খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২২ মে ২০২৫ | ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চালুর দাবি উন্নয়ন নেতাদের

গণপরিবহন নেই শহরে জিম্মি সাধারণ মানুষ

এন আই রকি |
১২:৩৯ এ.এম | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

আশ্বাস থাকা সত্তে¡ও বিভিন্ন পরিবহন সংগঠনের রশি টানাটানিতে চালু হতে পারেনি নগর পরিবহন। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ ছাড়াও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা নানা ভোগান্তির সম্মুখিন হচ্ছেন প্রতিদিন। নগরীতে গণপরিবহন না থাকায় জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) মোট সড়ক ৬৪০ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। প্রায় ১৬ লাখ মানুষের বসবাস। প্রতিদিন নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত মানুষ ছুটছে প্রয়োজনের তাগিদে। স্বাধীনতার পর খুলনার ফুলতলা থেকে রূপসা পর্যন্ত প্রায় ৫৫টি গণপরিবহন (নগর পরিবহন বাস) সচল ছিল, কর্মরত ছিল প্রায় ৫শ’ কর্মী। নগরবাসীর সুবিধার কথা চিন্তা করে প্রতি ঘন্টায় ৪/৫টা বাস নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেত। খুবই কম টাকা নগরবাসী গণপরিবহনের সুবিধা নিতো। মাহেন্দ্রা ও সিএনজি’র কারনে নগরীতে গণপরিবহন চালানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতি।
এদিকে ২০১৬ সালে খুলনার জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে ৫টি বিআরটিসি’র দ্বিতলা বাস চলাচল শুরু হয়েছিল। কিন্তু বেশিদিন সেগুলো চলেনি। ২০১৯ সালে খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির উদ্যোগে ৪টি গণপরিবহন চালু হয়। কিন্তু মাহেন্দ্রা ও সিএনজির সাথে সম্পৃক্ত থাকা প্রভাবশালীদের কাছে হার মেনে করোনার আগেই সেগুলো ফের বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে খুলনার ফুলতলা থেকে রূপসা ঘাট পর্যন্ত মাহেন্দ্রা ও সিএনজির ভাড়া জনপ্রতি ৬০/৭০ টাকা। যা গণপরিবহনের ছিল ২০/২৫ টাকা। এসব ভোগান্তি ও ভাড়ার বৈষম্যেও স্বীকার হচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারসহ শিক্ষার্থীরা। কেসিসি’র মেয়রের নির্বাচনী ইশতেহারে নগরীতে গণপরিবহনের বিষয়ে ব্যবস্থার নেওয়ার কথা উলে­খ থাকলেও এখনিই এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে জানান তিনি। 
সরকারি বিএল কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াদ জানান, ফুলতলা থেকে দৌলতপুরে ৩০/৪০ টাকা মাহেন্দ্রা ও সিএনজি ভাড়া। গণপরিহনে ১০ টাকায় আসা যেত। নগরীতে গণপরিবহন না থাকায় জিম্মি হয়ে পড়েছি। মেসার্স রাফিদ ট্রেডার্সের কর্মকর্তা আকছেদ আলী জানান, মাহেন্দ্রা ও সিএনজির ভাড়ার যে ঊর্ধ্বগতি তাতে করে সাধারণ মানুষের খুবই ভোগান্তি হয়। বিশেষ করে বৃষ্টি এবং একটু রাত বেশি হলে তাদের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। গণপরিবহন চালু থাকলে এসব সমস্যা থেকে আমরা মুক্ত হতে পারতাম।
খুলনা মোটর বাস মালিক সমিতির দায়িত্বরত সভাপতি শিবলি বিশ^াস জানান, মাহেন্দ্রা ও সিএনজি’র কারনে নগরীতে গণপরিবহন চালানো সম্ভব নয়। এর পিছনে অনেক রাজনৈতিক বিষয়ও আছে যা মিডিয়ায় বলা সম্ভব নয়। খুলনার সংসদ সদস্যসহ কেসিসি’র মেয়র নির্বাচনের সময় আশ^াস দিয়েছিলেন নগরীতে গণপরিবহন চলাচল চালু করবেন। কিন্তু সেটা আদৌ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আমরা কয়েকজন মালিক মিলে সর্বশেষ ২০১৯ সালে ৪টা গণপরিবহন যা আরপি (রূপসা পরিবহন) নামে নগরীতে নামিয়ে ছিলাম। কিন্তু নানা কারনে সেটা চালাতে পারিনি। তাছাড়া করোনার কারনেও অনেক ক্ষতি হয়েছে বাস মালিকদের। মেয়র ও সংসদ সদস্যরা যদি সহযোগিতা করেন তবে নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে অবশ্যই সমিতির পরিচালনায় ফের গণপরিবহন চালু করা যেতে পারে। 
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন নগরে গণপরিহন সচল রয়েছে। খুলনায় এটি চালু থাকলেও নানা কারনে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কয়েক দফা চালু করা হলেও অজ্ঞাত কারনে সেটি ফের বন্ধ হয়ে গেছে। একজন নাগরিককে প্রতিদিন শহরের এক প্রাপ্ত থেকে অন্য প্রান্তে নানান কাজে যেতে হয়। মাহেন্দ্রা ও সিএনজির ভাড়ার পরিমাণ অনেক বেশি যা সকলের পক্ষে সামঞ্জস্য নয়। খুলনায় ছোট পরিসরে ২০/২৫টি গণপরিবহন চালু করা প্রয়োজন। এগুলোর রূপসা থেকে দৌলতপুর হয়ে ফুলতলা, রূপসা থেকে বিআইডিসি রোড হয়ে ফুলতলা এবং রূপসা সেতু থেকে বাইপাস সড়ক হয়ে ফুলতলা যাবে। এগুলো যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তবে নগরবাসীর দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হবে। 
জনউদ্যোগ খুলনার আহবায়ক এড. কুদরত-ই-খুদা জানান, গণপরিবহন যা খুলনায় নগর পরিবহন হিসেবেই পরিচিত। এটা না থাকায় নাগরিকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মূলতঃ নগরীতে মাহেন্দ্রা ও সিএনজির সিন্ডিকেট চলছে। তারা ইচ্ছামত গ্রাহকদের নিকট ভাড়া নিচ্ছেন। অদক্ষ ও অসতর্কতার কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা। গণপরিহন চালু থাকলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা কম ভাড়ায় কর্ম ও শিক্ষা ক্ষেত্রে যাতায়াতের সুযোগ পেত। বিষয়টি সিটি মেয়রকে একাধিকবার বলা হয়েছে। এই বিষয়ে খুলনার নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করা উচিত।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, আপাতত নগরীর রাস্তা সংস্কার করা জরুরী। পরবর্তীতে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ