খুলনা | বুধবার | ২১ মে ২০২৫ | ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশকে হারাল আরব আমিরাত

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
০১:১৪ এ.এম | ২০ মে ২০২৫


শারজাহতে রূপকথার মতো রাত নেমে এলো যেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমবার বাংলাদেশকে হারের স্বাদ দিলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। সেটাও ২০৫ রান তাড়া করে। বাংলাদেশ এই প্রথম দুইশ রানের লক্ষ‍্য দিয়ে হারল কোনো ম‍্যাচে।

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের ভাগ্য পেন্ডুলামের মতো দুলছিল। শেষ দৃশ্যে বাজিমাত স্বাগতিক দলের। সফরকারী বাংলাদেশও প্রতিপক্ষকে জয় উপহার দিতে কম চেষ্টা করেনি! গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ওভার থ্রো থেকে চার রান, ম্যাচজুড়ে বাজে বোলিং কিংবা ফিল্ডিং মিস বাদ যায়নি কিছুই।

শেষ দুই ওভারে আমিরাতের প্রয়োজন ছিল ২৯ রান। আক্রমণে এসে প্রথম বলেই উইকেট শরিফুলের। তবে এরপরের গল্পটা একরাশ হতাশার। ৫ বলে গুণে গুণে খরচ করেছেন ১৭ রান। ম্যাচ ঘুরতে শুরু করে ১৯ তম ওভারের ৫ম বলে। ছক্কা মেরে দেন হায়দার আলি। পরের বলে অনায়াসে রান আউট হতে পারতেন তিনি। কিন্তু শরিফুল থ্রো রাখতে পারেননি স্টাম্পে, উল্টো হয়ে যায় বাউন্ডারি!

শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২ রান। তানজিম সাকিব শুরু করেন ওয়াইড দিয়ে। হায়দার সিঙ্গেল নেওয়ার পর ফুলটসে ধ্রুভ পারাশারের ব‍্যাটে ছক্কা হজম করেন তরুণ পেসার।

৪ বলে তখন স্বাগতিকদের প্রয়োজন ৪ রান। পরাশারকে বোল্ড করে আশা জাগান তানজিম। পরের বলে নতুন ব‍্যাটসম‍্যান মাতিউল্লাহ নেন সিঙ্গেল। এক নো বলে সমীকরণ আরও সহজ হয়ে যায় আরব আমিরাতের। পরের বলে দুই রান নিয়ে দলকে অভাবনীয় জয় এনে দেন হায়দার। ঠিক সময়ে তাওহিদ হৃদয় থ্রো করলে টাই করার সুযোগ হয়তো পেতে পারত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ২ উইকেটের হারে ৩ মাচের সিরিজে ফিরল ১-১ সমতা। আগামী শনিবার হবে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি।

বাংলাদেশের দেওয়া ২০৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মোহাম্মদ ওয়াসিমের ৮২ রানের ফলে মূলত জয় সহজ হয়ে যায় আমিরাতের। পরবর্তীতে শেষ দিকে হায়দার আলির ৬ বলে ১৫ রানের কার্যকরী ইনিংসে ভর করে সিরিজে সমতায় ফিরল আমিরাত দল।

বড় রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে এদিন বাংলাদেশি বোলারদের ওপর শুরু থেকেই তাণ্ডব চালাতে থাকেন আমিরাতের দুই ওপেনার ওয়াসিম-জোয়াইব। নাহিদ রানা-তানজিম সাকিবরা যেন কিছুতেই কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তবে ৩৮ রানে থাকা অবস্থায় জোয়াইবকে ফিরিয়ে শুরুর ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার তানভীর ইসলাম।

তখনো ব্যাট হাতে রীতিমত চার-ছয়ের ফুলঝুরি ছোটাতে থাকেন ওয়াসিম। পরে শরিফুলের বলে ৮২ রানে বিদায় নিলে টাইগারদের দিকে ঝুঁকে যায় ম্যাচ। পরবর্তীতে ম্যাচের গতিপথ কেবল পেন্ডুলামের মতো পরিবর্তন হয়েছে। শারজাহ স্টেডিয়ামজুড়ে শেষ ওভার পর্যন্ত ছিল অন্যরকম আমেজ। যে আমাজে শেষ হাসি হেসেছে আমিরাতের দর্শকরা।

এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস। বিশেষ করে ২৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে দারুণ কিছুর বার্তা দিচ্ছিলেন তানজিদ। তবে তার ইনিংস থামে তিন ছক্কা ও ৮ চারে ৩৩ বলে ৫৯ রান করে।

বাঁহাতি ওপেনারের বিদায়ে ভেঙেছে লিটনের সঙ্গে তার ৯০ রানের উদ্বোধনী জুটি। দারুণ শুরু পেলেও শুরু থেকেই হাঁসফাঁস করছিলেন লিটন দাস। স্ট্রাইক রেটের চাপ কমাতে বড় শটের নেশায় ব্যক্তিগত ৪০ রানে আউট হন লিটন। মুহাম্মাদ জাওয়াদউল্লাহর বলে মিড উইকেটে মতিউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।

এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস টানেন তাওহীদ হৃদয়। দেড়শ রানে পৌঁছাতে বাংলাদেশকে ১৬ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয়। মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলে লং অন দিয়ে চার মেরে বাংলাদেশের দেড়শ পূরণ করেন হৃদয়। শান্ত শুরু থেকেই দেখে শুনে খেলছিলেন। তবে তার ইনিংস শেষ হয়েছে ১৯ বলে ২৭ রান করে। জাওয়াদউল্লাহর বলে ধ্রুব পারাসারের হাতে শান্ত ক্যাচ দেন ডিপ পয়েন্টে। তাতেই ১৬৩ রানে বাংলাদেশ হারায় তৃতীয় উইকেট।

শেষদিকে জাকের আলী ৬ বলে ১৮ করে আউট হয়েছেন। ১৯তম ওভারে জাওয়াদউল্লাহর ওপর চড়াও হয়েছিলেন তিনি। সেই ওভারে প্রথম তিন বলে দুটি ছক্কা ও একটি চার মারেন জাকের। লং লেগ দিয়ে ছক্কা মারার পরের বলে এক্সট্রা কাভার দিয়ে মারেন একটি চার। পরের ছক্কাটি মিড উইকেট দিয়ে।

চতুর্থ বলে জাকের মিড অফে তিনি ক্যাচ দেন রাহুল চোপড়ার হাতে। যদিও ২০তম ওভারের প্রথম বলে হৃদয় ছক্কা মারার চেষ্টাতে টপ এজ হয়ে বোলার সগির খানের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। তিনি ফিরলেও দুশ পেরুনো সংগ্রহ এনে দিয়েছেন রিশাদ হোসেন ও শামীম পাটোয়ারি। রিশাদ ২ বলে ২ ও শামীম ৫ বলে ৬ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ