খুলনা | রবিবার | ০৪ মে ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২

নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত সুপারিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট

খবর প্রতিবেদন |
০১:১৩ পি.এম | ০৪ মে ২০২৫


উইমেন রিফর্ম কমিশন রিপোর্ট ২০২৫-এর কিছু সুপারিশ ইসলামি শরীয়ত, দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক—এমন অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে এই প্রতিবেদন বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিষয়টি পর্যালোচনায় ইসলামি ও সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

রোববার (৪ মে) সকালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রওশন আলী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন করেন। আগামী সোমবার (৫ মে) বিচারপতি ফাতেমা নজিব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিটটি শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত রয়েছে।

আইনজীবী রওশন আলী বলেন, ‌উইমেন রিফর্ম কমিশন রিপোর্ট ২০২৫-এর ছয়টি অধ্যায়—৩, ৪, ৬, ১০, ১১ ও ১২—এ যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তা কেবল ইসলামি শরীয়তের বিরোধী নয়, বরং দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় অনুভূতি এবং সংবিধানের মৌলিক নীতিমালার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এসব কারণে বিষয়টি আদালতের হস্তক্ষেপ দাবি করে রিটটি দায়ের করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, উইমেন রিফর্ম কমিশন রিপোর্ট ২০২৫ একটি ৩১৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন, যা সম্প্রতি বিভিন্ন মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে নারীর অধিকার, শরীর, পেশা ও পারিবারিক উত্তরাধিকারের বিষয়ে একাধিক সংস্কারমূলক প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

রিট আবেদনে যেসব প্রস্তাবকে বিতর্কিত হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো—

অধ্যায় ১১-তে নারী ও পুরুষের মধ্যে সমান উত্তরাধিকার দেয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। রিটকারীর দাবি অনুযায়ী, এটি ইসলামি শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান—বিশেষত কোরআনের সুরা নিসা (৪:১১)-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করার সুপারিশ রয়েছে প্রতিবেদনে, যা শরীয়তে অনুমোদিত বিধান। রিটকারীর মতে, এটি সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদের অধীনে থাকা ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করে।

My Body, My Choice স্লোগানকে প্রতিবেদনটি অন্ধ সমর্থন দিয়েছে, যা শরীয়তের নৈতিক কাঠামোর বাইরে চলে গেছে বলেও রিটে অভিযোগ করা হয়েছে।

যৌনকর্মকে একটি বৈধ পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে রিপোর্টে, যা ইসলামি মূল্যবোধের বিরোধী এবং সংবিধানের ২(ক) ও ২৬ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি বলে দাবি করা হয়েছে।

লিঙ্গ পরিচয় ও ট্রান্সজেন্ডার সম্পর্কিত ভাষা এবং দৃষ্টিভঙ্গি শরীয়ত ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও অভিযোগ রয়েছে রিটে।

এই রিট আবেদনে তিনটি মন্ত্রণালয়—যার মধ্যে সমাজকল্যাণ, ধর্ম এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় উল্লেখযোগ্য—এবং উইমেন রিফর্ম কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে।

রিটকারীর ভাষ্যমতে, এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে দেশের ধর্মীয় ও সামাজিক ভারসাম্য ব্যাহত হতে পারে। তাই আগে ইসলামি ও সাংবিধানিক বিশ্লেষকদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে পূর্ণাঙ্গভাবে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করাই যুক্তিযুক্ত হবে।

আদালত রিটের শুনানির জন্য যদি সময় নির্ধারণ করে, তাহলে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক আদেশ দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ