খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

ইসরায়েলে তৈরি ভারতের ২৫ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের

খবর প্রতিবেদন |
০৪:৩৯ পি.এম | ০৮ মে ২০২৫


পারমাণবিক অস্ত্রধর প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মাঝে গত দুই দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক সংঘাতের একদিন পর আবারও পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকা লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ভারত। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বলেছে, ইসরায়েলের তৈরি ভারতের হারোপ মডেলের ২৫টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। যদিও এর আগে গুলি চালিয়ে ভারতীয় ১২টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি জানিয়েছিল পাকিস্তান।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনার পর পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। প্রতিবেশী দুই দেশের দুই সপ্তাহের সীমান্ত উত্তেজনার পর বুধবার গভীর রাতে পাকিস্তানের ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ভারতের সামরিক বাহিনী।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ভারতের এই হামলার দাতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন। তার হুমকির মাঝেই দেশটিতে আবারও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী।

বুধবারের হামলা-পাল্টা হামলায় উভয়পক্ষের অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বলেছে, তারা এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে গুলি চালিয়ে ইসরায়েলের তৈরি ২৫টি হারোপ ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর থেকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী এএফপিকে বলেছেন, গত রাতে ভারত একাধিক স্থানে ড্রোন পাঠিয়ে আরও একটি আগ্রাসনের কাজ করেছে। ভারতের ছোড়া একটি ড্রোন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এই সদরদপ্তরের কাছে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, লাহোরের কাছে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ভারতীয় একটি ড্রোন আঘাত করেছে। এতে সেখানে অন্তত চার সৈন্য আহত হয়েছেন। এর আগে, তিনি বলেছিলেন অভিযান এখনও চলছে। ভারতীয় ড্রোনের আঘাতে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের সিন্ধুতে এক বেসামরিক নিহত ও আরেকজন আহত হয়েছেন।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় ড্রোনের বিধ্বস্ত স্থলে অনেক মানুষ জমায়েত হয়েছেন। এ সময় অনেকেই সামরিক স্থাপনার কাছাকাছি ভিড় জমান। লাহোরজুড়ে বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দ শোনা গেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলেছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করাচি বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে ইসলামাবাদ ও লাহোরে বিমানের উড্ডয়ন-অবতরণ সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার আরেক সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১২টি ড্রোন ধ্বংস করার কথা জানিয়ে ছিলেন আইএসপিআরে প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী।

তিনি ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ৭ ও ৮ মে মধ্যে পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় ওইসব ড্রোন প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপে এসব ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে।

ড্রোনগুলো লাহোর, গুজরানওয়ালা, রাওয়ালপিন্ডি, চকওয়াল, বাহাওয়ালপুর, মিয়ানওয়ালি, করাচি, চোর, মিয়ানো এবং আটক এলাকায় প্রতিহত করা হয়েছে।

ডিজি আইএসপিআর জানান, একটি ড্রোন আংশিকভাবে লাহোরের কাছে একটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে, এতে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।  

এই হামলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চার সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া সিন্ধুর মিয়ানো এলাকায় ড্রোন হামলায় একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

এই ধরনের ড্রোন হামলাকে আগ্রাসনের ধারাবাহিকতা বলে উল্লেখ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, ‘পাকিস্তানের আকাশসীমা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় আমাদের বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।’

তিনি আরও জানান, পাকিস্তান বিমান বাহিনী ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে এবং এর ফলে লাইন অব কন্ট্রোলে ভারতের পক্ষ উল্লেখযোগ্য প্রাণহানি হয়েছে।

আইএসপিআর প্রধান বলেন, ভারত যেভাবে উসকানিমূলক সামরিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তা শুধু দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাই নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলছে।

তিনি পাকিস্তানি জনগণের উদ্দেশে বলেন, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনী সর্বদা প্রস্তুত এবং পরবর্তী পরিস্থিতির আপডেট সময়মতো জানানো হবে।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ৭৫ বছরের বেশি সময় ধরে ভারতের একমাত্র মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মির নিয়ে প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে বিবাদ চলে আসছে। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই কাশ্মিরের পূর্ণ মালিকানা দাবি করে। হিমালয় ঘেঁষা এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণের নিয়ে অতীতে অন্তত তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে দেশ দু’টি।

জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘‘আমরা এই শহীদদের রক্তের প্রতিটি ফোঁটার প্রতিশোধ নেব।’’

 

্রিন্ট

আরও সংবদ