খুলনা | শনিবার | ১০ মে ২০২৫ | ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

আইভীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের গাড়িবহরে হামলা

সেলিনা হায়াৎ আইভী কাশিমপুর মহিলা কারাগারে

খবর প্রতিবেদন |
০১:২১ এ.এম | ১০ মে ২০২৫


হত্যা মামলায় গ্রেফতার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন কারাগারটির জ্যেষ্ঠ জেল সুপার কাওয়ালিন নাহার।
জেল সুপার জানান, শুক্রবার বেলা ২টার দিকে সেলিনা হায়াৎকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়েছে।
এর আগে নাসিক’র সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে বহনকারী গাড়ির ওপর হামলা হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিবি রোডের কালির বাজার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় র‌্যাব ও পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এতে পুলিশের দুই সদস্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেলিনা হায়াৎকে গ্রেফতারের জন্য শহরের দেওভোগ এলাকায় তাঁর নতুন বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর সকাল পৌনে ছয়টার দিকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় সেখানে তাঁর বিপুল সংখ্যক সমর্থক অবস্থান করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকালে সেলিনা হায়াৎকে গ্রেফতারের পর তাঁকে নিয়ে র‌্যাব ও পুলিশের ১৫টি গাড়ি ডিবি কার্যালয়ের দিকে রওনা হয়। এ সময় ৩০-৪০ জনের একটি দল হামলা চালায়। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থকদের ধাওয়া দিলে তাঁরা পালিয়ে যান। হামলাকারীদের ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশের দুই সদস্যসহ পাঁচজন আহত হন। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিবি রোডের কালীর বাজার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে আহত ব্যক্তিদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। ওই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মোঃ হাসানুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘সেলিনা হায়াৎকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার সময় পুলিশের গাড়িবহরে হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। আমরা বিস্ফোরণের শব্দও শুনেছি। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে সেলিনা হায়াতের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
এর আগে অভিযান শুরুর নাটকীয় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর নাসিকের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার সকাল পৌনে ছয়টার দিকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় সেখানে তাঁর বিপুল সংখ্যক সমর্থক অবস্থান করছিলেন। গাড়িবহর নিয়ে পুলিশও ছিল সতর্ক অবস্থানে।
পুলিশ জানায়, গত বছর জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে পোশাক শ্রমিক মিনারুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তাঁকে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ কাইউম খান বলেন, মিনারুল হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ ১২ নম্বর আসামি। এই মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ২৬ মে মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ কাইউম খান জানান, আইভীর বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরকসহ মোট পাঁচটি মামলা আছে। মিনারুল ইসলাম হত্যা মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান আছেন।
এর আগে গ্রেফতার করার সময় সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘আমি তো বাড়িতেই ছিলাম, আমি তো পালাইনি। তাহলে এই ভাবে আমাকে গ্রেফতার করতে হলো কেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কি জুলুমবাজ, আমি কি হত্যা করেছি, আমি কি চাঁদাবাজি করেছি, আমার এমন কোনো রেকর্ড আছে নারায়ণগঞ্জ শহরে কোনো বিরোধী দলকে আঘাত করেছি, তাহলে কিসের জন্য কী কারণে, কোন ষড়যন্ত্রের কারণে কার স্বার্থে আমাকে গ্রেফতার করা হলো? আমিও প্রশাসনের কাছে জানতে চাই।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আইভীকে গ্রেফতারের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরের দেওভোগ এলাকায় তাঁর নতুন বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ খবর পেয়ে আইভীর সমর্থকেরা বাড়িটির সামনে অবস্থান নেন এবং দু’টি সড়কের ১০-১৫টি পয়েন্টে বাঁশ দিয়ে অবরোধ করেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াতের নামে একাধিক মামলা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে হত্যা, হত্যার চেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সেলিনা হায়াতের নামে পাঁচটি মামলা আছে।
গত বছরের ২০ জুলাই সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আদমজী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন পোশাক শ্রমিক মিনারুল ইসলাম। শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরদিন গ্রামের বাড়িতে তাঁকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় ২৩ সেপ্টেম্বর নিহত মিনারুল ইসলামের ভাই নাজমুল হক বাদী হয়ে ১৩২ জনের নাম উলে­খ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ জনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ