খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

‘সাইবার নিরাপত্তা আইনে অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ’

এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন সাইবার আইন কার্যকর : আসিফ নজরুল

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫১ এ.এম | ০৭ মে ২০২৫


এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন সাইবার সিকিউরিটি আইন কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। এতে পুরনো আইনের ৯টি ধারা থাকছে না বলেও জানান তিনি। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, সাইবার সুরক্ষা আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই অধ্যাদেশে অনলাইন জুয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো সাইবার  স্পেসে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে আগের আইনের ৯টি ধারা বাতিল করা হয়েছে। এই ৯টি ধারা ছিল কুখ্যাত ধারা, এসব ধারাতেই ৯৫ শতাংশ মামলা হয়েছিল। মামলাগুলোও এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক নিয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া উপস্থাপন করা হয়। কিছু সংশোধন শেষে এই সপ্তাহে গেজেট আকারে প্রকাশ হতে পারে বলেও জানান তিনি।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন সাইবার সিকিউরিটি আইন কার্যকর হবে। নতুন আইনে পুরনো আইনের ৯টি ধারা থাকছে না। এ অবস্থায় আগের সাইবার সিকিউরিটি আইনে যেসব মামলা হয়েছে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন সংশোধিত আইনের যেদিন গেজেট প্রকাশিত হবে তার আগের দিন পর্যন্ত এসব ধারায় দায়ের করা সব মামলা বাতিল হয়ে যাবে।’
আইন উপদেষ্টা জানান, যেসব বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সঙ্গীত বা জাতীয় পতাকা সংক্রান্ত বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি, কুৎসামূলক প্রচারণার দন্ড সংক্রান্ত যে বিধান তা বিলুপ্ত করা হয়েছে। এই বিধানে প্রচুর হয়রানিমূলক মামলা হতো। মানহানিকর তথ্য প্রচার-প্রকাশ ইত্যাদির জন্য প্রচুর মামলা হতো। অনেক সাংবাদিকও এর ভিকটিম হয়েছে। এটা বাতিল করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে-এ রকম কোনো বা কথাবার্তা বলা, এ বিষয়ে প্রচুর মামলা হতো। এটা বিলুপ্ত করো হয়েছে। আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শনমূলক তথ্য প্রকাশ এ সংক্রান্ত বিধান সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে।
আরও কিছু ধারার মামলা বাতিল হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আরও কিছু ধারার মামলা বাতিল হয়ে যাবে, যেমন-সাইবার সন্ত্রাসী কার্য ও সংগঠনের অপরাধ ও দন্ড, পরিচয়ের প্রতারণা ও ছদ্মবেশ ধারণের অপরাধ ও দন্ড। ধারাটা আছে, তবে সংজ্ঞাটা এমন ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে যাতে আগের ধারার মামলা আর টিকে থাকবে না।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, নতুন আইনে জামিনযোগ্য অপরাধ হবে-সাইবার স্পেসে জালিয়াতির অপরাধ, ই-ট্রানজেশনে অপরাধ, ধর্মীয় বা জাতিগত বিষয়ে সহিংসতা, ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক তথ্য প্রকাশ, যৌন হয়রানি, ব্ল্যাকমেইলিং, অশ্লীল বিষয়বস্তু প্রকাশ। অর্থাৎ, স্পিচ অফেন্স বা কথা বলে বা মতামত প্রকাশ করে যে অপরাধ তার সব জামিনযোগ্য করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, নতুন সাইবার সিকিউরিটি আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বছর। কেউ মিথ্যা মামলা করলে এবং তা প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, সরকার এই আইনে অনেকগুলো রক্ষাকবচ তৈরি করেছে। নতুন অধ্যাদেশের ফলে ভুয়া মামলা, যার কোনো ভিত্তি নাই, এরকম মামলা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করে দেওয়া যাবে। বিচারক যদি দেখেন অভিযোগের ভিত্তি নেই, তাহলে প্রি-ট্রায়াল স্টেটেই মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন। চার্জশিটের জন্য ওয়েট করতে হবে না।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘অপরাধগুলোকে আমলযোগ্য অপরাধ রেখেছি, কিছু ক্ষেত্রে আপসযোগ্য রেখেছি।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিল আছে। তারা যখন আক্রমণাত্মক বা অপরাধমূলক কোনো কন্টেন্ট অপসারণ করবে, সেটার জন্য যে অথরিটি স্ট্যাবলিশ করা হয়েছে সেই অথরিটিতে সিভিল সোসাইটি মেম্বার থাকবে। এই অথরিটি কোনো কনটেন্ট অপসারণ করার পরপরই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের অনুমিতি নিতে হবে। আদালত যদি বলে এটা অপসারণ করা যাবে না, তাহলে এটা আবার প্রকাশ করতে হবে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, যে কনটেন্ট অপসারণ করা হয়ে সে ব্যাপারে জনগণকে জানাতে হবে। জনগণ সেনসেটাইজ (সচেতন) থাকবে আসলে সরকার উদ্দেশ্যমূলক ভাবে কনটেন্ট অপসারণ করছে নাকি আইনগত ভাবে যেটা প্রকাশ করা যায় না সেটাই অপসারণ করেছে।
আসিফ নজরুল জানান, এছাড়া কিছু কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে দু’টি অপরাধ রাখা হয়েছে, একটি হচ্ছে নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক কন্টেন্ট প্রকাশ, হুমকি দেওয়া। আরেকটি হচ্ছে ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানো, যেই ঘৃণা ছড়ানোর মধ্যে দিয়ে সহিংসতা উসকে দেওয়া হয়। ধর্মীয় ঘৃণাকে কঠোর ভাবে সজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাতে ভুল বুঝাবুঝি না হয়, কেউ কাউকে হয়রানি করতে না পারে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমবারের মতো এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যদি কোনও সাইবার অপরাধ করা হয়, সেটাকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে। মত প্রকাশের ক্ষেত্রে ওই দু’টি ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে মামলা হলে এটা আমলি আদালতে যাবে, যাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন— এই মামলায় কোনও যৌক্তিকতা নাই, তাহলে প্রি ট্রায়াল স্টেজে তিনি মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ চার্জশিটের জন্য অপেক্ষা করা লাগবে না। যদি দেখেন সম্পূর্ণ ভুয়া মামলা, এই মামলার কোনও ভিত্তি নাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন।
আসিফ নজরুল বলেন, বিলুপ্ত করা বিধানগুলোর মধ্যে আছে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় শহীদ বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কিত বিদ্বেষ বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার যে দন্ড দেওয়ার বিধান সেটা বিলুপ্ত করা হয়েছে। এই বিধানে প্রচুর হয়রানিমূলক মামলা হতো। মানহানিকর তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে বিধান যেটা এতে প্রচুর মামলা হতো, অনেক সাংবাদিক এই মামলার ভুক্তভোগী হয়েছেন, এই ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। আরেকটা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে-এই ধরনের কোনও কন্টেন্ট বা কথাবার্তা বলায় প্রচুর মামলা হতো, এটাও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। আক্রমণাত্মক বা ভীতিকর তথ্য উপাত্ত প্রকাশ এটাও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, কোরবানি ঈদের ছুটি ৫-১০ জুন আগে থেকেই ঘোষণা করা ছিল। জুন ১১ এবং ১২ ছুটি ঘোষণা করে ১৭ মে এবং ২৪ মে এই দুই দিন সরকারি ও আধা সরকারি কর্মচারীরা কাজ করবেন। এই দুই দিন ছুটি ঘোষণা করায় ঈদুল আযহার ছুটি হবে ১০ দিন। এই অনুযায়ী ব্যাংক প্রাইভেট কোম্পানি তাদের মতো করে ছুটি ঘোষণা করবে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ