খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন : কী অভিমানে বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেল, এএসপি পলাশের মায়ের আহাজারি

খবর প্রতিবেদন |
০২:১৮ এ.এম | ০৯ মে ২০২৫


‘তোরা আমার বাবার কাছে নিয়ে যা, আমি বাবাকে একটু ছুঁয়ে দেখি। কী অভিমানে বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেল।’ কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার   র‌্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহার (৩৭) মা আরতী সাহা। ছেলের কপালে চুমু খেয়ে প্রলাপ করছিলেন সন্তান হারা মা। সন্তানের শোকে তার চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে। 
এর আগে  র‌্যাব-৬ এর কমান্ডিং কর্মকর্তা কমান্ডার শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে লাশবাহী ফ্রিজারে করে নিহত পলাশের লাশ গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে বেলা পৌনে ১০টার দিকে।  তাকে দেখতে সহপাঠী, প্রতিবেশি ও স্বজনরা ওই বাড়িতে ভিড় করে। এ সময় ওই বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনের কান্নায় ও আহাজারিতে শোকাবহ হয়ে ওঠে সাহা বাড়ির পরিবেশ।
গোপালগঞ্জ পয়সারহাট সড়কে কোটালীপাড়ার তাড়াশি বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫০০ মিটার দক্ষিণে পলাশ সাহার বাড়ি। মেঝে পাকা চারচালা টিনের ঘরের সামনে বসে আর্তনাদ করে স্মৃতিচারণ করছেন বড় বোন রমা সাহা। পাশে মেজো ভাই নন্দলাল সাহা ও বড় ভাই লিটন সাহার স্ত্রী পাশে বসে আর্তনাদ করছিলেন। 
বেলা সাড়ে দশটা পর্যন্ত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পর শেষকৃত্যের জন্য পলাশের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় পৌরসভার পাড়কোনা মহাশ্মশানে। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে দুপুরে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। 
নিহত পলাশের মেজ ভাই নন্দলাল সাহা বলেন, তিন ভাই এক বোনের মধ্যে পলাশ ছিলেন সবার ছোট ও আদরের। কোটালীপাড়া থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। 
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে চাকুরি জীবন শুরু করেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার ও ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়। 
চাকুরির জীবনে তিনি পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে তাকে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন   র‌্যাব-৭ দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দুই বছর আগে ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন চৌধুরীপাড়ায় সুস্মিতা সাহার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন পলাশ। বিয়ের দুই মাস পর থেকেই শুরু হয় সংসারে অশান্তি। 
নন্দলাল সাহা বলেন, পলাশ চেয়েছিলেন মা ও স্ত্রীকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে। কিন্তু তার স্ত্রী এটা ভালোভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না। মা বাসায় না থাকতে চাইলে পলাশ কষ্ট পেতেন। বাসায় থাকলে স্ত্রী সহ্য করতে পারতেন না। এ নিয়েই মাঝে মাঝে ঝামেলা লেগে থাকতো তাদের মধ্যে। ভাই চলে গেল; আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল।
নন্দলাল বলেন, আমি নিজেও ৩৬তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম। যখন পলাশের একের পর এক চাকুরি হচ্ছিল তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি চাকুরি করবো না উদ্যোক্তা হবো। তাই ঢাকা ছেড়ে বাড়িতে চলে আসি। কিন্তু আদরের ছোট ভাই চলে গেল আর সংসারের সবাইকে সাগরে ভাসিয়ে গেল।
বাল্য বন্ধু হাছান শেখ বলেন, পলাশ সাহা আমার বাল্যবন্ধু ছিলেন। লেখাপড়ায় অত্যন্ত ভালো ছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে আন্তরিকতার সঙ্গে মেলামেশা করতেন। তার অকাল মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অসহনীয় বাস্তবতা।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রামের নগরের চান্দগাঁও  র‌্যাব-৭ ক্যাম্পে অভিযানের প্রস্তুতি চলছিল। এ জন্য নিজের কক্ষে যায় পলাশ সাহা। এ সময় সহকর্মীরা গুলির শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান তাকে। নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে পলাশ আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে   র‌্যাব কর্তৃপক্ষ। তার রক্তাক্ত লাশের পাশেই পড়ে ছিল একটি চিরকুট। সেখানে তার মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী বলে উলে­খ করেন। 
চিরকুটে লেখা ছিলো, আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের উপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।

্রিন্ট

আরও সংবদ