খুলনা | রবিবার | ১১ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

খুলনার সোনালী জুট মিলের ঋণ জালিয়াতি ও দুদকের মামলা

এজাহারে ছিল সাংবাদিক সুভাস সিংহ ও সাবেক এমপি হেনরির নাম : বাদ পড়লো চার্জশীট থেকে!

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৫৬ এ.এম | ১১ মে ২০২৫


সোনালী ব্যাংকের পরিচালক হয়ে ঋণ বিতরণের অনিয়ম করেছিলেন সাংবাদিক নেতা সুভাষ সিংহ রায় ও আ’লীগের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী। দুদকের দায়ের করা মামলার এজাহারে নাম থাকলেও চার্জশীটে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে রহস্যজনকভাবে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের খুলনা কর্পোরেট শাখায় আবেদন না করার আগেই সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ খুলনার সোনালী জুট মিলকে পূর্বের ঋণের সুদ মওকুপ করে নতুন করে ৬৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে। এই ঘটনায় দুদক খুলনা ২০১৭ সালে তৎকালীন সোনালী ব্যাংক তৎকালিন পরিচালক সাংবাদিক নেতা সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায়, সাবেক মহিলা এমপি জান্নাত আরা হেনরী ও সাবেক এমডি লুৎফর রহমানের নামে এজাহারে করলেও সম্পতি চার্জশীটে তাদের নাম রহস্যজনকভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। দুদক খুলনার পরিচালক জালাল উদ্দিন ঘটনা স্বীকার করে জানান, চার্জশীট হয়েছে তবে শুনানী শুরু হয়নি।   
২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর মাসে দুদকের উপ সহকারী পরিচালক মোঃ মোশারেফ হোসেন বাদী হয়ে খুলনার খানজাহান আলী থানার একটি এজহার দাখিল করেন। এজাহারে তখন বলা হয়, ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর হতে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টম্বর পযর্ন্ত দুর্নীতি প্রতারণা, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে  তথা ব্যাংকের  ১২৬ কোটি ৮২ লাখ ৯৩ হাজার ২৮২ আর্থিক ক্ষতিসাধান করা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, উত্তরা ব্যাংক খুলনা স্যার ইকবাল রোড় শাখার ঋণ খেলাপী হযে থাকা অবস্থায় সোনালী জুট মিলের চেয়ারম্যান এস এম এমদাদ হোসেন ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্র“য়ারি পরিচালনা পর্যদের কাছে ঋণ মঞ্জুরের আবেদন করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ লুৎফর রহমান খান, পরিচালক সত্যেন্দ্র নাথ ভক্ত, কে এম জামাল রোমেল, সাইফুল সরওয়ার কমল, সাবেক মহিলা এমপি জান্নাত আরা হেনরী  এবং সাংবাদিক নেতা সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায় ২০১০ সালের ২৩ ও২৪ জানুযারি মিলটি সরে জমিনে পরিদর্শন করেন। এই টিমের সুপারিশ মোতাবেক সোনালী জুট মিলের অনুক‚লে ঋণ মঞ্জুর করা হয়। অথচ সেই সময় পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক খুলনা কর্তৃপক্ষ কিছুই জানতেন না। পরবর্তীতে সোনালী ব্যাংক খুলনা কর্পোরেট শাখা গ্রাহক ডেকে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে নেন। কিন্তু তার মঞ্জুরীকৃত ঋণে প্রথমে বিশ কোটি টাকা এবং পরবর্তীতে এক বছরে বৃদ্ধি করে ৫৫ কোটি টাকার হাইপো/প্লেজে ঋণ মঞ্জুর করা হয়।  
ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে সাংবাদিক নেতা ও ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায়ই মূলত এই ঋণের খবরদারী করেছেন। এমনকি মঞ্জুরীকৃত ঋণের বেশী অর্থ গ্রাহককে প্রদান করা হয় ঋণ মঞ্জুরের এক সপ্তাহর মধ্যেই। দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মোঃ মোশারেফ হোসেন জানিয়েছিলেন, তারা ব্যাংকে এই ঋণের কাগজ পত্র চেয়ে পত্র দিলেও ব্যাংক আদালতে অজুহাতে প্রথমে কাগজ দিতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তারা ব্যাংক হতে ডকুমেন্ট পেয়েছে এবং মামলার দায়ের করার পর উপ-পরিচালক মোঃ মোশারেফ হোসেনকে খুলনা থেকে বদলী করা হয়েছিল।
খুলনা সোনালী জুট মিলের চেয়ারম্যান এস এম এমদাদুল হক বুলবুল ২০২০ সালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর আগে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছিলেন, ঋণ মঞ্জুরের টাকার বড় অংশই সুভাষ সিংহ রায় আর জান্নাত আরা হেনরিকে দিতে হয়েছিল।
এদিকে এই মামলার সর্বশেষ অবস্থা জানতে এপ্রিল মাসের শেষ দিকে দুদকের বিভাগীয় কার্ষালয়ে পরিচালক জালাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ফাইল পত্র দেখে বলেন, মামলাটির তদন্ত শেষে মিলের চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংক খুলনা মোট সাত জন কর্মকর্তাদের নামে গতবছর চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। তবে তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কাউকে চার্জশীটে নাম রাখা হয়নি।
এ ব্যাপারে খুলনা দুদকের আইনজীবী খন্দকার মুজিবর রহমান জানান, চার্জশীটে তাদের কিছু করনীয় নেই। তবে আদলতে চার্জশীট গ্রহণের জন্য এখনও শুনানী হয়নি। 
তিনি জানান, এক ব্যাংকের ঋণ খেলাপি থাকার পরও অন্য ব্যাংকের একই মর্টগেজে ঋণ বিতরণ প্রাথমিকভাবে সঠিক হয়নি। বলেন, বাদী পক্ষের না রাজি দিলে আবার পুনঃতদন্ত হতে পারে।

 

্রিন্ট

আরও সংবদ