খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৪ এপ্রিল ২০২৫ | ১১ বৈশাখ ১৪৩২

সুন্দরবনে দস্যু দমন ও মোংলা বন্দরসহ জেলেদের নিরাপত্তায় কাজ করছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড

মোংলা প্রতিনিধি |
১২:৩১ এ.এম | ২৪ এপ্রিল ২০২৫


মোংলা বন্দরসহ দেশের উপকূলীয় ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলে নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ, মৎস্যসম্পদ রক্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। বিশেষ করে সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণ, জল ও বনদস্যু দমন, জেলেদের নিরাপত্তা প্রদান এবং নৌপথে অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে কোস্ট গার্ড জনগণের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে কোস্ট গার্ড সদস্যরা। কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন মোংলা সদর দপ্তরের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম মেহেদী হাসান গত ৬ মাসের অপারেশন কার্যক্রমের সফলতা তুলে ধরেন। 
বুধবার বিকেলে কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনেসর মিডিয়া কর্মকর্তা সিয়াম উল হক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী থেকে এ পর্যন্ত কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশ সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। যার মধ্যে উলে­খযোগ্য, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ-ভারত সমদ্রসীমায় ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বর্ডার (আই এম বি এল) অতিক্রমকারী ৯৫ জন ভারতীয় জেলেকে ৬টি বোটসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করলে তাদের আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে পুনরায় ভারতে কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া পথ ভুলে দেশীয় সিমানা অতিক্রম করে ভারতে ঢুকে পড়লে ৯০ জন বাংলাদেশি জেলেকে ২টি বোটসহ আইনী লড়াই করে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। সুন্দরান তীরবর্তী এলাকায় সন্ত্রাস দমনে অপারেশন পরিচালনা করে ৯০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৩৯০ রাউন্ড গুলি, ১০টির অধিক বোমা ও ককটেলসহ ৮৫ জন সন্ত্রাসী ও ডাকাত ও দস্যুকে আটক করা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে ৫ হাজার পিসের অধিক ইয়াবা, ২৪ কেজি গাঁজা, ২০০টির বেশি বিদেশি মদ, হুইস্কি ও বিয়ার জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি চোরাচালান রোধে ৮১ হাজার ভারতীয় বিড়ি, ৬৩৫ পিস সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ, ৬০০ কেজি হরিণের মাংস, ৮টি হরিণের চামড়া ও ২০০টির বেশি ফাঁদসহ ২০ জন হরিণ শিকারিকেও আটক করে পুলিশের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ১ হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের অবৈধ নেট জাল, ৩০০ কোটি টাকার রেণুপোনা, ২,৫০০ কেজি বিষাক্ত চিংড়ি এবং ১০ হাজার কেজি জাটকা, ১২০ টন চোরাইকৃত লোহার স্ক্র্যাপ, ৭ হাজার লিটার ডিজেল ও হাইড্রোলিক অয়েল এবং ১,২০০ লিটার অবৈধ পেইন্ট এবং সুন্দরবন থেকে জল ও বনদস্যুদের হাতে মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত ৩৫ জন জেলে এবং সমুদ্রে দুর্ঘটনায় পতিত বোট থেকে ১৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করে তাদের পরিবারের হস্তান্তর করা হয়েছে। 
উপকূলীয় অঞ্চলে দুই হাজারের বেশি দুস্থ, অসহায় ও শিশুদের চিকিৎসা সেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ, সুন্দরবনে ভ্রমনে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং দুর্যোগকালীন সময়ে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে গত রমজানে মোংলা, রূপসা, নোয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাসমাণ গুদামে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে নিয়ম বহির্ভূত মজুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মোংলা বন্দরসহ সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, বন বিভাগ, মৎস্য অধিদপ্তর এবং শিপিংসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে আসছে কোস্ট গার্ড। কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন শুধু উপকূলীয় নিরাপত্তা নয়, বরং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের জান-মাল রক্ষা, বন্দর নিরাপত্তা, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে এবং ভবিষ্যতেও এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান কোস্ট গার্ডের জোনাল কর্মকর্তা।

্রিন্ট

আরও সংবদ