খুলনা | বুধবার | ৩০ এপ্রিল ২০২৫ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

অবৈধ আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ জনরোষের শিকার

নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৬ এ.এম | ৩০ এপ্রিল ২০২৫


ভোটাররা যেন নির্ভয়ে-নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধনকালে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার  সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে তিনি তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে তিন দিনব্যাপী ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে দেশে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে অনুষ্ঠিত হয় সেজন্য পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা অনেক। নির্বাচনে সব প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর প্রতি সমান আচরণ ও ভোটাররা যেন নির্ভয়ে-নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মনে রাখবেন, কোনো ব্যক্তি যদি অন্যায় বা অনিয়মের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়, সেই ব্যক্তির দ্বারা ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সুতরাং কারও দ্বারা ব্যবহৃত হবেন না। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার ব্রত হিসেবে নির্বাচনে নিজেদের নিয়োজিত করবেন।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কখনই যেন পুলিশ বাহিনীকে দলীয় বাহিনী বা অন্যায় কাজে ব্যবহার না করা যায় সেজন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচনের আগের এই সময়টা অনেক কঠিন। আপনাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, পরাজিত শক্তি যেন কোনোভাবেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে।অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি আগেও বলেছি, আমরা একটা যুদ্ধাবস্থায় আছি। অশুভ চক্র আমাদের স্বপ্নকে, আমাদের ঐক্যকে ভেঙে দিতে সব শক্তি নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে। একে প্রতিহত করার জন্য আপনাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা অনেক ন্যায্য, অন্যায্য আন্দোলনে মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে দেখেছি। এসব পরিস্থিতিতে আপনারা অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। আশা করি একই রকম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে আগামী দিনগুলোতেও আপনারা কাজ করে যাবেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ মানুষের বন্ধু। পুলিশ বাহিনীকে সেই ইমেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রথমবারের মতো এবার পুলিশ সপ্তাহে ধর্মীয় নেতা, সাংবাদিক ও বিভিন্ন স¤প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে আমি জানতে পেরেছি। এ বৈঠকে পুলিশের ওপর জনসাধারণের প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা হবে। আমার প্রত্যাশা হলো, এটি যেন চলমান থাকে। প্রতি বছর পুলিশ সপ্তাহে যেন এ ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব কমিয়ে আনতে এটি অত্যন্ত জরুরি।
গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছিল বলে অভিযোগ করেছেন অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। অবৈধ আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ জনরোষের শিকার হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  
দেশের আইনশৃঙ্খলা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, স্বৈরাচার পতনের পর পুলিশ বাহিনী ভেঙে পড়েছিল। তবে অন্তর্র্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশকে উজ্জীবিত করতে। পুলিশের কাজের সহায়ক পরিস্থিতি যাতে তৈরি হয়, সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। 
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে, পুলিশ এই স্বপ্ন পূরণের মূল শক্তি। এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো স্বৈরাচার আমলে পুলিশ জনগণের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি করা হয়েছিল তা কমিয়ে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা, মানুষ ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলা, যাতে মানুষ পুলিশকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে। 
ড. ইউনূস বলেন, নায্যতার ভিত্তিতে গঠিত বৈষম্যমুক্ত দেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছি। আমরা দ্বিতীয় বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখছি, জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। এই সুযোগ যেন আমরা না হারাই। এবার ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে চিরজীবনের জন্য দায়ী থাকবো।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটা যুদ্ধাবস্থায় আছি। অশুভ শক্তি আমাদের স্বপ্ন ও ঐক্য ভেঙে দিতে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে চেষ্টা করছে। একে প্রতিহত করতে পুলিশকে সজাগ থাকতে হবে।
চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেই নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, সেজন্য পুলিশের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে সব প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর প্রতি সমান আচরণ ও ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব।
এবারের পুলিশ সপ্তাহের প্রতিপাদ্য আমার পুলিশ, আমার দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 
গত বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৮ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৬২ পুলিশ সদস্য এবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক পেয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা পদকপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যাজ পরিয়ে দেন।
সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজ, উদ্ভাবনীমূলক পদক্ষেপ, চাঞ্চল্যকর সূত্রবিহীন মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, দক্ষতা, প্রশংসনীয় অবদান ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা, রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম), রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ফেব্র“য়ারিতে ৪০০ জনকে এই পদক দেওয়া হয়েছিল।

্রিন্ট

আরও সংবদ