খুলনা | সোমবার | ১৯ মে ২০২৫ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘এবারের বাজেট দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়’ : ‘শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হবে’

আসন্ন উন্নয়ন বাজেটে বাড়ানো যায়নি স্বাস্থ্যখাতে : পরিকল্পনা উপদেষ্টা

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৯ এ.এম | ১৯ মে ২০২৫


আসছে বাজেটে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। রোববার শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে তিনি এই কথা জানান।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আমি যদি সংশোধিত বাজেটের সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনা করি; তাহলে কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটের আকার সংশোধিত চলতি বাজেটের আকারের চেয়ে বড় হবে। প্রায় সব খাতেই সংশোধিত বাজেট থেকে প্রস্তাবিত বাজেটের বরাদ্দ, উন্নয়ন বাজেটও একটু বেশি। খুব সম্ভবত শিক্ষাখাতে সবচেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, উন্নয়ন বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে অতটা বাড়ানো যায়নি। কারণ স্বাস্থ্যের সমস্যাটা ছিলো, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনেক অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো কোথাও চালু নেই, কোথাও ডাক্তার নেই, কোথাও স্বাস্থ্য সরঞ্জাম নেই। সেগুলো বরং পরিচালনা বাজেটে মানে রাজস্ব বাজেটে সেটা প্রতিফলিত হবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ঘাটতি বাজেট দিয়ে তা পূরণে ঋণ নিয়ে জনগণের কাঁধে বোঝা চাপিয়ে দেয়া যাবে না। তাই আসছে বাজেট ছোট হবে। ঋণ পরিশোধের দায় আছে। ভর্তুকি কমানো যাবে না। এবারের বাজেট শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের বাজেট।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফিতি কমিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলেও জানান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপির আকার ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে একনেক বৈঠকে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, টাকা ছাপিয়ে যে খরচ হয় তা মূল্যস্ফীতির উপর চাপ ফেলে। এবারের বাজেটে দায়িত্ব জ্ঞানহীন কোনোকিছু করা হবে না। সরকার আর নতুন করে মেগাপ্রকল্প হাতে নেবে না। চলমান প্রকল্পগুলোতে অর্থের অপচয় এবং অনিয়ম বন্ধে সরকার তৎপর থাকবে।
সরকারের কষ্ট হলেও জ্বালানির বকেয়াগুলো পরিশোধ করে দেয়া হচ্ছে। সরকার বকেয়া শূন্যে নামিয়ে আনতে চায় বলেও জানান তিনি।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা, টেকসই ব্যবস্থাপনাই এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য। ঋণের ফাঁদে যেন না পড়ে দেশ, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে সরকার। চেষ্টা থাকবে রাজস্ব বৃদ্ধি ও বাজেটের ঘাটতি কমানো।
তিনি বলেন, টাকা ছাপিয়ে ব্যয় করার মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন কিছু করবে না অন্তর্র্বর্তী সরকার। মেগা প্রকল্প নেয়া হচ্ছে না। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলমান থাকবে।
তিনি আরো বলেন, এবারের বাজেটকে ছোটো নয়, বরং বাস্তবসম্মত করা হচ্ছে। চলমান প্রকল্পগুলোকে শেষ করতে গিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বাড়তি নজর দেয়া যায়নি।
২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেট শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের বাজেট বলে মন্তব্য করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এবারের বাজেট দায়িত্বজ্ঞানহীন বাজেট না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বাজেট ব্যবস্থাপনা টেকসই করা হলো আমাদের মূল লক্ষ্য। এই বাজেটে আমাদের রাজস্ব বৃদ্ধি করার চেষ্টা থাকবে। একই সঙ্গে জিডিপি ৪ শতাংশের নিচে রাখার চেষ্টাও আমরা করছি।
বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈদেশিক ঋণ/অনুদানে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প, দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রকল্পে এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের আওতাধীন প্রকল্পসমূহে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) শেষ করতে আরও তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কিছু চলমান মেগাপ্রকল্প আছে, যেগুলো সরকার গিলতেও পারছে না আবার ফেলতেও পারছে না। যেমন কর্ণফুলী টানেল হয়েছে। এই টানেল দিয়ে কোথায় যাবো? টাকা খরচ করে তারকা মানের রিসোর্ট করা হয়েছে। ধু ধু প্রান্তর। ওখানে কারা যাবে?
সা¤প্রতিক নানা আন্দোলন নিয়ে বিরক্ত প্রকাশ করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, দেশে যেভাবে আন্দোলন চলছে, তাতে মনে হচ্ছে সবার দাবি দাওয়া পূরণের একমাত্র দায়িত্ব অন্তর্র্বর্তী সরকারের।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ভালো একটা নির্বাচন, দেশে সুশাসন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর অবক্ষয় পুনরুদ্ধার করাই অন্তর্র্বতী সরকারের উদ্দেশ্য।

্রিন্ট

আরও সংবদ