খুলনা | শুক্রবার | ০২ মে ২০২৫ | ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

যে কৌশলে হচ্ছে আ’লীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেফতার ৪০

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:২৭ এ.এম | ২২ এপ্রিল ২০২৫


খুলনার তিনটি থানা এলাকায় আ’লীগ নতুন যে কৌশলে ঝটিকা মিছিল করেছে। গত রোববার মিছিল করার পর তা পতিত আওয়ামী সরকারের দোসর সাংবাদিকদের মাধ্যমে তা গণমাধ্যমে প্রেরণ এবং সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে। এদিকে ঝটিকা মিছিলের পর পুলিশ বাদী হয়ে ৩টি মামলা করেছে। এছাড়া প্রায় ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের তালিকায় খুলনা সিটি সিটি কর্পোরেশনের কর আদায় শাখার নিম্নমান সহকারী রবিউল ইসলাম রবিসহ ভিন্ন জেলার এক ইউপি মেম্বর রয়েছে। 
গত রোববার রাতে স্থানীয় এক আ’লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খুলনাতে আ’লীগের মিছিলের নেপথ্যে তদারকি করেন দু’জন তরুণ নেতা। যারা বিগত দিনে প্রভাবশালী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা ছিলেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রত্যেকটি মিছিলে অংশ নেওয়া কর্মীরা সকলেই অপরিচিত ছিল। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলা থেকে তাদের আনা হয়। ঘটনার পর রোববার রাতে খুলনা সদর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে একটি আবাসিক হোটেল থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করে। তার মধ্যে একজন বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর ও যুবলীগ নেতা। অন্য জেলার বাসিন্দা হওয়ায় খুলনার মানুষ যাতে করে তাদের পরিচয় নির্ণয় করতে না পারে সে জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া সারা রাত পেট্রোল ডিউটি সেরে পুলিশ সকালে বিশ্রামে যাওয়ায় সকাল ৭টায় আকস্মিক মিছিলের সিদ্ধান্ত নেয় পরিকল্পনা অনুযায়ী। 
সূত্র মতে, এখন এক জেলার মানুষ অন্য জেলায় নিয়ে ঝটিকা মিছিল করে আ’লীগ তাদের অবস্থান জানানোর চেষ্টা করছে। আবার নির্দেশনা ছিল প্রত্যেকে মাস্ক পরে মিছিল করবে। যে কারণে মিছিলে অনেককেই দেখা গেছে মাস্ক পরিহিত।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় নগরীর শান্তিধাম মোড়, হোটেল বাগেরহাট থেকে ১৬নং খাউলিয়া ইউনিয়ন এর ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বর মিলন মীরকে গ্রেফতার করে সদর থানা পুলিশ।
গোপন সূত্রের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ থানার ১৬নং খাউলিয়া ইউনিয়নের মেম্বর ও ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগ সহ-সভাপতি মিলন মীর (৪০) রোববার সকালে খুলনাস্থ জিরোপয়েন্ট আ’লীগের মিছিলে অংশগ্রহণ করে। সেখানে থেকে তাকে স্থানীয় লোকজন চিহ্নিত এবং তার স্থান নির্ধারণ করে। সে কয়েকদিন যাবত শান্তিধাম মোড় বাগেরহাট আবাসিক হোটেলে এসে অবস্থান নেয় এবং বাগেরহাট আবাসিক হোটেল ম্যানেজার মহারাজ হাওলাদারকেও গ্রেফতার করে সদর থানা পুলিশ। মহারাজ দীর্ঘদিন যাবত এই হোটেল ম্যানেজার পদে চাকুরি ছাড়াও সে ফ্যাসিস্ট আ’লীগের নেতা-কর্মীদের মোটা অংকের টাকা নিয়ে আশ্রয় দিয়ে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিরোপয়েন্ট এলাকা মিছিলের ঘটনায় ডুমুরিয়া উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আলমগীর হোসেনকে গ্রেফতার করে হরিণটানা থানা পুলিশ। অন্যদিকে ফুলতলা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুল আলমকে গ্রেফতার করেছে ফুলতলা থানা পুলিশ। শিরোমনিতে মিছিলের প্রস্তুতিকালে ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি কাজী জাকারিয়া রিপনকে আটক করা হয়।
এছাড়া সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৭নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি মোঃ নুর ইসলাম, ১৭নং ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি মোঃ আসিফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, ১৬নং ওয়ার্ড গাবতলা ইউনিট আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আবুজার অনিক, যুবলীগের সদস্য মোঃ রকিবুল ইসলাম, ১৯নং ওয়ার্ড আ’লীগ নেতা মোহাম্মদ মেহেদী হাসান এবং যুবলীগ সদস্য রুহুল আমিনকে আটক করেছে।
সোনাডাঙ্গা থানার এস আই আব্দুল হাই বলেন, রোববার বিকেল ঝটিকা মিছিলের চেষ্টাকালে বিকেলে নগরীর বয়রা মহিলা কলেজের সামনে থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী মোঃ ওয়ালিদ হাসান ইমনকে আটক করে পুলিশ। পরে সন্ধ্যার পর সোনাডাঙ্গা মডেল থানা এলাকার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে আ’লীগের সহযোগী সংগঠনের আরও কয়েকজনকে আটক করা হয়।
খুলনা সদর থানার এস আই নান্নু মন্ডল বলেন, থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আঃ রশিদের হাওলাদারের ছেলে মহারাজ হাওলাদার (৫৭), বাগরেহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার মোজাম্মেল মীরের ছেলে ইউপি মেম্বর মোঃ মিলন মীর (৪২) এবং টুটপাড়া মেইন রোড এলাকার মোহাম্মদ হানেফের ছেলে মোঃ ফরিদ আহম্মেদ (৬৩)-কে আটক করা হয়েছে।
হরিণটানা থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ খায়রুল বাসার জানান, সকালে হরিণটানা থানা এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের হয়। এলাকার সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিকেলে ডুমুরিয়া আওয়ামী লীগ নেতা কাজি আলমগীরকে জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। এই থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ৭৩ জনকে নাম উলে­খ ও অজ্ঞাত আরও ৩০/৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে সোমবার বিকেল পর্যন্ত হরিণটানা থানায় ২২ জনের গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে।
খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, থানা এলাকায় আ’লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মিছিল বের করার চেষ্টা করেন। এ সময় ৭ জনকে আটক করা হয়েছে । 
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া এ্যান্ড সিপি) মোহাঃ আহসান হাবীব পিপিএম বলেছেন  আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হঠাৎ মিছিল করে নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং নগরীতে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সেজন্য খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে। নগরীতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে ঝটিকা মিছিলের পর পরই বিগত দিনে আওয়ামী সরকারের দোসর হিসিবে পরিচিত কিছু গণমাধ্যম কর্মী ঝটিকা মিছিলের ছবি শেয়ার করে। অনেকে আবার কমেন্টও করেন। তারা আ’লীগ নেতাদের কাছ থেকে মিছিলের ছবি ও ফুটেজ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছে। একই সঙ্গে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পলাতক নেতা-কর্মীদের দ্বারা গঠিত সাইবার টিম এটিকে ব্যাপক ভাবে প্রচার করছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ