খুলনা | বুধবার | ৩০ এপ্রিল ২০২৫ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

মোংলা বন্দর শ্রমিক-কর্মচারীর নেতৃত্ব নিয়ে দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ৮

মোংলা প্রতিনিধি |
০১:৫৮ এ.এম | ৩০ এপ্রিল ২০২৫


মোংলায় বন্দর শ্রমিক-কর্মচারী সংঘের নেতৃত্ব নিয়ে দুই গ্র“পের মুখোমুখি অবস্থান, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার বিকেলে শ্রমিক সংঘ চত্বরে দুটি গ্র“পের ডাকা সমাবেশকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। সমাবেশে ঢাকা থেকে আসা জাতীয় নাগরিক পার্টি শ্রমিক উইং-সহ দু’টি গ্র“পের অন্তত ৮ জন জখম হয়েছে। তাদের মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে শহর জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। 
পুলিশ ও সভা আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানায়, মোংলা বন্দরের দেশ-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাস-বোঝাইয়ের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের বৃহত্তম সংগঠন শ্রমিক-কর্মচারী সংঘ। কিন্তু সেই শ্রমিক কর্মচারীদের সংগঠনের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে তিতুমীর চৌকিদার ও মোঃ আলাউদ্দিন গ্র“পের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকেই দ্ব›দ্ব চলে আসছিল। মঙ্গলবার বিকেলে শ্রমিকদের একটি অংশ নিয়ে শ্রমিক সংঘ চত্বরে তলবি সভার আয়োজন করেন শ্রমিক নেতা তিতুমীর চৌকিদারসহ তার লোকজন। অন্যদিকে বন্দরের শ্রমিক ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সদস্যদের নিয়ে ঠিক একই সময় ওই সমাবেশ স্থলে আরো একটি সভা ডাকেন শ্রমিক নেতারা। এর নেতৃত্ব দেন শ্রমিক নেতা মোঃ আলাউদ্দিনসহ অন্যান্যরা। 
শ্রমিক-কর্মচারী সংঘের নেতৃত্ব নিয়ে একই স্থলে সমাবেশ আহŸান করায় দুই গ্র“পের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিকেল ৩টা থেকেই মোংলা শহর ও শ্রমিক সংঘ চত্বরের রাস্তার দু’পাশে শ্রমিকরা বিভিন্ন গ্র“পে গ্র“পে অবস্থান নেয়। 
এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সমাবেশ স্থলে অবস্থান নেয় নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও পুলিশের সমন্নয় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। সমাবেশ নিয়ে দুই গ্র“পের মধ্যে বিতর্ক শুরু হওয়ার কারনে কোন পক্ষই সভা সমাবেশ করতে না পারে সে জন্য প্রশাসনও ছিল তৎপর। 
অন্যদিকে সমাবেশের প্রধান অতিথি ঢাকা থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক উইং-এর সেন্টাল কমিটির জয়েন্ট কো-অর্ডিনেটর মোশাররফ হোসেন স্বপনসহ ১০ সদস্যে প্রতিনিধিরা বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পার্টির ব্যানার সহকারে সমাবেশ স্থলে আসার সময় প্রতিপক্ষ শ্রমিক নেতা আলাউদ্দিনের সহযোগীরা ও শ্রমিকদের একটি অংশ এতে বাধা দেয়। অভিযোগ করেন তিতুমীরসহ তার লোকজন। শুরু হয় দুই গ্র“পের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে তিতুমীর চৌকিদার ও এনসিপি নারী সদস্যসহ ৪ জন আহত হয়। এছাড়া মোঃ আলাউদ্দিনের পক্ষেরও ৪ জনসহ জখম হয়। উপস্থিত শ্রমিক ও পথচারীরা তাদেরকে উদ্ধার করে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 
তবে আলাউদ্দিনের পক্ষের শ্রমিকরা বলেন, সভা আহবানকারী তিতুমীর চৌকিদার এখন আর কোন শ্রমিক নয়। সে তৎকালীন সরকারের কাছ থেকে গোল্ডেন হ্যান্ডশিপের মাধ্যমের সম্পন্ন টাকা নিয়ে শ্রমিক পদ থেকে ইস্তেফা দিয়েছে। এখন সে সমাবেশের নাম করে সাধারন শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে মোংলা বন্দর নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। যাতে মোংলা বন্দর শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয় এবং বন্দরের সুনাম নষ্ট হয় বলে তিতুমীরকে দোষারোপ করা হয়।
অন্যদিকে সভা আহবানকারী তিতুমীর চৌকিদার বলেন, দীর্ঘদিন শ্রমিক কর্মচারী সংঘটি তাদের দখলে নিয়ে শ্রমিক কর্মচারীদের অধিকার ক্ষুণœ করছে আলাউদ্দিনসহ তাদের কিছু লোকজন। তাই সাধারণ শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকরা তাদের প্রাণের সংগঠন সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচালিত হয় সে ব্যাপারের সভার আহŸান করা হয়েছিল। 
শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়ায় এ নিয়ে শহর জুড়ে দুই গ্র“পের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মোংলা থানার ওসি মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, মোংলা বন্দরের সুনাম রক্ষা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহর ও ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শ্রমিক ও সাধারন মানুষের নিরাপত্তা রক্ষায় শহরে নৌবাহিনীর টহলও জোরদার রয়েছে। 
শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লক্ষে ১৯৭২ সালে মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘ চালু হয়, কিন্তু ২০০৮ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারী সংঘের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। 
 

্রিন্ট

আরও সংবদ