খুলনা | মঙ্গলবার | ১৩ মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

ধান কর্তন হয়েছে ৮২ শতাংশ, ঝড়ো হাওয়া ও শিলা বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি

প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত প্রান্তিক কৃষকরা

আল মাহমুদ প্রিন্স |
০১:৪২ এ.এম | ১২ মে ২০২৫


খুলনায় বোরো আবাদের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। এদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে বোরো ধান কর্তনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। মধ্য বৈশাখে ঝড়ো হাওয়া, শিলা বৃষ্টিতে খুলনায় মাঠের পর মাঠ বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। এপ্রিলের প্রথম থেকে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত ৮২ শতাংশ জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। বাকি ১৮ শতাংশ ক্ষেতে শিলার আঘাতে ঝরে পড়া ধান নিয়ে বেড়েছে কৃষকের কষ্ট। মৌসুমের শুরু থেকে রোগ-বালাই, সেচ সংকট না হলেও বোরো আবাদের ওপর কৃষক আশাবাদী ছিল। শেষ মুহূর্তে ঝড়ো হাওয়া ও শিলা বৃষ্টিতে কৃষকের কোটি কোটি টাকার বোরো ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। 
খুলনা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, গত ২৮ এপ্রিল বিকেলে এক ঝলক বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের সাথে ছিল শিলা। এ মৌসুমে এটাই প্রথম বৃষ্টিপাত।  এদিনে ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ধান ক্ষেতে পানি জমে যায়। গত মঙ্গলবার ও বুধবার কৃষি শ্রমিকের মূল্য জনপ্রতি বেড়েছে দুইশ’ টাকা করে। চলতি মৌসুমে গত ২৫ এপ্রিল খুলনা জেলায় ৩৯ ডিগ্রী তাপমাত্রা থাকায় সেদিনও কৃষি শ্রমিকের মজুরি বাড়ে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৬৫ হাজার ৫৩৬ সেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৯৫০ হেক্টর। সূত্রমতে, এবারে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৯৮ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। 
রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের কৃষক মোঃ ওমর আলী শেখের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি এ মৌসুমী ৮ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেন। এতে ধান উৎপাদন হয়েছে প্রায় দুইশ’ মণ। শিলা বৃষ্টির আগে ধান কাটা সম্পন্ন হওয়ায় তিনি ক্ষতির মুখে পড়েননি। 
একই উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের কৃষক মোঃ সাব্বির শেখ বলেন, তিন একর জমিতে বোরো আবাদ করেন। বিঘা প্রতি ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার টাকা। আরও বলেন, এ মৌসুমে বোরোর আশানুরূপ ফলন হলেও কালবৈশাখীর তান্ডবে জমিতে রাখা কাটা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। 
গত সোমবার কালবৈশাখীর তান্ডবে স্ব-স্ব এলাকায় ক্ষতির কথা বলেছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকরা। আবাদের শেষ মুহূর্তে শিলার আঘাতে মাঠে অনেক ধান ঝরেও পড়েছে। খুলনা জেলায় অন্তত ১০ কোটি টাকার ধানের ক্ষতি হয়েছে। 
ডুমুরিয়া উপজেলার আরাজি সাজিয়াড়া গ্রামের কৃষক রফিক সরদার ও রুদাঘরা গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ গাজী বলেন, এ মৌসুমে ডুমুরিয়ায় বোরো আবাদের উৎপাদন বেশি হয়েছে। 
দিঘলিয়ার পানিগাতী ইব্রাহিম মোড়ল বলেন, বোরো আবাদ ভালো হওয়ায় তিনি অল্প জমিতে আবাদ করে প্রায় ৩০ মণ ধান পেয়েছেন। 
দিঘলিয়া গ্রামের কৃষক বাবু মোড়ল বলেন, বোরোর আবাদ ভালো হওয়ায় অল্প জমিতে অনেক ধান উৎপাদন হয়েছে তার। 
একই উপজেলার ব্রহ্মগাতি গ্রামের চাষি হাবিল শেখ ও ওসমান শেখ বলেন, এ মৌসুমে উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।   
বটিয়াঘাটার রায়পুর গ্রামের কৃষক সাহেব আলী শেখ, এক একর জমিতে আবাদ করে তিনি ৮০ মণ ধান পেয়েছেন। তিনি বলেন, মাঝে কালবৈশাখী ঝড়ে জমিতে কাটা ধান শুয়ে পড়েছে। এতে অনেক চাষির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। 
বটিয়াঘাটার সুরখালী গ্রামের কৃষক মোঃ মোশারেফ হোসেন বলেন, এ মৌসুমে এক একর জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় তিনি প্রায় ৯০ মণ ধান পেয়েছেন।  
দাকোপের পানখালী গ্রামের কৃষক মোঃ আমিরুল শেখ বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদি না হয় তাহলে বোরোর বাম্পার ফলন আশা করছেন তিনি। একই গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক শেখ বলেন, বোরো ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। ভালো ফসল ঘরে তুলবেন এমনটা আশা করছেন তিনি। 
পাইকগাছার পুরাইকাটি গ্রামের বাসিন্দা বাবুলাল ঘোষ বলেন, তিনি এ মৌসুমে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। একই উপজেলার মটবাটি গ্রামের বাসিন্দা এস এম বাবুল আক্তার বলেন, তিনি সাড়ে চার বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করে ৯০ মণ ধান ঘরে তুলেছেন। 
তেরখাদার পানতিতা গ্রামের কৃষক মোঃ বেলাল বলেন, বোরো আবাদে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। তবে কালবৈশাখীর তান্ডবে ফসলের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। 
রূপসা উপজেলার কৃষি অফিসার তরুণ কুমার বালা বলেন, ৫ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করে অর্জিত হয়েছে ৬ হাজার হেক্টর। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে অনেক জমিতে ধান গাছ ন্যুয়ে পড়েছে। 
দাকোপ উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় উৎপাদন বেশি হয়েছে। তবে কালবৈশাখী ঝড়ে পাকা ধান গাছ জমিতে ন্যুয়ে পড়লেও তেমন ক্ষতিসাধন হয়নি।  
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার একরামুল হোসেন জানান, এ মৌসুমে ৫ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করে অর্জিত হয়েছে ৫ হাজার ৯৯৫ হেক্টর। তিনি আরও বলেন, পোকা-মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় এ বছর আবাদ ভালো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায় খোঁজ নিয়ে একই কথা জানা যায়। 
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা’র উপ-পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম সময়ের খবরকে বলেন, খুলনা জেলায় বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৯৫০ হেক্টর। এ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জিত হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৩৬ হেক্টর। ইতোমধ্যে ৮২ শতাংশ ধান কর্তন করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলন হিসেবে তিন লক্ষাধিক মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। এ বছর রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড় কম থাকায় বোরো ধানের ফলন বেড়েছে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ