খুলনা | বুধবার | ২৮ মে ২০২৫ | ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দিলীপ মাঝির সাঁকো যখন স্বপ্নের সারথি!

পারভেজ মোহাম্মদ |
০১:৫১ এ.এম | ১০ মে ২০২৫


দিলীপ মাঝির বাঁশের সাঁকো। অভাবের সুঁতই  বাঁধা প্রতিটি গিঁটে গিঁটে মানবিকতার ছাপ। কিছুটা অভিমান আর নদী পাড়ে ভোরের সূর্যে স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত, দিলীপের ভালোবাসায় তৈরি বাঁশের সাঁকোটি দু'পাড়ের মানুষের সেতুবন্ধনের সূচনা। 
স্কুল পড়–য়া তৃষ্ণা মন্ডল (১৪)। দিলীপ মাঝির পিচ্ছিল বাসের সাঁকোটি যেন তৃষ্ণার শিক্ষা জীবনের বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার নির্বাক সাক্ষী। যমুনা সরকারের মত সন্তানের নিরাপদে ঘরে ফেরার  শত মায়ের  চাতক চাহনি যেন দিলীপ মাঝির বাঁশের সাঁকো। প্রতিদিনের প্রয়োজনে হাজারো মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ পারাপারের নাম দিলীপ মাঝির বাঁশের সাঁকো। 
পাইকগাছা উপজেলার লতা ও দেলুটী ইউনিয়নের সংযোগস্থলে অবস্থিত লতা-দেলুটী খেয়াঘাট, প্রতিদিন হাজারো মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কৃষক, রোগী ও দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই ঘাট ব্যবহার করে। পূর্ব পাড়ে পাকা ঘাট থাকলেও পশ্চিম পাড়ে এখনো রয়েছে একটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো, যা বর্ষায় হয়ে ওঠে বিপজ্জনক মৃত্যুফাঁদে।
ঘাটের মাঝি দিলীপ কুমার জানান, এক বছর আগেও সাঁকোটির অস্তিত্ব ছিল না। কাঁদার মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হতো, যা বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল কষ্টকর। তিনি জানান, নিজের অজান্তে নিছক ভালোবাসার টানে নিজ খরচে তৈরি করি বাঁশের সাঁকোটি।  এখনো পর্যন্ত এর সংস্কারে কোনো সরকারি পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। একটু অসাবধানতাই হতে পারে বড় দুর্ঘটনার কারণ।
বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী তৃষ্ণা মণ্ডল বলেন, প্রতিদিন স্কুলে যেতে ভয় লাগে। অনেকবার কাদা-পানিতে পড়ে বই-খাতা ও পোশাক নষ্ট হয়েছে। এখানে একটি স্থায়ী ঘাট খুব জরুরি।
স্থানীয় গৃহিণী যমুনা সরকার বলেন, সকালে ছেলে-মেয়েরা যখন স্কুলে যায়, তখন খুব দুশ্চিন্তা হয়। পানির কলস নিয়ে সাঁকো পার হওয়াও খুব ঝুঁকিপূর্ণ। বাধ্য হয়ে হাটু কাদায় চলাচল করতে হয়।
একই অভিযোগ কৃষক সৌমেন দাশের। তিনি বলেন, হাটে মালামাল নিতে গেলে বাঁশের সাঁকো পার হওয়া যায় না। পণ্য মাথায় তুলে কাদার মধ্য দিয়েই যাতায়াত করতে হয়।
দেলুটী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুকুমার কবিরাজ জানান, বিষয়টি  প্রশাসনের নজরে আনা হয়েছে। তিনি জানান, দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাকাঘাট নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হবে।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, ঘাটের দুরবস্থা সম্পর্কে আমি জানা মাত্রই জনসাধারনের দুর্ভোগ লাঘবে 
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। স্থানীয়রা বলছেন, সমস্যা দীর্ঘদিনের। প্রতিদিন প্রকট থেকে হচ্ছে প্রকটতর। আশ্বাস আর বিশ্বাসের দোলা চলে কাটছে দিন মাস বছর। সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় প্রহরটা ক্রমশ দীর্ঘ হলেও নোনা জলে বেড়ে ওঠা দিলীপ মাঝির ভালোবাসার বাসের সাঁকোটি স্বপ্নীল আগামীর স্বপ্নের সারথী হয়ে থাকবে এ অঞ্চলের মানুষের স্মৃতিপটে। 
 

্রিন্ট

আরও সংবদ