খুলনা | মঙ্গলবার | ২০ মে ২০২৫ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এনবিআর বিলুুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল চান রাজস্ব কর্মকর্তারা

কলম বিরতিতে খুলনা কর অঞ্চলে সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৪৫ এ.এম | ১৮ মে ২০২৫


এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিনের কলম বিরতি পালন করছেন খুলনা কর অঞ্চলের আওতাধীন বিভাগের ২৭টি আয়কর অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি বিঘিœত হচ্ছে কর সেবা কার্যক্রম। আর সেবা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন করদাতারা। গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচির তৃতীয় দিন ছিল শনিবার। অনতি বিলম্বে এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বালিত চান রাজস্ব কর্মকর্তারা। 
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার সকল অফিস আদালত খোলা ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় খুলনা কর অঞ্চলের সকল দপ্তর খোলা থাকলেও কোন সেবা প্রদান করা হয়নি এদিন। সেবা নিতে আসা অসংখ্য মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে ফিরে  গেছেন। তারা সকলেই এই অচল অবস্থার নিরসন চান। 
খুলনা কর অঞ্চলের সদর দপ্তরে সেবা নিতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক তিনি জানান, গত বুধবার থেকে তিনি তার ব্যবসার প্রয়োজনে আয়কর অফিসে আসছেন। কিন্তু কর্মকর্তাদের কলম বিরতি কর্মসূচি থাকায় তিনি তার কাজ করতে পারছেন না। এতে তার ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র বিভিন্ন দপ্তরে জমা দিতে অসুবিধে হচ্ছে। এই অচল অবস্থা দ্রুত নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরও জানান, আয়কর সার্টিফিকেট ও রিটার্নের সত্যায়িত কপি ব্যাংকে জমা দেওয়া প্রয়োজন হলেও তা তিনি খুলনা কর অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারছেন না। 
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে বুধ ও বৃহস্পতিবারের মত শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কলম বিরতি পালন করেছে খুলনা অঞ্চলের কর কমিশনার, ৪টি রেঞ্জ ও ২২টি সার্কেল অফিসের ১৬২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। 
কলম বিরতি চলাকালে দুপুরে খুলনা কর কমিশনার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের সঙ্গে সংহতি জানান খুলনার আয়কর আইনজীবীরা।  
এ সময় উপস্থিত ছিলেন খুলনা কর কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত কর কমিশনার আরিফুল হক, যুগ্ম-কর কমিশনার মোঃ রাউফুর রহমান, উপ-কর কমিশনার মোঃ মাহবুবুর রহমান, উপ-কর কমিশনার মোসা. জেসমিন আক্তার, উপ-কর কমিশনার দেলোয়ারা জাহান, উপ-কর কমিশনার নুসরাত ফারজানাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।  
খুলনা কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি খান মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা অনতি বিলম্বে এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল চাই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে টিকিয়ে রেখে যেকোন সংস্কার আমরা মেনে নেব। আমরা ট্যাক্সের উর্ধ্বমুখি সংস্কার চাই। যাতে জনগণের কষ্ট কম হয়, রাজস্ব বোর্ডের সাথে সম্পৃক্ত সকলের মতামতের প্রাধান্য পায়। সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে রাজস্ব ব্যবস্থায় টেকসই রাজস্ব নীতি প্রণয়ন, রাজস্ব বিষয়ক প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন, আধুনিকায়ন ও অটোমেশন প্রয়োজন। তবে এটি সকল অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে হতে হবে। রাতের আঁধারে বা গোপনে করা হলে চলবে না। 
উপ-কর কমিশনার নুসরাত ফারজানা জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটি ঐতিহ্যবাহী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি বছর যার আদায়ের গড় প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ। একটি দ্বা›িদ্বক ও সাংঘর্ষিক প্রক্রিয়ায় সেটিকে বিলুপ্ত করে আগামীতে কর নীতি বাস্তবায়ন ও সরকারের রাজস্ব আহরণ কতটুকু সাফল্যমন্ডিত হবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়! সকল অংশীজনকে বাইরে রেখে এনবিআর সংস্কার রাষ্ট্রের জন্য অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা চাই প্রণীত অধ্যাদেশ বাতিল পূর্বক একটা টেকসই সংস্কার যেখানে সকল অংশীজনের মতামতের প্রতিফলন থাকবে এবং কোন গোষ্ঠী স্বার্থ সেখানে রাষ্ট্রের স্বার্থের উপরে প্রাধান্য পাবে না। একটা টেকসই সংস্কার যেখানে সকল অংশীজনের মতামতের প্রতিফলন থাকবে এবং কোন গোষ্ঠী স্বার্থ সেখানে রাষ্ট্রের স্বার্থের উপরে প্রাধান্য পাবে না। 
উপ-কর কমিশনার মিজ দেলোয়ারা জাহান জানান, টেকসই রাজস্ব সংস্কার নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই রাজস্ব বোর্ডেরর মত একটি অতি টেকনিক্যাল ও পেশাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সকল পদে এমন ব্যক্তিবর্গকে নিয়োগ দিতে হবে যাদের রাজস্ব বিষয়ক বিভিন্ন আইন-কানুন, বিধি-বিধান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান এবং বাস্তবভিত্তিক অভিজ্ঞতা আছে। এ বিষয়ে কোনো জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই যাদের তারা পদায়িত হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতি কমার বদলে আরো বাড়বে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রিতা আসবে সর্বপরি সামগ্রিক রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হবে। তাই দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, রাজস্বের স্বার্থে আমাদের দাবী প্রণীত বিতর্কিত রাজস্ব অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করা হোক।
অতিরিক্ত কর কমিশনার আরিফুল হক বলেন, খুলনা কর অঞ্চলের আওতাধীন সকল দপ্তরে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তিন দিনের কর্মসূচির আজ শনিবার ছিল ৩য় দিন। এই তিন দিন আমরা কলম বিরতি চলাকালে কোনো দাপ্তরিক কাজে অংশ নেইনি। এতে করসেবা কার্যক্রম বিঘিœত হয়েছে, তবে করাদাতাদের সাময়িক এই কষ্টের জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ পরবর্তিতে যে কর্মসূচি ঘোষণা করবে সেই কর্মসূচিও আমরা একইভাবে পালন করবো। 
 

্রিন্ট

আরও সংবদ