খুলনা | বুধবার | ০২ জুলাই ২০২৫ | ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান জরুরি

|
১২:১৩ এ.এম | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনে অন্ধকারাচ্ছন্ন হচ্ছে দেশ-জাতির ভবিষ্যৎ। এ অবস্থা থেকে পরিত্রানের পথ খুঁজতে শুভবোধসম্পন্ন ও দায়িত্বশীল সবার যূথবদ্ধ প্রয়াস জরুরি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাগাতার অভিযানের মুখেও থেমে নেই মাদক বাণিজ্য। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ধারাবাহিক অভিযানে গুলশান, বনানী, রমনা ও ভাটারা এলাকায় কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে ৫ ধনাঢ্য মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৫৬০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস), ১ হাজার ২শ’ পিস ইয়াবা ও ২টি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত আইস ও ইয়াবার বাজারমূল্য কোটি টাকার বেশি বলে জানা গেছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এভাবে প্রায়ই গ্রেফতারের খবর আমরা দেখি। করোনা মহামারীর মধ্যে দেশের সীমান্ত পাহারা এখন অনেকটাই ঢিলেঢালা। এর সুযোগ নিচ্ছে মাদক কারবারিরা। মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে ইয়াবার চালান আসছে। সাগর, পাহাড় আর সড়কপথে নানা কৌশলে পাচার হচ্ছে এ ভয়ঙ্কর নেশার ট্যাবলেট। ভারত থেকে ফেন্সিডিলের চালান পাচার হয়ে আসছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, এখন সবচেয়ে বেশি ইয়াবা আসছে কক্সবাজার এলাকা দিয়ে। এছাড়া রাজশাহী, কুমিল­া, সাতক্ষীরা, যশোর ও সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গাঁজা, ফেন্সিডিল ও হেরোইনের চালান নিয়ে আসছে মাদক কারবারিরা।
মাদক দেশের আইন-শৃঙ্খলার জন্যও মূর্তমান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসা অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য রূপ নিয়েছে। রাজধানী থেকে শুরু করে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এর বিস্তৃত। দেশের এমন কোনো এলাকা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকের থাবা নেই। এই মরণ নেশার বিস্তারে সমাজে একদিকে যেমন অপরাধ বাড়ছে, তেমনিভাবে নষ্ট হচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলা। মাদকের সংক্রমণ, মাদকের ব্যাধি ধীরে ধীরে আমাদের জাতিকে ভেতর থেকে নিঃশেষ করে ফেলার আগেই যদি আমরা একে প্রতিরোধ করতে না পারি, তাহলে বর্তমান প্রজন্ম এবং দেশের ভবিষ্যৎ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। অভিযোগ রয়েছে, থানা পুলিশকে হাত করেই চলছে এই ব্যবসা। এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রাজনীতি-ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও। ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী অনেক ব্যক্তির নাম ইয়াবা গডফাদার হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে, অনেকে আটকও হয়েছেন। অনেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন। এত কিছুর পরও মাদক ব্যবসা-বিস্তার রোধে সরকারের ঘোষিত নানা উদ্যোগ সত্তে¡ও মাদক বাণিজ্যের ভিত নাড়ানো যাচ্ছে না। সমাজপতি, রাজনীতিক, সরকারি কর্মজীবী, পুলিশ সবাই যখন ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েন, তখন মাদক ঠেকানো যাবে কীভাবে? এই প্রশ্ন বারবার সামনে আসছে। দেশের বিরাটসংখ্যক তরুণশক্তি নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখছি, অথচ প্রতিনিয়ত মাদকের নেশায় ধ্বংস হচ্ছে তারুণ্য, জাতির ভবিষ্যৎ। প্রশাসনিক কঠোর অবস্থান, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জনসচেতনতাই পারবে মাদকের শিকড় উপড়ে ফেলে এর বিস্তার ঠেকাতে। সর্বপরি মাদকের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান এই মুহূর্তে জরুরি।

্রিন্ট

আরও সংবদ