খুলনা | শনিবার | ২৬ এপ্রিল ২০২৫ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

দুই উপদেষ্টার পিএস, এপিএস : কেবল অব্যাহতি দিলেই দায়িত্ব শেষ হয় না

|
১২:০৮ এ.এম | ২৬ এপ্রিল ২০২৫


অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের সাড়ে আট মাসের মাথায় এসে দু’জন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সচিবের অপসারণের ঘটনা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এই দুই কর্মকর্তা হলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেন ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাম্মদ তুহিন ফারাবী।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলা হয়। কয়েক দিন ধরে বিষয়টি নানা মহলে আলোচিত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে সোমবারই (২১ এপ্রিল ২০২৫) জানানো হলো।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ১৪ আগস্ট যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তখন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, আসিফ মাহমুদ যত দিন এ পদ অলংকৃত করবেন অথবা এপিএস পদে বহাল রাখার অভিপ্রায় পোষণ করবেন, তত দিন এ নিয়োগ আদেশ কার্যকর থাকবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মুহাম্মদ তুহিন ফারাবীকেও উপদেষ্টার দপ্তর থেকে তাঁকে অফিসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২ অক্টোবর তুহিন ফারাবীকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁর নিয়োগের অফিস আদেশে বলা হয়েছিল, তুহিন ফারাবীর এ নিয়োগ হবে অস্থায়ী। উপদেষ্টা যত দিন এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন অথবা যত দিন তাঁকে এ পদে রাখার ইচ্ছা পোষণ করবেন, তত দিন তিনি এ পদে বহাল থাকবেন। তুহিন ফারাবী কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মেডিকেল দলের সদস্য।
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেন ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সাবেক পিএস তুহিন ফারাবীর বিরুদ্ধে প্রকল্প অনুমোদন ও মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নে অন্যায্য আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও আছে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব অপসারিত হওয়ার পরও তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সোমবার দিনের বেলায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রজ্ঞাপন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে থাকলেও রাতে সেটি প্রত্যাহার করা হয়। তাঁর দাবি, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। বিলম্বে হলেও অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তাকে অপসারণ করে তাঁদের অপকর্মের দায় থেকে সরকার নিজেকে মুক্ত করেছে। কিন্তু জনগণের জানার অধিকার আছে এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী কী গুরুতর অভিযোগ ছিল। সরকারকে মনে রাখতে হবে, জনগণের করের অর্থেই তাঁরা বেতন-ভাতা নিতেন। দুই সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রমাণ সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এখানে বলা প্রয়োজন যে কেবল উলি­খিত দুই সাবেক একান্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, তা নয়। একটি দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে পাঠ্যবই ছাপা সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে। অব্যাহতিপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তার সুবিধাভোগীদের বিষয়েও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোঃ নিজাম উদ্দিনকেও সরিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয় এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। 
আমরা মনে করি, কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁকে প্রত্যাহার করে নেওয়া, সরিয়ে দেওয়া বা পদত্যাগে বাধ্য করা প্রাথমিক একটি কাজ। এর পরের এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হচ্ছে তদন্তের মাধ্যমে তা যাচাই করা এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি নিশ্চিত করা। আমরা আশা করি, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বাকি কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ