খুলনা | মঙ্গলবার | ২০ মে ২০২৫ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে সালাহউদ্দিন আহমেদ : অন্তর্বর্তী সরকারে এনসিপি ও ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে

জরুরি সংস্কার করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন দিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৩৫ এ.এম | ১৮ মে ২০২৫


অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আপনি কি চান নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিধাদ্ব›দ্ব সৃষ্টি হোক? এ দেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক? হুঁশিয়ার করে দিতে চাই প্রফেসর ড. ইউনূস সাহেব, আপনি বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব, সম্মানিতজন। আপনি সম্মানের সঙ্গে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন ডিসেম্বরের মধ্যে। যে কথা আপনি আমাদের দিয়েছিলেন। সংস্কার এবং বিচার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেটি চালু থাকবে, যারাই সরকারে আসুক। অনন্তকাল ধরে আপনি বিচার এবং সংস্কারের বাহানা দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কণ্টকাকীর্ণ করবেন না।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, বিচার ও সংস্কারের নামে অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা সম্মানজনক হবে না। এ দেশের মানুষ সেটি মেনে নেবে না। এই সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট স্বচ্ছ নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছিলাম, নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। আপনি সেটি গ্রহণ করেছিলেন। আবার সেখান থেকে সরে গেছেন।   
শনিবার খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। বিএনপি’র অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী সমাবেশে যোগ দেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, কিন্তু মনে করবেন না রোজ কিয়ামত পর্যন্ত আপনাদেরকে আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইতো। ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, ‘আপনার সরকারকে লোকজন বলছে এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির দুই জন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা এবং এনসিপি সংগঠন করে। আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান, তাদের এনসিপি মার্কা দুইজনকে পদত্যাগ করতে বলুন। পদত্যাগ না করলে আপনি বিদায় করুন। আপনার কেবিনেটে আরও কিছু উপদেষ্টা আছে, তারা ফ্যাসিস্টদের দোসর এবং কিছু এনজিও প্রতিনিধি আছে, তারা দেশে নির্বাচন দিতে চায় না। তাদেরকে পদত্যাগ করতে বলুন। অন্যথায় আপনি তাদের বিদায় করুন। আপনার দায়িত্ব শুধুমাত্র নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু এখন দেখছি আপনি কথিত মানবিক করিডোর দিতে চাচ্ছেন। দেশের নৌ ও স্থল বন্দর বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে চাচ্ছেন। অথচ এই ম্যান্ডেট এদেশের জনগণ আপনাকে দেয়নি। আপনি জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, কিন্তু রাজনৈতিকদল গুলোর সঙ্গে আলোচনা করলেন না এবং তাদের পরামর্শ গ্রহণ করলেন না। 
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আপনার সরকারে একজন বিদেশী নাগরিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। আপনার কি সেই আক্কেলজ্ঞান নেই। তিনি বলেন, একজন বিদেশী নাগরিকের কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী কিভাবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রদান করবে। তিনি রোহিঙ্গা, মানবিক করিডোরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বিদায় করুন। একজন বিদেশি নাগরিকের হাতে জাতীয় নিরাপত্তা কতোটুকু নিরাপদ থাকবে সেটি এখন বড়ো প্রশ্ন। ওই উপদেষ্টা ইতোমধ্যে বলেছেন, ‘কে কি বললো তাতে কিছু যায় আসে না’। 
তিনি আরও বলেন, এদেশের মানুষ যদি নির্বাচনের জন্য যমুনা অভিমুখে লং মার্চ করে, সেটি হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্য। এদেশের জনগণ নির্বাচনের জন্য যমুনা অভিমুখে লং মার্চ সেটি কাম্য নয় আমরা সব সময়ই বলেছি নির্বাচন ও সংস্কার কাজ এক সঙ্গে চলবে। নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার পূর্বের সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ তারুণ্যের উদ্দেশ্যে বলেন, গত জুলাই মাসে তারুণ্যের রক্তভেজা রাজপথের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। কিন্তু সেই কাক্সিক্ষত গণতন্ত্রের মুক্তি মেলেনি। এ দেশের মানুষ গত ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি। তাই মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র গঠন করার জন্য তরুণ সমাজকে অ্যাম্বেসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
জনাব সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ার পর বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে দেশের অর্থ লুটপাট, পাচার এবং ব্যাংকিং সেক্টরে ডাকাতির বিষয় একটি কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছেন। সেখানে উলে­খ করা হয়েছে গত ১৫ বছরে ৪ লাখ কোটি টাকার খেলাপী ঋণ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো দেইলিয়া হয়ে গেছে। সে অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। যা দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু করা যেতো। আওয়ামী সরকার নিজেদের লো দের লোন দিয়ে প্রতিবছরে ২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। যা গত ১৫ বছরে সাড়ে ২৯ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
তিনি পতিত শেখ হাসিনাকে বিশ্ব খুনী আখ্যায়িত করে বলেন, শেখ হাসিনা একজন বিশ্ব খুনী। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের তদন্ত রিপোর্টে প্রায় ১৪শ’ লোককে হত্যা করার অভিযোগ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা খুনের রাজনীতির ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আ’লীগের ইতিহাস গণতন্ত্রকে সাংবিধানিক ভাবে হত্যা করার ইতিহাস। ১৯৭৫ সালে আ’লীগ সাংবিধানিক ভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। এতো কিছুর পরও আ’লীগের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। বরং দিলি­তে বসে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বিষাদগার করে চলেছে। আ’লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে আ’লীগের কর্মের মাধ্যমে। আর তার দাফন হয়েছে দিলি­তে। আ’লীগ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশে প্রায় ৭ হাজার মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। এছাড়া গুম, খুন চালিয়ে বিরোধী মতের মানুষকে নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে। তাই আ’লীগ নিজেরাই নিজেদের অপসারণ করেছে।  
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় যাদের বয়স ১৮ বছর ছিল তারা কেউই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন সালাহাউদ্দিন আহমেদ। বলেন, চার থেকে সাড়ে চার কোটি ভোটার কেউই গণতন্ত্রের স্বাদ পাননি। শেখ হাসিনা খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল। জতিসংঘের রিপোর্ট বলছে, আন্দোলন দমন করতে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে ১৪০০ ছাত্র জনতাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এই গণহত্যা চালিয়েও আওয়ামী লীগের ভেতরে কোন অনুশোচনা নেই। আওয়ামী শাসনামলে লুটপাট, অর্থ পাচার ও দুর্ণীতির নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, এগুলো আমার তথ্য না, এগুলো দুর্নীতি সংক্রান্ত শে^তপত্র কমিটি প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়, আর দাফন হয়েছে দিলি­তে। বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং আজকের তরুণ ছাত্র যুবককে সেই ৩১ দফার এ্যাম্বাসেডর হওয়ার আহŸান জানান তিনি। বিএনপি’র অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিপুল সংখ্যক তরুণ নেতা-কর্মী সমাবেশে যোগ দেন।  
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা বক্তৃতা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের সঞ্চালনায় বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা বিল­াল হোসেন, রবিউল ইসলাম রবিন ও বাগেরহাট জেলার শহিদ তানু ভূঁইয়ার স্ত্রী কানিজ ফাতিমা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্তু কুমার কুণ্ডু, কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন, খুলনা মহানগর বিএনপি’র সভাপতি এড. শফিকুল আলম মনা, জেলা আহবায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, মাহনগর সাধারণ সম্পাদত শফিকুল আলম তুহিন, সাবেক এমপি সৈয়দা নার্গিস আলী, সাংবাদিক নেতা আমিরুল ইসলাম কাগজী, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আমিরুল ইসলাম শিমুল বরিশাল বিএনপি নেতা আব্দুল কুদ্দুস, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মলি­ক, বিএনপি নেতা ডাঃ শহিদুল আলম, এড. সাবেরুল হক সাবু, দেলোয়ার হোসেন খোকন, মাহবুবুল হক নান্নু, আবুল হোসেন খানসহ খুলনা-বরিশাল বিভাগের বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে প্রধান বক্তা যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, বাংলাদেশের রাজপথ কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। আমরা দেখছি, শুনছি, সময় হলে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে। আমাদের তারণ্যের শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামলে তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই তরুণ সমাজ একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্র গঠনের আগে ঘরে ফিরে যাবে না।
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানি বলেন, মে মাসের মধ্যে জাতয়ি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় যুব সমাজ সকল ষড়যন্ত্র তছনছ করে তাদের অধিকার আদায় করে নিবে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ