খুলনা | রবিবার | ১১ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থায় যুদ্ধবিরতিতে ভারত-পাকিস্তান

খবর প্রতিবেদন |
০৬:২০ পি.এম | ১০ মে ২০২৫


দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা তীব্র উত্তেজনা ও রক্তক্ষয়ের পর ভারত এবং পাকিস্তান অবশেষে একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাায় সংঘটিত টানা ৪৮ ঘণ্টার কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। পরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ভারত এবং পাকিস্তানের কর্মকর্তারা।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানিয়েছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট (বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টা) থেকে কার্যকর হয়েছে।
এর আগে শনিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬ টায় প্রথম যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাটফর্ম ট্রুথ স্যোশালে শেয়ার করা এক পোস্টে জানান যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাায় ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশ পাল্টা-পাল্টি হামলায় ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছার পর ট্রাম্প এমন মন্তব্য করেছেন বলে খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। 
ট্রাম্প তার পোস্টে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে রাতে দীর্ঘসময় আলোচনার পর আমি সন্তুষ্টির সঙ্গে এ ঘোষণা দিচ্ছি যে, ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে এবং পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এ খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন। ট্রাম্প তার পোস্টে আরও লিখেছেন, সাধারণ জ্ঞান এবং বড় আকারে গোয়েন্দা ব্যবহারের জন্য উভয় দেশকে আমি অভিনন্দন জানাই। এ বিষয়ে আপনাদের মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ। 
ওদিকে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এ ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নিরপেক্ষ কোনো স্থানে এ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা শুরুর করার জন্যও অভিনন্দন জানান তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রুবিও বলেছেন, ৪৮ ঘণ্টা ধরে তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারত ও পাকিস্তানের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। 
এর মধ্যে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির, দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও অসিম মলিক। 
রুবিও লিখেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদি ও শেহবাজ শরীফের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং রাষ্ট্রনাকোচিত ভূমিকার প্রশংসা করি। 
এদিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ভারতের সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেছেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিায়া পোস্টে বলেছেন, ‘পাকিস্তান ও ভারত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকরভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। পাকিস্তান সর্বদা তার সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার সাথে আপোষ না করে এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে!’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে তিনি বলেন, পাকিস্তান ও ভারত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। তা অবিলম্বে কার্যকর হবে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সব সময় আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি প্রত্যাশিত। এক্ষেত্রে সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিয়ে আপস হবে না।
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনসের সঙ্গে তার সমপর্যায়ের ভারতীয় সেনা কর্মকর্তার বিকালে ফোনে আলাপ হয়েছে। দু’পক্ষই সবরকম হামলা বন্ধ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। ভারতীয় সময় বিকাল পাঁচটা থেকে জল, স্থল ও আকাশপথে সমস্ত হামলা বন্ধের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব আরও জানান পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের মহাপরিচালক (ডিজিএমও) আজ (গতকাল শনিবার) বিকেলে তার ভারতীয় সমকক্ষকে ফোন করেন এবং দুইপক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে একটি চুক্তি হয়।
সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে বিক্রম মিশ্রি বলেন, উভায় পক্ষ সম্মত হয়েছে যে, স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে সব ধরনের যুদ্ধ ও সামরিক কার্যক্রম আজ ভারতীয় সমায় বিকেল ৫টা (বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টা) থেকে বন্ধ থাকবে। তিনি আরও জানান, এই সমঝোতা কার্যকর করার জন্য উভায় পক্ষেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সামরিক অভিযানের মহাপরিচালকেরা আবার ১২ মে দুপুর ১২টায় কথা বলবেন।
এর আগে ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা ঘটে। গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় হামলা চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে হত্যা করে একদল সন্ত্রাসী। নিহত এই পর্যটকদের সবাই পুরুষ এবং অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। নিহতের ঘটনার মধ্য দিয়ে ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা নতুন করে শুরু হয়। ভারত এই হামলার নেপথ্যে পাকিস্তানকে দায়ী করে।
এরপর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ কড়া পদক্ষেপ নেয়। এরমধ্যে সিন্ধু নদের পানি বণ্টনচুক্তি ও পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিলসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। জবাবে পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। যার মধ্যে সিমলা চুক্তি স্থগিত, ভিসা বাতিলসহ, ভারতের জন্য আকাশসীমা নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তান সিন্দু পানিবন্টন চুক্তি স্থগিতকে যুদ্ধের শামিল হিসেবে ঘোষণা করে।
এরপর থেকে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে টানা প্রায় ১২ রাত ধরে গোলাগুলি হয়। এই গোলাগুলির জন্য উভয় দেশই একে অপরকে দোষারোপ করে। তবে গত মঙ্গলবার ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তানি কাশ্মীরসহ অন্তত নয়টি জায়গায় ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। তারা এই অভিযানের নাম দেয় অপারেশন সিন্দুর।  
পাকিস্তানের দাবি, ভারত ছয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং এতে তাদের ৩৮ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। সেইসঙ্গে আহত হয়েছে শতাধিক। এ ছাড়া পাকিস্তান দাবি করে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।  
তবে ভারত দাবি করেছে, তারা পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং হামলায় অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছে।  এছাড়া পাকিস্তান বাহিনীর গোলাবর্ষণে কাশ্মীরে ১৫ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে বলে জানায় ভারত।  এই হামলার পর থেকে দুই বৈরি দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি বার্তা দেওয়া হয়।
শেষমেশ শনিবার (১০ মে) পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয় তারা ভারতের অপারেশন সিন্দুর এর বদলা হিসেবে অপারেশন বানিয়ান মারসুস শুরু করেছে। পাকিস্তানের দাবি, তারা ভারতের পাঠানকোট, উধমপুরসহ বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। 
শ্রীনগর থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, ভোর পৌনে ছয়টার দিকে সেখানে কয়েকটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। 
এর আগে ভারত আর পাকিস্তান দু’টি দেশই দাবি করে যে শুক্রবার দিবাগত রাতে তাদের ওপরে অপর দেশ থেকে হামলা হয়েছে। উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের ৩২টি বিমানবন্দর থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।  
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, পারমাণবিক ক্ষমতাধর দুই দেশ ফের হয়তো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এবার উত্তেজনা কমানোর ইঙ্গিত দেওয়া হলো। 
 

্রিন্ট

আরও সংবদ