ তরিকুল ইসলাম কাবির, মেহেদী হাসান  সৈকত, মোঃ হুমায়ুন কবির, মুফতী ইসহাক ফরীদি, গাজী ফেরদাউস সুমন, মোঃ মঈন উদ্দিন ভূঁইয়া, এড. কামাল হোসেন, মোল্লা রবিউল ইসলাম তুষার, কারী মোঃ জামাল উদ্দিন, মাওঃ নাসিম উদ্দিন, বীর মুক্তিযুদ্ধা জি এম কিবরিয়া, বন্দ সরোয়ার হোসেন, আব্দুস সালাম, মারুফ হোসেন, এইচ এম খালিদ সাইফুল্লাহ, মুফতী আমানুল্লাহ, এইচ এম আরিফুর রহমান, গাজী মিজানুর রহমান, মোঃ মঈন উদ্দিন, আমজাদ হোসেন, জাহিদুল ইসলাম টুটুল মোড়ল, মোঃ শহিদুল ইসলাম সজিব, মোঃ কবির হোসেন হাওলাদার, আবুল কাশেম, মোঃ বাদশাহ খান, মোঃ মিরাজ মহাজন প্রমুখ।

্রিন্ট

আরও সংবদ