খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৫ মে ২০২৫ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি, বুকে জ্বালা ধরেছে বিজেপি সমর্থকদের

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫৩ এ.এম | ১৪ মে ২০২৫


ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সা¤প্রতিক যুদ্ধবিরতি বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী সমর্থকদের মধ্যে গভীর হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি করেছে। গত ৭ মে পাকিস্তানে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে একপ্রকার পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের সম্ভাবনার সূচনা হলেও, মাত্র ২৪ ঘণ্টার মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। এই আকস্মিক শান্তির বার্তা মোদী সমর্থকদের মধ্যে বিস্ময় ও ক্ষোভের জন্ম দেয়।
গত ৯ মে বিজেপি তাদের অফিসিয়াল এক্স (পূর্বে টুইটার) এ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিমান বাহিনীর ইউনিফর্ম পরা একটি ছবি পোস্ট করে লেখে, যাচনা ন্যাহি, আব রণ হোগ্যা’। এর আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায়, ‘অনুরোধ নয়, এবার যুদ্ধ হবে’। অথচ এর কিছু সময় পরেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে, যা কট্টর হিন্দত্ববাদীদের হতবাক করে দেয়। এ ঘোষণায় তারা চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
হিন্দুত্ববাদী কর্মী, সরকারপন্থি সংবাদমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, এমনকি বিজেপি নেতারাও নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, শক্তিমত্তার দিকে এগিয়ে থেকেও যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানের কাছে আত্মসমর্পণ করে নিয়েছে। এই ক্ষোভের সম্ভাব্য কিছু কারণ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
যুদ্ধ থেকে পিছু হটা
বিজেপির ঘনিষ্ঠ সমর্থক ও লেখিকা শেফালি বৈদ্য এক্সে লিখেছেন, এটা যেন নাটকের মাঝখানে পর্দা নামিয়ে দেওয়ার মতো, যখন আমরা এগিয়ে ছিলাম। যদিও তিনি দেশের নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে আস্থা রাখেন বলেও জানান।
তবে অনেকে সরাসরি মোদী সরকারের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিজেপির ছাত্র সংগঠনের নেতা শক্তি সিং লিখেছেন, যতদিন দাউদ ইব্রাহিম ও হাফিজ সাঈদের মতো সন্ত্রাসীরা বেঁচে আছেন, ততদিন যুদ্ধবিরতির কোনো মানে নেই।
অসমের গৌহাটির ব্যবসায়ী ও বিজেপি নেতা মুন তালুকদার বলেন, ভারতের উচিত ছিল পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (পিওকে) দখল করা। যুদ্ধবিরতি না হলে আমরা বিশ্বের সামনে শক্তিশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতাম।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ : যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় মোদি সমর্থকদের সবচেয়ে বড় আপত্তি হলো এতে যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা। ট্রাম্প নিজেই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন এবং পরে কাশ্মীর সমস্যা নিয়েও ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার কথা বলেন।
বিজেপির জাতীয় নির্বাহী সদস্য ও বিশিষ্ট সাংবাদিক স্বপন দাশগুপ্ত এক্সে লেখেন, এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণাটা যেন হঠাৎই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসে দিয়ে দিলেন। এটা অনেক ভারতীয়র কাছে অপমানজনক মনে হয়েছে।
রিপাবলিক মিডিয়ার প্রধান সম্পাদক অর্ণব গোস্বামী বলেন, ট্রাম্পের কোনো ধারণা নেই এখানে কী ঘটছে। আমি মনে করি, এটা (কাশ্মীর বিষয়) তার আয়ত্তের বাইরে। এটা ট্রাম্পের স্বভাবসুলভ অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ। আমি এটা মানি না। আমরা এটা মিটমাট করব।
পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ওপর ক্ষোভ : মোদি সরকার আগের আগ্রাসী অবস্থান থেকে সরে এসেছে বলে যারা মনে করছেন, তাদের অনেকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ওপরও ক্ষোভ ঝাড়তে ভুল করেননি না। তিনি ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন করে আসছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা মিশ্রির পুরোনো পারিবারিক ছবি এবং তার মেয়ের পেশাগত জীবনের বিবরণ ছড়িয়ে দেন। তার মেয়ের সম্ভাব্য রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিদ্রুপ ও কটাক্ষ শুরু করেন। এসব আচরণ এতটায় ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে মিশ্রি তার এক্স প্রোফাইলের গোপনীয়তা সেটিংস পরিবর্তন করতে বাধ্য হন।
‘পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা উচিত’ : এই ক্ষোভের মূলে রয়েছে একটাই চাওয়া- ‘চূড়ান্ত সমাধান’। পশ্চিমবঙ্গের পাসচিম বঙ্গ ছাত্র সমাজের সমন্বয়কারী ও আরএসএসের ঘনিষ্ঠ কর্মী সায়ন লাহিড়ী বলেন, দেশপ্রেমিক সনাতনী হিন্দুরা একটা বিষয়ই চেয়েছিল, তা হলো- জিহাদবাদের সমূলে ধ্বংস। পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা।
আরএসএসের এক সদস্য বলেন, আমরা আমাদের পুরো শক্তি ব্যবহার করতে পারতাম। এই যুদ্ধবিরতি আমাদের থামিয়ে দিয়েছে, কিন্তু এই মন আরও চায়।
যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত সীমান্তবর্তী অঞ্চলে স্বস্তি আনলেও, বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী সমর্থকদের মধ্যে এটা একপ্রকার হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের কাছে এটি মোদী সরকারের শক্তিশালী অবস্থান থেকে পিছু হটার প্রতিচ্ছবি। এখন প্রশ্ন হলো, এই অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে মোদী সরকার ভবিষ্যতে কীভাবে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও অভ্যন্তরীণ ‘জাতীয়তাবাদী’ প্রত্যাশার মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করবে। 
সূত্র: স্ক্রল ডট ইন।

্রিন্ট

আরও সংবদ