খুলনা | সোমবার | ১৯ মে ২০২৫ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঘটনা ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আহত যুবলীগ নেতা পেলেন জুলাই যোদ্ধা অনুদান!

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:১০ এ.এম | ১৯ মে ২০২৫


ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে গিয়ে আহত তেরখাদার যুবলীগ নেতা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে অনুদান পেয়েছেন। গত ১৪ মে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আহত জুলাই যোদ্ধা হিসেবে ‘সি ক্যাটাগরিতে’ এক লাখ টাকার চেক গ্রহণ করে ওই যুবলীগ নেতা মিনারুল ইসলাম। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমারকে আহবায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগরিই অনুদান ফেরত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। অন্যদিকে যুবলীগ নেতার অনুদান নেওয়ার ঘটনায় টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে গতকাল। স্যোশাল মিডিয়াতেও নানা মন্তব্য করেছেন নানা পেশার মানুষ। তারা বলছেন এখনও সর্ষ্যরে ভিতরে ভুত।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা মিনারুল ইসলাম খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। গত বছরের ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে খুলনায় নগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেত-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় কার্যালয় থেকে পালাতে গিয়ে আহত হয় মিনারুল। তার চেক প্রাপ্তির ছবি ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সূত্রে থেকে জানা গেছে, আহত জুলাই যোদ্ধা সি ক্যাটাগরিতে খুলনায় ৬৩ জনের নামে চেক এসেছে। তাদের মধ্যে ৫০ জন এক লাখ টাকার চেক নিয়েছেন। গত ১৪ মে খুলনার জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের হাত থেকে চেক গ্রহণ করেন মিনারুল। 
খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মন্ডল জানান, উপজেলা পর্যায়ে আবেদন করলে জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র প্রতিনিধি, হাসপাতালসহ বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করে পুলিশ। পরে জেলা কমিটির সভায় আরেক দফা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মিনারুল নামের ব্যক্তি সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। মন্ত্রণালয় থেকে তার আবেদন যাচাই-বাছাই করে গেজেট প্রকাশ করে চেক খুলনায় পাঠিয়েছে। এজন্য তার আবেদনের বিষয়ে খুলনায় কোনো তথ্য নেই। 
তিনি বলেন, কেউ যদি তার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে সেটি যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। তখন গেজেট থেকে নাম বাদ দেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সময়ের খবরকে বলেন, ‘অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশ পেলেই অনুদানের অর্থ ফেরত নেয়া হবে। প্রকৃতপক্ষে অভিযুক্ত মিনারুল ইসলামের নামটি মন্ত্রণালয় থেকে এসেছিল; জেলা প্রশাসনের কিছুই করার ছিল না।’
তিনি আরও জানান, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৭ সদস্য বিশিষ্ট নন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত তদন্ত কমিটিতে আহবায়ক হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), সদস্য হিসেবে পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, ইউএনও (তেরখাদা), দু’জন ছাত্র প্রতিনিধি ও সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা)। সাত কার্যদিবসের মধ্যে এ তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন। এ প্রতিবেদন জেলা পর্যায়ের যাচাই-বাছাই কমিটির সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পূর্বক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে।
তেরখাদা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এফ এম মফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মিনারুল ইসলাম। ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। জুলাই আন্দোলনের সময় সে মধুপুরের বাড়িতেই ছিল। ৪ আগস্ট খুলনায় দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশে যোগ দিতে যায়। সেখানে পালাতে গিয়ে টিনের চালে ঝাপ দিলে পায়ে কী সমস্যা হয়েছে বলে শুনেছিলাম।
গত বছর ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ছিলেন খুলনা জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আ’লীগের যুগ্ম-সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল। আত্মগোপনে থাকা জামালের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘৪ আগস্ট মিনারুল আমাদের সঙ্গেই ছিল। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে সে কার্যালয় থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই।’ 
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা মিনারুল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল করলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত্ব, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহত ছাত্রজনতা যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত জেলা কমিটিতে ২০৯ জনের তালিকা উপস্থাপিত হয়। এ তালিকার ১৩নং ক্রমিকে মিনারুল ইসলাম (২৪) আন্দোলন চলাকালীন খুলনা মেডিকেল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন মর্মে উলে­খ পাওয়া যায়। খুলনা মেডিকেল কর্তৃপক্ষও চিকিৎসা গ্রহনের বিষয়টি নিশ্চিত করে। অতঃপর সংশ্লিষ্ট  মন্ত্রণালয় থেকে আহতদের নামে প্রাপ্ত চেক যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অন্যান্যদের সাথে মিনারুল ইসলামকেও প্রদান করা হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ