দেশের তিন জেলাতে বজ্রপাতে কৃষক ও স্কুলছাত্রীসহ ৬ জনের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার এ দুর্ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরার দেবহাটায় এক যুবক, ঝিনাইদহে দুই কৃষক ও কিশোরগঞ্জে তিন স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
সাতক্ষীরা : জেলার দেবহাটায় বজ্রপাতে দেবব্রত ঘোষ (২৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের পাপড়াতলা সংলগ্ন বিলে জমির ধান কেটে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত দেবব্রত ঘোষ সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোঁড়া পাপড়াতলা এলাকার শিতানাথ ঘোষের ছেলে। তিনি সাতক্ষীরার চায়না-বাংলা হাসপাতালের কর্মচারী ছিলেন। প্রতিবেশী গোপাল দাশ জানান, দেবব্রত সাতক্ষীরা শহরের সিবি হাসপাতালের রিসিপশনে চাকুরি করতেন। ছুটিতে বাড়ি এসে আকাশে মেঘ দেখে দেবব্রত তার বাবার সঙ্গে স্থানীয় পাপড়াতলা বিলে ধান কাটতে যান। কাজ শেষ করে বৃষ্টির শুরুর আগে তার বাবা বাড়িতে চলে যান। আর দেবব্রত ঝড়-বৃষ্টির শুরু হলে বিল থেকে আসার সময় হঠাৎ বজ্রপাত ঘটলে ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে স্থানীয়রা তার মরদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। 
দেবহাটা থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া হাসান বলেন, বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যুর খবর শুনে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না থাকায় স্থানীয় শ্মশানে যুবকের শেষকৃত্যের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
ঝিনাইদহ : জেলাতে পৃথক বজ্রপাতে মিরাজুল ইসলাম (২৪) ও অলিয়ার রহমান (৫২) নামে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মিরাজুল ধান কেটে মাঠ থেকে বাড়ি ফেরার সময় এবং অলিয়ার মাঠে ধান কাটা অবস্থায় বজ্রপাতের শিকার হন। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের পশ্চিম বিষয়খালী ও মহারাজপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
নিহত মিরাজুল ইসলাম গান্না ইউনিয়নের পশ্চিম বিষয়খালী গ্রামের শাহাজ্জেল হোসেনের ছেলে। অপর নিহত ব্যক্তি অলিয়ার রহমান মহারাজপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডাঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বজ্রপাতের শিকার হয়ে দুই কৃষক নিহত হয়েছেন। মরদেহ দু’টি সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। পুলিশ এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বজ্রপাতে দুই কৃষকের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ : জেলার পাকুন্দিয়ায় বজ্রপাতে তিন স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার চরটেকী এলাকায় এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন উপজেলার চরটেকী গ্রামের জালাল উদ্দিনের মেয়ে ইরিনা (১৫), একই গ্রামের বাদল মিয়ার মেয়ে প্রিয়া (১৫) ও একই গ্রামের বোরহান উদ্দিনের মেয়ে বর্ষা (১৫)। তারা সবাই চরটেকী গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঝড়সহ বৃষ্টি শুরু হয়। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে চরটেকী নামাপাড়ায় ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়ে তিন স্কুল শিক্ষার্থী। এ সময় ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত হলে গুরুতর আহত হন ওই তিনজন। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে দ্রুত পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইরিনা ও প্রিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বর্ষারও মৃত্যু হয়।
পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাখাওয়াৎ হোসেন বজ্রপাতে তিন স্কুল শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বিল্লাল হোসেন জানান, হাসপাতালে গিয়ে পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া হয় এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাফন-কাফনের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করা হয়।