খুলনা | রবিবার | ২৭ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

নিজের জমি না থাকলেও ৫ আগস্টের পর প্রায় ৩শ’ একর চিংড়ি ঘেরের মালিক

মোংলার বিএনপি নেতা হানিফ হাওলাদার এখন অসহায় মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক

মোংলা প্রতিনিধি |
০১:৫৬ এ.এম | ২৭ এপ্রিল ২০২৫


মোংলায় হিন্দু পরিবারের জমিসহ বেশ কয়েকটি পরিবারের চিংড়ি ঘের, বাড়ি ঘর দখল ও অসহায় মানুষের উপর নির্মম শারীরিক নির্যাতনের বহু অভিযোগ সুন্দরবন ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বিএনপি’র নেতা হানিফ হাওলাদার, তার ছেলে ও ভাইদের বিরুদ্ধে। তার অত্যাচার নির্যাতন আর হুমকিতে ভুক্তভোগীরা ভয়ে এখন অনেকেই বাড়ি ছাড়া। এ নেতার ক্ষমতার দাপট আর দলবলের প্রভাবের কাছে অসহায় খোঁদ ইউনিয়ন ও উপজেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১০/১২টি অভিযোগ দায়ের হলেও সহযোগিতা সুফল মেলেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। তবে স¤প্রতি এলাকায় নতুন করে চিংড়ি ঘের দখল ও মাছ লুট করতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে বিএনপি’র এ নেতা। 
ভুক্তভোগীদের দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পলাতক স্বৈরাচার সরকারের সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম হোসেনের হাতে শপথ করে আ’লীগে যোগ দেন হানিফ হাওলাদার। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ইউনিয়ন ও উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। সে সময়ও এলাকার অসহায় লোকজনের উপর হামলা-মামলা করে বীরদর্পে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলেছিলেন তিনি। গত ৫ আগস্টের পর দেশে আ’লীগ সরকারের পতন হলে ভোল পাল্টে হানিফ হাওলাদার বিএনপি হয়ে যায়। কৌশলে বিএনপি নেতৃবৃন্দদের ম্যানেজ করে উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতির পদ দখল করেন তিনি। স্থানীয় মারুফ শেখ, ছালাম শেখ, হাছান শেখ, গৌতম মিস্ত্রি ও সবুজ শেখ ও ছেলেসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে একটি বাহিনী তৈরি করেন। এরপর থেকেই প্রকাশ হয় তার আসল রুপ। হঠাৎ করে তার দলবল নিয়ে এলাকায় ত্রাশ সৃষ্টি করে অসহায় ও নিরীহ মানুষের উপর জুলুম-অত্যাচার শুরু করে। দখল করে এলাকার মানুষের একের পর এক চিংড়ি ঘের, বাড়ি ঘর, লুট করে ঘের ও পুকুরের মাছ। হিন্দু স¤প্রদায়সহ অসহায় মানুষের উপর চালায় হামলা-মারধর, আর অত্যাচার-নির্যাতন। 
যার মধ্যে সুন্দরবন ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের জয়দেব কবিরাজ, পুলক মন্ডল, মনজিৎ মন্ডল, আলি মুর্তোজা, সতিশ মন্ডল, ধনপতি কির্তুনিয়া ও ফিগার কির্তুনিয়ার, আলী আকুব্বার হাওলাদার, খোকন শেখ, খোকা, সুন্দরবন ২নং ওয়ার্ডের বাঁশতলা গ্রামের জালাল শেখসহ বেশ কয়েকজনের প্রায় ৩শ’ একরেরও বেশী মাছের ঘের ক্ষমতা বলে দখল করে বাগদা-গলদাসহ বিভিন্ন প্রকারের মাছ লুট করে বিক্রি করছে সে। এছাড়া একই এলাকায় মৃত আবু হানিফ শেখের বসত বাড়ি তার স্ত্রী ও ছেলে রনি শেখসহ পরিবারের সকলকে মারধর করে বের করে দিয়ে জোর পূর্বক দখল করে এ নেতা। বর্তমানে তারা বিএনপি নেতা হানিফ হাওলাদারের ভয়ে বাড়ি ঘর ছেড়ে সপরিবারে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে। 
মজার বিষয় হলো, আ’লীগের সময় সুন্দরবন ইউনিয়নের দ্বিগরাজ বাজারে শান্তি মহলদারের একটি ঘর জোর পূর্বক দখল করে নেয় বিএনপি নেতা হানিফ। সেখানে আ’লীগের অফিস করে তৎকালীন খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আঃ খালেক, এমপি হাবিবুন নাহার, শেখ হাসিনা আর শেখ মুজিবের ছবি টানিয়ে শালিস বিচারও করতো হানিফ হাওলাদার। ৫ আগস্টের পর আগের ছবিগুলো ফেলে দিয়ে ঠিক একই স্থানে বিএনপি’র নিজস্ব অফিস তৈরী করে এখনও শালিস-বিচার করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ক্ষমতার দাপটে সে কাউকেই পরোয়া করছেন না। এ নিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাধতে শুরু করেছে। 
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত হানিফ হাওলাদার বলেন, আমি আগেও বিএনপি ছিলাম, আ’লীগের সময় অনেক হামলা-মামরার শিকার হয়েছি। আর ৫ আগস্টের পর প্রতিটি ঘেরের মালিককে জমির হারির টাকা দিয়ে মাছ চাষ করছি। এলাকার কিছু সন্ত্রাসী অহেতুক আমার উপর হামলা করেছে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। 
সুন্দরবন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ কবির উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে আমি এলাকায় থাকিনা। তবে হানিফ হাওলাদার বেশ আগে ইব্রাহিম হোসেনের হাতে শপথ করে আ’লীগে যোগ দিয়েছিল। সে সময় থেকেই বিভিন্ন কর্মকান্ডে আমাদের সাথেই ছিল, এর বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। 
৫নং ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি আবুল কালাম বলেন, আগে আ’লীগ থাকলেও বর্তমান ৫নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি হানিফ হাওলাদারের বিরুদ্ধে মোংলা থানাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় ১০/১২টি অভিযোগ দেয়া আছে কিন্তু প্রশাসনকেও সে পরোয়া করেনা। সে এলাকায় এখন মূর্তিমান আতঙ্ক। তার কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় হানিফের সহযোগী বজলু শেখের ছেলে সন্ত্রাসী বাদশা শেখ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মারার জন্য আমার বাসার সামনে মহড়া দিচ্ছে, যা থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। 
অভিযোগকারী দেবদ্যুতি কীর্তুনিয়া বলেন, হানিফের লোকজন ক্ষমতা প্রয়োগ করে জোর পূর্বক আমাদের চিংড়ি ঘের দখল করে নিয়েছে। পরিবারের নারী-পুরুষদের ওপর নানা ভাবে শারীরিক লাঞ্ছনা করা, হুমকি-ধামকী ও অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে আসছেন। তাদের অত্যাচারে আমাদের এখন বসবাস করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনী। 
সুন্দরবন ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি খানজাহান সরদার বলেন, এলাকার চিংড়ি ঘের দখলের ব্যাপারে বহু অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে কিন্তু আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী হানিফ হাওলাদারকে বার বার সতর্ক করা হলেও আমাদের কথা তিনি শুনছেন না। তার কর্মকান্ড উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দদেরকে জানানো হয়েছে, দলীয় ভাবে ব্যবস্থা নেয়ার অপেক্ষায় আছি। 
মোংলা থানার ওসি মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, সুন্দরবন ইউনিয়নে হানিফ হাওলাদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ঘটনার ব্যাপারে বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু ঘটনা তদন্তে থানার অফিসারদের পাঠানো হলেও তাদের সাথে অসৌজন্য মূলক আচারণ করেছে সে। এছাড়া হানিফ স¤প্রতি আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। বিষয়টি সহকারী পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়া তাকে মারধর করার বিষয়েও তদন্তও চলছে। 
 

্রিন্ট

আরও সংবদ