খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০৮ মে ২০২৫ | ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

চিকিৎসা খরচ মিটাতে বহু মানুষ সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে

|
১২:১১ এ.এম | ০৭ মে ২০২৫


প্রতিনিয়ত বাড়ছে ওষুধ ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম। বাড়ছে চিকিৎসকের ফি। রোগনির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালের দূরবস্থার কারণে মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্ন-মধ্যবিত্তদেরও ছুটতে হয় বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। সেসব স্থানে খরচের কোনো লাগামই নেই। ফলে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বহু পরিবারই দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। 
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শাহিনুল আলম একটি আন্তর্জাতিক জার্নালের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, এ দেশের ১ শতাংশ সার্জারি রোগী ভিক্ষা করে টাকা আনেন। ১২ শতাংশ রোগী টাকা আনেন চক্রবৃদ্ধি হারের সুদে। তাঁরা সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করা ছাড়া কোনো দিনই ওই টাকা শোধ করতে পারেন না। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, চিকিৎসা খরচ বহন করতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৫০ লাখ মানুষ গরিব হয়ে যায়। রবিবার বাংলাদেশ সোসাইটি অব নিউরো সার্জনসের (বিএসএনএস) তিন দিনব্যাপী চতুর্থ অন্তর্বর্তীকালীন সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ব্যক্তির চিকিৎসা খরচ ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে।
এর আগেও অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে, উচ্চ ব্যয়ের কারণে বহু মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারছে না। আবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে মাঝপথে চিকিৎসা থেকে সরে যাচ্ছে। ইতিপূর্বে বিবিএসের এক জরিপে দেখা যায়, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ গ্যাস্ট্রিক, রক্তচাপ, বাতজ্বর, হাঁপানি ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগলেও তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কোনো ধরনের চিকিৎসাই নেয় না। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিক ফেডারেশনের ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখের মতো। এর মধ্যে মাত্র ৫৯ লাখ রোগী চিকিৎসা নেয়। বাকি ৭১ লাখ রোগীই রয়ে যায় চিকিৎসার বাইরে। তারা ডায়াবেটিস ছাড়াও দ্রুত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়। তখন তাদের চিকিৎসার ব্যয় আরো বেড়ে যায়, যা বহন করা পরিবারের পক্ষে আরো অসম্ভব হয়ে পড়ে।
সরকারি হাসপাতালগুলোর সেবা নিয়েও রয়েছে অনেক অভিযোগ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক বা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রসমূহে চিকিৎসক ও সেবাদাতা লোকবলের অভাব নিয়ে বহু কথা হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যায়। রোগনির্ণয় যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে থাকা বা না থাকা, বিনামূল্যের ওষুধ না পাওয়া-এমনি আরো অনেক অভিযোগ আছে। নিম্নআয়ের মানুষ পারতপক্ষে অতি উচ্চমূল্যের বেসরকারি ক্লিনিক বা হাসপাতালে যেতে চায় না। বড় শহরগুলোতে গিয়ে চিকিৎসা করানোর সংগতিও তাদের নেই। তারপরও বাধ্য হয়ে একান্ত নিকটজনের চিকিৎসায় শেষ চেষ্টা করতে হয়। তখনই তারা স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে বা ঋণ নিতে বাধ্য হয়। স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা দেশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা মানসম্মত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি বরাদ্দের সর্বোত্তম ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ