খুলনা | বুধবার | ০৭ মে ২০২৫ | ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

রূপসায় সন্ত্রাসী হান্নান ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের দাবিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০২:০৯ এ.এম | ০৭ মে ২০২৫


খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামের সন্ত্রাসী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হান্নান ও তার সহযোগীদরে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার বিকেলে সামাজিক ও সচেতন এলাকাবাসী বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। আওয়ামী সরকারের আমলে মূর্তিমান আতঙ্ক হান্নান এখনও আত্মগোপনে থেকে এলাকার নিরীহ মানুষদের হুমকি দিচ্ছে। শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেলের ঘনিষ্ট হান্নান এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকাবাসী আতঙ্কে ভুগছেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, খুলনার শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হান্নান রূপসার দেয়াড়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলে। এলাকাবাসীকে জিম্মি করে মাদক কারবারীসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড গড়ে তোলে। বিগত সরকার আমলে সে তার নিজের গ্রামের বাড়িতে ২৫টি সিসি টিভি স্থাপন করে আলোচনায় আসে। সরকারি সম্পত্তিতে ডক ইয়ার্ড তৈরি করে লেদ মেশিনের মাধ্যমে অস্ত্র তৈরি করে। গত ২৪ এপ্রিল যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে অস্ত্রসহ তার ৬ সহযোগীকে গ্রেফতার করলেও হান্নান রয়েছে পলাতক। সে পলাতক থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হুমকি দিয়ে আসছে। বক্তারা অবিলম্বে হান্নান, তার সহযোগী আকাশ এবং অন্যান্যদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেন।
আইচগাতি ইউনিয়ন বিএনপি আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক শেখ আবুল কাশেম, রূপসা থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইমতিয়াজ আলী সুজন, বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন, জেলা কৃষক দলের শেখ ফেরদৌস হোসেন, হান্নান শিকদার প্রমুখ। এ সময় বিপুল সংখ্যক নারী ও পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ এপিল রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামের সন্ত্রাসী ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হান্নানের বাড়িতে সেনা এবং নৌ বাহিনির যৌথ অভিযানে পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ও তিনটি ধারালো অস্ত্রসহ ছয় জন গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ছয় জন এবং পলাতক সন্ত্রাসী হান্নানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের হয়। সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হান্নান খুলনার আলোচিত শেখ বাড়ি ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. সুজিত অধিকারীর ডান হাত বলে খ্যাত। বিগত হাসিনা সরকারের আমলে রূপসার গোটা আইচগাতি ইউনিয়নে সে ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। তাকে বলা হতো নব্য খুনি এরশাদ শিকদার। পলাতক সন্ত্রাসী হান্নান মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি সেচ্ছাসেবক লীগে যোগ দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে তিনি জুনিয়র এবং সিনিয়রদের নিয়ে পৃথক দুইটি সন্ত্রাসী বাহিনি গড়ে তোলেন। যারা ওই এলাকায় মাদক কারবার এবং খেজুরতলা ঘাট এলাকায় চোরাই তেল, কয়লা ও সারের কারবার নিয়ন্ত্রণ করতেন। স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, হান্নানের বসত ঘরের পাশেই একটি কক্ষে লেদ মেশিন রয়েছে। সেখানে তারা দুই ভাই দেশি অস্ত্র তৈরি করতেন। হান্নানের ব্যক্তিগত কারগোতে করে চট্টগ্রাম থেকে ইয়াবা ট্যাবলেটের বৃহৎ চালান এনে ওই অঞ্চলে মাদক কারবার পরিচালিত হতো। রূপসার দেয়াড়া গ্রামের নিয়ামুল করিমকে (৩৮) নৃশংসভাবে হত্যার পর হান্নান বাহিনি নিজেদের অপশক্তির জানান দেন। 
এর আগে গত ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর বিকেলে হান্নান গ্র“পের সন্ত্রাসীরা নিয়ামুলকে খেজুরতলা ঘাট এলাকায় গাছে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে তার মৃত্যু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা এলাপাতাড়ি পিটিয়ে হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করলেও কেউ বাঁচাতে যেতে সাহস পায়নি। ওই ভিডিও সিডি আকারে পুলিশ সংরক্ষণ করে। নিহতের পিতা শেখ সাইদুল করিম ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়া হান্নানের বিরুদ্ধে আরও একটি অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।  
 

্রিন্ট

আরও সংবদ