খুলনা | বুধবার | ২১ মে ২০২৫ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের নির্দেশনা বহন করে: তৈয়ব

খবর প্রতিবেদন |
০৩:০৩ পি.এম | ২০ মে ২০২৫


প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে জানান, বাংলাদেশে স্টারলিংক বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের নির্দেশনা বহন করে।

তিনি বলেন, মাত্র ৯০ দিন আগে পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনও এনজিএসও (নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অপারেটর) লাইসেন্স ছিল না। এই ৯০ দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি এনজিএসও গাইডলাইন তৈরি করেছে এবং তার ভিত্তিতে একমাত্র অপারেটর হিসেবে স্টারলিংক আবেদন করেছে। সেই আবেদন প্রসেস করে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে মে ২০২৫—মাত্র চার মাসের মধ্যেই তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের টেলিকমিউনিকেশন লাইসেন্সের ইতিহাসে এত দ্রুত রোল আউট নজিরবিহীন।

তিনি জানান, স্টারলিংকের ডেটা ব্যবহারে কোনও সীমা বা লিমিট নেই। এর লক্ষ্যভিত্তিক ব্যবহারকারী হলো সেই সকল এলাকা, যেখানে এখনো ফাইবার সংযোগ পৌঁছায়নি। বর্তমানে দেশের মাত্র ৩০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ারে ফাইবার কানেকশন রয়েছে। বাকিগুলোর সংযোগ মূলত লো ক্যাপাসিটি মাইক্রোওয়েভ লিংকের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে এখনও হাজার হাজার মোবাইল টাওয়ার রয়েছে, যেগুলোর ব্যান্ডউইথ মাত্র ৩০০ এমবিপিএস, যা হাজারো গ্রাহকের মধ্যে ভাগ হয়। স্টারলিংকের ক্ষেত্রে মাত্র একটি সেটআপ বক্স (মূল্য ৪৭,০০০ টাকা) দিয়ে একজন গ্রামীণ উদ্যোক্তা নিরবচ্ছিন্ন ও লো লেটেন্সি উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এটি সংসদ ভবন বা উপদেষ্টার অফিসের ইন্টারনেট স্পিডের সমান হবে, বলেন তৈয়ব।

ফয়েজ তৈয়ব বলেন, আমরা এনজিএসও’র বিধিবিধান এমনভাবে করেছি যেন এটি উদ্যোক্তাবান্ধব হয়। একজন বা একাধিক উদ্যোক্তা মিলে ৪৭ হাজার টাকার তহবিল গঠনের মাধ্যমে সেটআপ বক্স কিনে তাদের আশপাশের দোকানে ইন্টারনেট বিক্রি করতে পারবেন। ওয়াইফাই রেঞ্জ ২০ থেকে ৫০ মিটার হওয়ায় গ্রামীণ গ্রোথ সেন্টারে সহজেই বহু দোকানে এই সেবা পৌঁছে যাবে।

তিনি বলেন, আইনে কোনও প্রতিবন্ধকতা রাখা হয়নি। শহরের বাসভবনেও ওয়াইফাই শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে স্টারলিংক ব্যবহার করা যাবে। বিল্টইন রাউটারের কারণে এটি আইএসপি সেটআপেও ব্যবহারযোগ্য।

তিনি আরও বলেন, আমরা মাইক্রোক্রেডিট অথোরিটি, ফাইন্যান্সিয়াল অর্গানাইজেশন ও ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থসংস্থানের সুযোগ রাখার পরিকল্পনা করছি। যারা নাগরিক সেবা দেবেন, তাদের জন্য স্টারলিংক সহজলভ্য করতে আমরা ফাইন্যান্সিয়াল প্যাকেজ তৈরির কাজ করছি।

স্টারলিংকের মাসিক খরচ ৬,০০০ ও ৪,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কিছুটা বেশি হলেও নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে কমানো হয়েছে। যেহেতু এটি শেয়ারযোগ্য এবং বিক্রির ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ নেই, তাই উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি কার্যকর ব্যবসা মডেল হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

ফয়েজ তৈয়ব বলেন, আমরা সবাই প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘ফোন লেডি’ ধারণায় বড় হয়েছি। স্টারলিংকের মাধ্যমে ‘ওয়াইফাই লেডি’ ধারণায় নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হতে পারে। শুধু গ্রামীণ নারীদের বিশেষ ঋণ দিয়ে এই সেবায় যুক্ত করা সম্ভব। ভবন ছাড়াও ইনফর্মাল কো-ওয়েবিং ব্যবসার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া যাবে।

জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে— এ বিষয়ে তিনি বলেন, স্টারলিংকের একটি লোকাল গেটওয়ে থাকবে। এর কমার্শিয়াল টেস্ট রান ও গ্রাউন্ড টেস্ট চলমান রয়েছে। তাদের ৯০ দিনের মধ্যে এটি সম্পন্ন করতে হবে, যার ১০ দিন ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলে লোকাল গেটওয়ে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করতে হবে, ফলে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। ডিভাইস আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট, ট্যাক্স ও রেট প্রযোজ্য থাকবে এবং এনওসি গ্রহণ করতে হবে।

চলমান চীন-মার্কিন দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। ৪জি/৫জি টেকনোলজিতে চীনা প্রযুক্তির ব্যাকবোন ব্যবহার হচ্ছে। বিটিসিএল ও টেলিটকের প্রকল্পগুলো চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। মোবাইল কোম্পানির অনেক ভেন্ডরও চীনা। আমরা চাই চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের কোম্পানি এখানে স্বাধীনভাবে ব্যবসা করুক, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে।

তিনি বলেন, চীনের GW বা অন্য কোম্পানি যেমন Amazon Kuiper, Telesat, OneWeb (UK) যদি আগ্রহ দেখায়, তাদেরও সমান নীতিগত সুবিধা দেয়া হবে।

আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংক সহনীয় কি না— এমন প্রশ্নে ফয়েজ তৈয়ব বলেন, একটি ভবনে একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট মিলে এই সেবা নিতে পারবে। ওয়াইফাই রেঞ্জ ২০ মিটার হলেও একই ফ্লোর বা পাশের ইউনিটের বাসিন্দারা সম্মিলিতভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। এককালীন খরচ বেশি হলেও সমবায় ভিত্তিতে তা সহনীয় হয়ে উঠবে।

স্টারলিংকের রিজিওনাল প্রাইস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা রিজিওনাল প্রাইস অ্যানালাইসিস করে দেখেছি যে, বাংলাদেশে স্টারলিংকের দাম সবচেয়ে কম। এমনকি শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড থেকেও কম। যেহেতু শেয়ারিংয়ে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই, তাই দাম সবার নাগালে থাকবে।

তিনি বলেন, সরকারি কোম্পানির স্বার্থ দু’ভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে— এক. সাবমেরিন কেবল কোম্পানির মাধ্যমে, দুই. স্যাটেলাইট কোম্পানির মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে স্টারলিংকের আগমন বাংলাদেশের টেলিকম খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে এবং ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

্রিন্ট

আরও সংবদ