খুলনা | শনিবার | ১৭ মে ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

লুণ্ঠনের এক কলঙ্কিত অধ্যায় কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে

|
১২:০৭ এ.এম | ১৭ মে ২০২৫


আওয়ামী লীগের গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা শাসনামলে দেশে যেন এক লুটেরাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গণমাধ্যমে ক্রমাগতভাবে উঠে আসছে সেই সব লুটপাটের চিত্র। এমনই এক ভয়ানক চিত্র উঠে এসেছে গনমাধ্যমের বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে। ‘আওয়ামী লুণ্ঠনের চিত্র : দরবেশ বাবা ও ৪০ চোরের লুটপাট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে গত দেড় দশকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার ও নজিরবিহীন দুর্নীতির এক ভয়াবহ চিত্র প্রকাশিত হয়েছে।আরব্য রজনীর আলিবাবা ও চলি­শ চোরের গল্পের সঙ্গে এই সময়ের আলিবাবাদের অপূর্ব মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ কিভাবে একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিদেশে পাচার করেছে, তা এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে। এই ধরনের ব্যাপক দুর্নীতি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে বাংলাদেশের অর্থনীতির হালহকিকত গভীর ভাবে পর্যালোচনা করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দাবি করেছেন যে হাসিনার শাসনামলের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ‘চামচা পুঁজিবাদ’ থেকে সরাসরি ‘চোরতন্ত্রে’ রূপান্তরিত হয়েছে। প্রতিবেদনে সেই চোরতন্ত্রের একটি ঠিকুজি প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘দরবেশ বাবা’ হিসেবে খ্যাত সালমান এফ রহমানের ছত্রচ্ছায়ায় ৪০ জন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৭টি দেশে পাচার করা হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। এই লুণ্ঠনযজ্ঞে শুধু রাজনীতিবিদরাই নন, বরং অন্তত ৫০০ মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন বলে প্রতিবেদনে উলে­খ করা হয়েছে।
এই দরবেশ বাবা অর্থাৎ সালমান এফ রহমান শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতা হিসেবেও পরিচিত। এই ব্যক্তি একাই এক লাখ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ। তাঁর নেতৃত্বেই একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল, যেখানে ৪০ জন চিহ্নিত ‘চোর’ বিভিন্ন ভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন ও বিদেশে পাচার করেছেন। এই তালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী সদস্য এবং উচ্চপদস্থ আমলারাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
প্রতিবেদনে যাঁদের নাম উঠে এসেছে, তাঁদের মধ্যে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তারিক সিদ্দিক, শেখ হেলাল, শেখ সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আ হ ম মুস্তফা কামাল, নসরুল হামিদ বিপু, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছেন। আছে সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ড. আহমদ কায়কাউস, কবির বিন আনোয়ার, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মতো উচ্চপদস্থ আমলাদের নামও।
দুর্নীতি দমন কমিশন এবং অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা এই প্রতিবেদনের তথ্যগুলো আমলে নিয়ে তদন্ত করে দেখতে পারে। আমরা চাই, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

্রিন্ট

আরও সংবদ