খুলনা | মঙ্গলবার | ১৩ মে ২০২৫ | ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত

খবর প্রতিবেদন |
১১:০৫ পি.এম | ১২ মে ২০২৫


স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের আলোকে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সোমবার (১২ মে) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক শেষে সোয়া ৯টার দিকে ইসি সচিব আখতার আহমেদ এসে সাংবাদিকদের জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের আলোকে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে।

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ সংগঠন ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। তার ধারাবাহিকতায় ইলেকশন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

‘সে অনুযায়ী আমরা গেজেট নোটিফিকেশন জারি করেছি। আপনারা গেজেটের কপি বিজি প্রেস থেকে পেয়ে যাবেন।’

কোন গ্রাউন্ডে এই নিবন্ধন স্থগিত করা হলো জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে প্রজ্ঞাপন তার ধারাবাহিকতায় আমরা এটা করেছি।’

কমিশন সভায় নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আব্দুর রহমানেল মাছউদ উপস্থিত ছিলেন। সভায় নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ, আইন শাখার যুগ্ম সচিব ফারুক আহমেদসহ কর্মকর্তারা আইনি দিকগুলো তুলে ধরেন।

নির্বাচনী আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর ৯০ জ অনুচ্ছেদ দফা ১ (খ) অনুযায়ী সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ দলের নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে এখনো নিষিদ্ধ করা হয়নি, তাদের দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই আপাতত নির্বাচন কমিশনও নিবন্ধন বাতিল না করে স্থগিত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিবন্ধন স্থগিত হওয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ বন্ধ হয়ে গেল।

এর আগে, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। সোমবার বিকেলে সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘যেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এস আর ও নং ১৩৭-আইন/২০২৫, তারিখ ১২ মে ২০২৫ মূলে সরকার সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা-১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোন ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোন ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সেহেতু, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর নিবন্ধন (নম্বর-০০৬ তারিখ: ০৩/১১/২০০৮) এতদ্বারা স্থগিত করল।’

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নির্বাচনমুখী দলগুলোর মাঝে নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। সে বছর ৩ নভেম্বর ছয় নম্বর দল হিসেবে নিবন্ধন পায় দেশের প্রাচীনতম এ দলটি। এর আগে কখনো নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়ার মতো অবস্থায় পড়েনি আওয়ামী লীগ।

এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তী সময়ে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। 
দলগুলো হলো: জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। এবার সরকারের আদেশে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় নির্বাচনে নিজ দলের প্রতীকে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলো ৪৯টি দলের।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ (জ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সরকার কোনো দলকে নিষিদ্ধ করলে ইসির জন্য সেই দলের নিবন্ধন বাতিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ