খুলনা | শনিবার | ০৩ মে ২০২৫ | ২০ বৈশাখ ১৪৩২

একদিনের রিমান্ড আবেদন

দক্ষিণাঞ্চলের শীর্ষ অনলাইন জুয়ারী শ্রমিকলীগ নেতা স্বপ্নীল কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:২২ এ.এম | ০৩ মে ২০২৫


দক্ষিণাঞ্চলের শীর্ষ অনলাইন জুয়ারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও পাইকগাছার চাঁদখালী ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের আহবায়ক মোঃ আরাফাত হোসেন স্বপ্নীল (৩৫)কে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা স্বপ্নীলকে সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল এ মামলাটি পাইকগাছা থানায় দায়ের হয় (মামলা নং-১০, ধারা হচ্ছে ৩৩(২)/২৭(২)/৩৩, সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩)। এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ২ টার দিকে পৌর সদরস্থ আল-মদিনা হোটেলের নীচ থেকে তাকে আটক করে থানা হেফাজতে নেয়। এর আগে জনতা হাতে ধরা পড়েন তিনি। পরে পুলিশের কাছে তাকে সোপর্দ করা হলে একদিনের রিমান্ড চেয়ে শুক্রবার আদালতে সোর্পদ করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। জানা গেছে, থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদকালে স্বপ্নীল সেন্টু সম্পর্কে তথ্য দিলে পুলিশ নড়েচড়ে বসেছেন।
আরাফাত হোসেন স্বপ্নীল চাঁদখালী ইউনিয়নের গজালিয়া-কালুয়ার রুহুল আমিন সরদারের বড় ছেলে। তিনি সাতক্ষীরা পলিটেকনিক কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জেলা আ’লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বাবু’র ছত্রছায়ায় অবৈধ এ ব্যবসা শুরু করেন স্বপ্নীল। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় কেউ ভয়ে মুখ খোলার সাহস পায়নি তৎকালীন সময়ে। জানাতেও পারেনি প্রতিবাদ। স্বপ্নীলের অনলাইন (বেটিং সাইড) জুয়ার নাম হচ্ছে ‘ওয়ানএক্স বেট’ (1XBET)।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই বাবলা জানান, এ মামলায় এ পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বপ্নীল অনেক তথ্য দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার অনলাইন জুয়ার হোতা সুপার মাস্টার এজেন্ট আরাফাত হোসেন স্বপ্নীল বৃহস্পতিবার মোটরসাইকেলযোগে খুলনা থেকে সড়ক পথে পাইকগাছার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বেলা ২ টার দিকে পৌরসভার চারাবটতলা নামকস্থানে পৌঁছালে তার পুর্বপরিচিত স্থানীয় জাহিদুর রহমান সেন্টু নামক এক ব্যক্তি স্বপ্নীলকে রাস্তার উপর দাঁড় করিয়ে কথা বলতে থাকেন। এ সময় বেশকিছু লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হলে জটলা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত টের পেয়ে স্বপ্নীল তার পুর্বপরিচিত সবুজ নামে এক যুবককে সাথে করে মোটরসাইকেলে আল মদিনা হোটেলের নীচে আসেন। এরই মধ্যে জনতার হাতে ধরা পড়েন তিনি। পরে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে আটক করে থানা হেফাজতে নেয়।
তবে ঘটনা সম্পর্কে সবুজ জানান, মোবাইল মারফত এক ব্যক্তিকে আটকের খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁঁছে দেখি পরিচিত স্বপ্নীল। তিনি আরও জানান, খুলনা থেকে রওনার পুর্বে স্বপ্নীলের পুর্ব পরিচিত সেন্টুর সাথে মোবাইল তার (স্বপ্নীল) কথোপকথন হয়। 
এ বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ সবজেল হোসেন জানান, গত ৪ এপ্রিল থানায় দায়ের করা ২০২৩(২)/৩০(২)/৩৩ ধারায় সাইবার নিরাপত্তা আইনের মামলায় স্বপ্নীলকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তিনি আরোও জানান, এ মামলার তথ্য-উপাত্ত উদঘাটনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ১দিনের রিমান্ড আবেদন করে শুক্রবার আসামীকে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, পুলিশের নাকে ডগায় ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ নেতা তার অনলাইন জুয়া অব্যাহত রাখলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় সর্বশান্ত হয়েছে হাজারো পরিবার। 
অভিযোগ রয়েছে, স্বপ্নীল তার অবৈধ অনলাইন জুয়ার আড়ালে আ’লীগের কর্মকান্ড পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচিতে গোপনে আর্থিক সহায়তা করে আসছিল। তার সাথে আত্মগোপনে থাকা এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য, জেলার শীর্ষ নেতাদের সাথেও যোগাযোগ রয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচিতেও আর্থিক সহায়তার অভিযোগও রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, স্বপ্নীল পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা পাস করার পর অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং দক্ষিণাঞ্চলের শীর্ষ অনলাইন জুয়াড়ী হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন। উপজেলা পর্যায়ের পুলিশের শীর্ষ কর্তাদেরকে মাসিক মাসোয়ারা দেওয়ার সুবাদে ৫ আগস্ট বিপ্লবের পরও শ্রমিক লীগ নেতা তার অনলাইন ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। নানা অভিযোগ থাকলেও তাকে গ্রেফতারে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা ছাড়াও স্বপ্নীল তার অবৈধ অনলাইন জুয়া ‘ওয়ান এক্সবেট’ চালু রাখেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ