খুলনা | মঙ্গলবার | ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

খুলনাসহ ১১ জেলায় বজ্রপাতে ঝরলো ১৯ প্রাণ

খবর ডেস্ক |
০১:২৩ এ.এম | ২৯ এপ্রিল ২০২৫


দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে স্কুলছাত্র, কৃষক-কৃষাণীসহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার ও সোমবার এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে কুমিল­ায় পাঁচজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, নেত্রকোনায় দুই, খুলনার রূপসা ও ডুমুরিয়া, যশোরের শার্শা, মৌলভীবাজার, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মাদারীপুরে একজন করে মারা গেছেন। আমাদের প্রতিনিধিেেদর পাঠানো খবর ও বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে-
রূপসা (খুলনা) : জেলার রূপসা উপজেলার আইচগাতি ইউনিয়নের সরকারি  বঙ্গবন্ধু কলেজের সন্নিকটে বজ্রপাতের সময়  গাছ থেকে পড়ে  এক শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে। 
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে জাবুসা গ্রামের সাইফুল ইসলামের পুত্র আরিফুল ইসলাম (২৯) সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সন্নিকটে আসন্ন ওয়াজ মাহফিল উপলক্ষে আয়োজিত প্যান্ডেল তৈরি করার জন্য একটি গাছে উঠে মাইক লাগাতে  যায় ।  এ সময় আকস্মিক বজ্রপাত হলে উক্ত যুবক গাছ থেকে পড়ে যায় এবং মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে।  স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে  কর্তব্যরত  চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নিহতের পরিবারের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
অন্যদিকে ডুমুরিয়ার পাচুড়িয়া গ্রামের আব্বাস সরদারের পুত্র মোহিম সরদার (৪৬) বজ্রপাতে নিহত হয়েছে। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খরসঙ্গ গ্রামে তার ভায়রার সাথে পার্শ্ববর্তী  সিঙ্গিয়া বিলে ধান তুলতে যায় এ সময় বৃষ্টি শুরু হওয়ার এক পর্যায় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
বেনাপোল ও শার্শা : যশোরের শার্শা উপজেলার বেড়ি নারায়নপুর গ্রামে বজ্রপাতে আমির হোসেন (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি উক্ত গ্রামের স্কুল পাড়ার কোরমান আলীর ছেলে। সোমবার দুপুরে উপজেলার নারায়নপুর গ্রামে বাড়ির পাশে ধান গাদা দেওয়ার সময় বজ্রপাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 
স্থানীয়রা জানান, দুপুরে আমির হোসেন নারায়নপুর স্কুল সামনে মাঠে ধান গাদা দিচ্ছিলো। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাতে আমির হোসেন ঘটনাস্থলে নিহত হন। ঘটনার পর শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডাঃ কাজী নাজিব হাসান বিকেলে নিহত কৃষকের বাড়িতে যাওয়া যান। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই কৃষক আকাশে মেঘ দেখে কাটা ধান গাদা দিচ্ছিলেন। আকস্মিক বৃষ্টিতে বজ্রপাতের আঘাতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বজ্রপাতের সময় সকলকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করার জন্য পরামর্শ দেন ওই কর্মকর্তা।
কুমিল­া : কুমিল­ার বরুড়া ও মুরাদনগরে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে বরুড়ায় দুই স্কুলছাত্র এবং মুরাদনগরে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়। সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা গ্রামের মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং বিল­াল হোসেন ছেলে মোহাম্মদ জিহাদ (১৪) দুপুরে হালকা বৃষ্টির মাঝে মাঠে ঘুড়ি উড়াতে ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে দুই ছাত্র মারাত্মক ভাবে আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
অপর ঘটনায় মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানা এলাকায় বজ্রপাতে দুই কৃষক মারা গেছেন। স্থানীয়রা বলেন, পূর্বধইর পূর্ব ইউনিয়নের কোরবানপুর পশ্চিম পাড়ার মৃত বীর চরন দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৫৫) ও উপজেলার আন্দিকোট ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভূঁইয়া (৩২) মাঠে কাজ করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় আহত হন আরও ২ ব্যক্তি।
বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। পরিবারের কোনও অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া একটি শিশু আহত হয়েছে।
বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, কোরবানপুর পূর্বপাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে দুইজন কৃষক বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দেবিদ্বারের সাহারপাড়ায় বাবার সঙ্গে কৃষি জমি থেকে ধান আনতে গিয়ে মীম আক্তার (১০) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। মীম সাহারপাড়া গ্রামের ইমন মিয়ার মেয়ে। সে সূর্যপুর কোটকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।  
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সে বাবা ও নানার সঙ্গে জমি থেকে কাটা বোরো ধান আনতে যায়। এ সময় বৃষ্টি শুরু হয়। একপর্যায়ে পাশেই বজ্রপাত হলে বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয়ে মারা যায় সে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন দেবিদ্বার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খাঁন।
কিশোরগঞ্জ : জেলার হাওরের মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।  সোমবার সকাল ও দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।  
জেলার অষ্টগ্রামে খয়েরপুর আব্দুল­াহপুর ইউনিয়নের হাওরে ধান কাটার সময় সকাল পৌনে ১০টার দিকে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন ইন্দ্রজিৎ দাস (৩০) ও স্বাধীন মিয়া (১৫)। ইন্দ্রজিৎ উপজেলার কলমা ইউনিয়নের হালালপুর গ্রামের মৃত যতিন্দ্র দাসের ছেলে। স্বাধীনের বাবার নাম ইদ্রিস মিয়া; বাড়ি খয়েরপুর গ্রামে। এতে আহত হয়েছেন একজন। এছাড়াও একই গ্রামের শ্রমিক সহোদর দাস (৫০) বজ্রপাতে আহত হয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। অষ্টগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রায় একই সময়ে মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে বজ্রপাতে ফুলেছা বেগম (৬৫) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। তিনি ওই এলাকার মৃত আশ্রাব আলীর স্ত্রী।
মিঠামইন থানার এসআই অর্পণ বিশ্বাস বলেন, সোমবার সকালে বাড়ির পাশে ধানের খড় শুকাতে দিচ্ছিলেন ফুলেছা বেগম। এ সময় বজ্রপাত হলে নিহত হন তিনি।
নেত্রকোণা : নেত্রকোনায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে মাদ্রাসা শিক্ষক ও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার মধ্য রাতে জেলার কলমাকান্দার গোবিন্দপুর গ্রামে ও সোমবার সকালে মদন উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।   
জেলার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধনুন্দ গ্রামে নিজ বাড়িতে রোববার রাত ১০টার দিকে বজ্রপাতে আহত হন দিদারুল ইসলাম (২৮)। পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি পাশের খারনৈ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর এলাকায় একটি ইফতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাত। 
অন্যদিকে সোমবার সকাল সাতটার দিকে মদন উপজেলার তিয়োশ্রী গ্রামে মোঃ আরাফাত (১০) বাড়ি থেকে বের হয়ে মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। হঠাৎ করে একটি বজ্রপাতে তার শরীর ঝলসে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আরাফাত ওই গ্রামের সালাম মিয়ার ছেলে। সে তিয়োশ্রী মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো।
সুনামগঞ্জ : জেলার শাল­া উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে সোমবার সকালে বজ্রপাতে রিমন তালুকদার নামের এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। রিমন আটগাঁও গ্রামের বাসিন্দা এবং শাল­া ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন শাল­া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
হবিগঞ্জ : জেলার বানিয়াচং উপজেলার হাওরে বজ্রপাতে দুর্বাসা দাস (৩৫) নামে এক ধান কাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো ৩ জন। সোমবার সকালে এই ঘটনা ঘটে। তাদের উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বানিয়াচং থানার (ওসি) গোলাম মোস্তফা।
চাঁদপুর : জেলার কচুয়ায় বজ্রপাতের বিকট শব্দে বিশাখা রানী (৩৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টায় উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের নাহারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিশাখা ওই এলাকার কৃষক হরিপদ সরকারের স্ত্রী। তার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল ইসলাম। 
মৌলভীবাজার : জেলার বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামে এক চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মাখন ওই ইউনিয়নের অহিদাবাদ চা বাগানের মৃত শংকুরা রবি দাসের ছেলে। উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বজ্রপাতে চা শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ।
শরীয়তপুর : জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে সেফালী বেগম (৩৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের বেপারীকান্দি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সেফালী বেগম ওই এলাকার সোহরাব হোসেন বেপারীর স্ত্রী। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জেলার বাঞ্ছারামপুরে জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে মানিক মিয়া (৬৫) নামে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। তার সঙ্গে থাকা হানিফ মিয়া (৬০) গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত হানিফ মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সোমবার দুপুরে উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চর-মরিচাকান্দি বিলপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোর্শেদুল আলম চৌধুরী।

্রিন্ট

আরও সংবদ