খুলনা | মঙ্গলবার | ১৩ মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

সংস্কারের অভাবে খসে পড়ছে পলেস্তরা শঙ্কিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা

৬৮ বছরেও পূর্ণতা পায়নি তেরখাদার শ্রীপুর মধুসূদন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি

আল মাহমুদ প্রিন্স |
০২:৩৫ এ.এম | ১৩ মে ২০২৫


আটষট্টি বছরেও পূর্ণতা পায়নি খুলনার তেরখাদার শ্রীপুর মধুসূদন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। উপজেলার আজগড়া ইউনিয়নের মানচিত্রে শ্রীপুর মধুসূদন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি অবস্থিত। ১৯৫৭ সালে স্থাপিত প্রাচীনতম এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ ৬৮ বছরেও পূর্ণতা পায়নি। বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি সংস্কারের অভাবে খসে পড়ছে পলেস্তরা। প্রতিবছর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফলে পিছিয়ে নেই প্রতিষ্ঠানটি। 
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট শিক্ষানুরোগী মধুসূদন নামে ব্যক্তি গ্রামের নামের সাথে তার নামটি সংযোজন করে বিদ্যালয়টির নামকরণ করেন। ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয় শ্রেণীকক্ষে পাঠদান। এলাকায় ছড়িয়ে গড়তে থাকে শিক্ষা বিস্তারের চিত্র। বাড়তে থাকে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা। এলাকায় নিরক্ষরতা দূর করতে বিনা বেতনে বিদ্যালয়ের স্বার্থে একাধিক মেধাবী শিক্ষক/শিক্ষিকা স্বেচ্ছায় পাঠদান দিয়েছেন।  
ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপীঠ থেকে ২০০২ সালে জেএসসি পরীক্ষায় সৌরভ রায় নামে শিক্ষার্থী সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে (এ-প্লাস) প্রতিষ্ঠানের মান উজ্জ্বল করেছেন। এভাবে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর জেএসসি পরীক্ষায় সাধারণ গ্রেডে শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অক্ষুন্ন রেখেছেন। 
২০১২ সালে সাদিয়া নাসরিন, ২০১৩ সালে মেঘলা ঢালী জেএসসি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত হন। ২০১৩ সালে  দোলনা মন্ডল, ২০১৪ সালে সরজিত সরকার, শাওন বিশ্বাস, অলড্রিন বিশ্বাস, ২০১৫ সালের সুবর্ণ চক্রবর্তী, রিপা বিশ্বাস সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্ত হন। ২০১৬ সালে চন্দ্রা বিশ্বাস, সুমন বিশ্বাস ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত হন। ২০১৭ সালে দ্বীপ জ্যোতি বিশ্বাস সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায়। ২০১৮ সালে সেজুতি বিশ্বাস, ২০১৯ সালে জয়িতা চাকলাদার ট্যালেন্টপুলে বৃদ্ধি পায়। ২০১৯ সালে লাবনী বিশ্বাস, অনন্যা বিশ্বাস, ত্রিমিতা মজুমদার, তৃষ্ণা বিশ্বাস, সাথী পাত্র, কলিন্স বিশ্বাস সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়। প্রতিবছর এভাবে জেএসসি পরীক্ষায় এ বিদ্যাপীঠ থেকে সাধারণ গ্রেড ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অব্যাহত রেখেছেন। ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাঁচজন এ-প্লাস পেয়ে এ বিদ্যাপীঠ থেকে শতভাগ পাস করে। 
১৯৫৭ সালে ১ জানুয়ারি ধীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস (বিএ) প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মস্থলে যোগদান করেন। তার সুদক্ষ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠানের শ্রীবৃদ্ধি হতে থাকে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১১ মে পরিতোষ কুমার বিশ্বাস প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মস্থলে যোগদান করেন। 
১৯৫৭ সালে হরেন্দ্রনাথ মজুমদার এ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিদ্যালঢয়টি পরিচালনা করেন। ১৯৬৪ সালে মিহির কুমার বিশ্বাস, ১৯৭০ সালে ডাঃ কালিদাস বিশ্বাস সভাপতি পদে দায়িত্ব পান। ১৯৭৩ সালের চিত্ত রঞ্জন রায়, ১৯৭৬ সালে উপেন্দ্রনাথ সমাজপতি, ১৯৭৯ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ১৯৮৫ সালে মিহির কুমার বিশ্বাস, ১৯৯৪ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ১৯৯৮ সালে ক্ষিতিশ চন্দ্র সমাজপতি, ২০০১ সালে কৃষ্ণ মেনন রায়, ২০০৪ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ২০১০ সালে ডাঃ আনন্দমোহন মন্ডল, ২০১২ সালে কৃষ্ণ মেনন রায়, ২০২৪ সালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সর্বশেষ ২০২৫ সালে আব্দুস সালাম শেখ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পায়। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম শেখের প্রচেষ্টায় এ বিদ্যাপীঠ এগিয়ে চলেছে। 
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম শেখ বলেন, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। খসে পড়ছে পুরাতন ভবনের পলেস্তা। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে পুরাতন এ ভবনটি। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ও দুর্ঘটনা রোধে দ্রæত সময়ের মধ্যে সরকারি বরাদ্দের প্রয়োজন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নতুন ভবন প্রয়োজন। 
প্রধান শিক্ষক পরিতোষ এ প্রতিবেদককে বলেন, পুরাতন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিতে হয়। এতে একদিকে শিক্ষক/শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীরা আতঙ্কের মধ্যে শ্রেণিকক্ষে যেতে হয়। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে নতুন ভবন প্রয়োজন। তিনি বলেন, প্রতিবছর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় এ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা ভালো  রেজাল্ট করে থাকে।

্রিন্ট

আরও সংবদ