খুলনা | শনিবার | ১৭ মে ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নিষিদ্ধ আ’লীগের কার্যক্রম : দেশের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে

|
১২:০৭ এ.এম | ১৪ মে ২০২৫


সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো জুলাই আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জানা যায়, এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রথম কার্যদিবসে অর্থাৎ আজ জারি করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে শনিবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে দলটির বিচার হবে। এ বিচারের আগ পর্যন্ত আ’লীগ এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে যমুনার সামনে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদন। সংশোধনী অনুযায়ী এ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, দলের অঙ্গসংগঠন, সমর্থক সংগঠন বা তার নেতাকর্মীকে শাস্তি দিতে পারবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  
এ সিদ্ধান্তের পর রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনকারীরা আনন্দ মিছিল বের করেন। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতেও দেখা যায়। সরকারকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের তাগিদও আসে। নির্বাচন কমিশনকে দলটির নিবন্ধন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিল এবং ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনারও দাবি জানানো হয়।
আমরা দেখছি, ছাত্র-জনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে সরকার যথাসময়ে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো দল যত ঐতিহ্যময় ও বড়ই হোক না কেন, ফ্যাসিস্টে রূপান্তরিত হলে জনগণ যে তাদের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে, এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তারই প্রতিফলন ঘটল। দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও বিষয়টি থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে বলে মনে করি আমরা। তবে জুলাই অভ্যুত্থানে যারাই গণহত্যায় জড়িত ছিল, তাদের চিহ্নিত করে দ্রুততর সময়ে বিচারের আওতায় আনাই হবে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে অন্যসব বিষয়ের মতো ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকার এ চ্যালেঞ্জও মোকাবিলায় সক্ষম হবে বলেই আশা করি আমরা। চিহ্নিতরা যেন বিচারের আওতা থেকে বের হয়ে যেতে না পারে, সে বিষয়েও সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে।
অবশ্য গণহত্যাকারীদের বিচারের পাশাপাশি দেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে আবার পথে আনতে নির্বাচন আয়োজনের দিকেও সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, একটি নির্বাচিত সরকারই পারে দেশের সামগ্রিক বিশৃঙ্খলা, সমস্যা ও সংকটকে নিয়ন্ত্রণে আনতে। তাছাড়া গণতন্ত্রের স্বার্থেও দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বিকল্প নেই। দেশের স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে সব শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকবে, এটাই প্রত্যাশা।

্রিন্ট

আরও সংবদ