খুলনা | শুক্রবার | ১৬ মে ২০২৫ | ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যার বিচার দাবি

ঢাবিতে বিক্ষোভ ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫৮ এ.এম | ১৬ মে ২০২৫


রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রদল ও বাম াত্র সংগঠণগুলো।  
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। এ সময় ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের কালো ব্যাজ ধারণ করে কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। কর্মসূচিতে ঢাবি ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও সংগঠনটির ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
এ সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ‘আমাদের অঙ্গীকার, নিরাপদ ক্যাম্পাস’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘ফাঁসি ফাঁসি চাই, হত্যাকারীর ফাঁসি চাই’, ‘খুন হয়েছে আমার ভাই, খুনি তোদের রক্ষা নাই’, ‘সাম্য ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেত দেব না’, ‘ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে’ ইত্যাদি শ্লোগান দেন।
এদিকে সাম্য হত্যার কারণে বুধবার অর্ধবেলা শোক পালনের ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার স্থগিত থাকে সকল ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা। পরে তা আরো বাড়িয়ে পূর্ণ বেলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাম্য হত্যার ঘটনায় পূর্ণদিবস ধর্মঘট পালন করছে ঢাবি ছাত্রদল। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও কলা অনুষদের মূল গেটে তালা দিয়েছে শাখা সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।  
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘যারা ছাত্রলীগের ছায়াতলে থেকে তাদের সঙ্গে নির্যাতনে শরিক হয়েছে, তারা ৫ আগস্ট পরবর্তী তাদের গুপ্ত রাজনীতি জারি রেখেছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে একাধিকবার বললেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেন নাই। এ কারণেই সাম্য হত্যাকান্ড হয়েছে। সাম্যের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ভিসি যে বালখিল্য আচরণ করেছেন, তারপরে তিনি আর ভিসি থাকতে পারেন না।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘নিরাপদ ক্যাম্পাসে অনেকগুলো দাবি রয়েছে, সেগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মনোযোগ রয়েছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন আমাদের। আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আর কোনো শিক্ষার্থী যেন অনাকাঙ্খিত ঘটনার শিকার না হয়, সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। সাম্যের হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা : শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনগুলোতে তালা ঝুলিয়েছে ছাত্রদল ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। বৃহস্পতিবার দুপুর একটায় নাগাদ রেজিস্ট্রার ভবন ও কলাভবনে সবাইকে বের করে তালা মেরে দেন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
জানা যায়, ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে দুপুর একটার দিকে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে ছাত্রদল ও বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রত্যকে রুমে রুমে গিয়ে বের হয়ে আসতে বলে। এ সময় বাধ্য হয়ে ভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বেরিয়ে যান। তবে সেসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ভবনে ছিলেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসময় এক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে দুপুর একটা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিলো। তবে অফিসিয়াল কার্যক্রম চালু ছিলো। দুপুরে দিকে কতিপয় ছেলে এসে সবাইকে জোর করে বের হয়ে যেতে বলেন। এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন বলেও জানান তিনি।
তালা মারা ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের বের করে দেওয়ার ঘটনায় সেসময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ধর্ম সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সরকার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মেহেদী হাসান, ক্রীড়া সম্পাদক সাইফ উল­াহ সাইফ, কবি জসীম উদ্দিন হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভীর বারী হামিম, সূর্য সেন হলের প্রচার সম্পাদক প্রান্ত মাহমুদ, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সংগঠক সীমা আক্তারসহ আরো অনেকেই ছিলেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিএম কাওসার বলেন, সাম্য রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় মৃত্যুর দু’দিন পরে শোক দিবস পালন করছে। মৃত্যুর একদিন পর ক্লাস পরীক্ষা চলে। এমনকি ক্রিকেট খেলাও হয়েছে। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ্যাকাডেমিক ভবনসহ প্রশাসনিক ভবন গুলোতে তালা দিয়েছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুন্সী শামস উদ্দিন আহম্মদ বৃহস্পতিবার বলেন দুপুরে একদল শিক্ষার্থী (ছাত্রদল ও বাম) রুমে রুমে গিয়ে বলেন, ২ মিনিটের মধ্যে রুম থেকে বের হন। পরে ভবনের সবাই বাধ্য হয়ে বের হয়ে যান।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে। তাদের দাবি সাম্যের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যেন দ্রুত বিচার হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও একই দাবি। সুতরাং, দাবি কেন্দ্রীক কোনো পার্থক্য নাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের বিষয়টি পরে সংশ্লিষ্ট ডিনদের সাথে আলাপ করে দিনের দ্বিতীয়ার্ধের ক্লাস-পরীক্ষাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ড. সাময়া হক বিদিশা আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও মূলত পুরো দিনই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিলো।
 

্রিন্ট

আরও সংবদ