খুলনা | রবিবার | ১৮ মে ২০২৫ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঋণের শর্তে শঙ্কায় অর্থনীতি

|
১২:২১ এ.এম | ১৮ মে ২০২৫


অব্যাহত মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের মানুষ এমনিতেই দুর্ভোগে। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বাস্তবায়নের ফলে মূল্যস্ফীতির হারে ফের চাপ বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুক্রবার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ-সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের শর্ত মানতে গিয়ে ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে ডলারের দাম বেড়ে যাবে, কমবে টাকার মান। ঋণের সুদের হারও বাড়বে, ফলে কমবে টাকার প্রবাহ। একদিকে বেসরকারি খাতে ঋণের জোগানও কমবে, অন্যদিকে ব্যবসার খরচ বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাবে বাড়বে পণ্যের দাম। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমাতে হলে দাম বাড়াতে হবে। ফলে সব পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কারণে মূল্যস্ফীতির হার আবার বেড়ে যেতে পারে।
বৈশ্বিক মন্দার কারণে ২০২২ সালের মার্চ থেকে দেশে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে থাকে। ওই বছরের আগস্টে তা বেড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। গত বছরের জুলাই পর্যন্ত তা বেড়ে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠে। এমনকি ওই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। অবশ্য গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে এ হার গত এপ্রিলে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে কঠোর মুদ্রানীতির কারণে সুদের হার বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ কম হওয়ায় বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের গতি কমে গেছে। এতে বেকারদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সরকারের পক্ষ থেকে নানা তৎপরতা থাকলেও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ তলানিতেই রয়েছে। এখনো পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আসেনি, সহায়তার আশ্বাস মিললেও মেলেনি অর্থ। ফলে আইএমএফই ভরসা। কিন্তু সংস্থাটির শর্ত মানতে গিয়ে সরকারকে নিতে হচ্ছে কঠোর পদক্ষেপ, যা জনগণের জীবনযাত্রাকে সংকটেই রেখেছে। আমরা দেখছি, দেশে বিদ্যমান অস্থিরতা, উচ্চ সুদহার এবং ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে বেসরকারি খাত ঋণ পাচ্ছে না। গ্যাস সংকটে অনেক প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনও গেছে থমকে। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি বেসরকারি খাত নানামুখী সংকটে নিমজ্জিত হওয়ায় কর্মসংস্থানেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। ফলে বেকারত্ব বাড়ছে, বাজারে অর্থের প্রবাহও কমছে। তার ওপর সরকারকে ব্যয় নিয়ন্ত্রণের জন্য আইএমএফের ঋণের যে শর্ত, তা বাস্তবায়ন করতে গেলে শুধু বেসরকারি খাতই মুখ থুবড়ে পড়বে না, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেলে নি¤œমধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনও সংকটে পড়বে। পাশাপাশি শর্তমাফিক সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ব্যয় কমালে স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট যে আরও বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য। বিদ্যুতের দাম আগেও কয়েক দফা বেড়েছে, আইএমএফের শর্ত মানতে গেলে স্বভাবতই তা আরও বাড়বে।
অবশ্য আইএমএফের বেশকিছু ভালো পরামর্শও রয়েছে, যেগুলোর বাস্তবায়ন হলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের কেন শুধু আইএমএফের ঋণের মুখাপেক্ষী হতে হবে? জনগণের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে, এমন কোনো শর্ত বাস্তবায়ন করা কাক্সিক্ষত নয়। এজন্য সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে, কীভাবে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করে ঋণের মুখাপেক্ষী না হয়ে জনগণের জীবনযাত্রা সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়।

্রিন্ট

আরও সংবদ