খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২২ মে ২০২৫ | ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঝুঁকির মুখে ইসির তথ্যভান্ডার

|
১২:১০ এ.এম | ২১ মে ২০২৫


জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যভান্ডার নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, প্রধান ডেটাবেজ হিসাবে যে ৫টি ‘ওপেনসোর্স ডেটাবেজ’ ব্যবহার হচ্ছে, সেগুলোর কোনো এন্টারপ্রাইজ সাপোর্ট নেই। ডেটাবেজ ও এ্যাপ্লিকেশন সার্ভারগুলোয় যে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোও পুরোনো বা অপ্রচলিত হয়ে গেছে। ফলে কোনো ‘ক্রিটিক্যাল ইস্যু’ তৈরি হলে কোনো এন্টারপ্রাইজ সাপোর্ট পাওয়া যাবে না। জানা যায়, ১৮ বছর ধরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা বিশাল এ তথ্যভান্ডারের বিকল্প হিসাবে সক্রিয় ‘ডিজাস্টার রিকভারি সিস্টেম’ (ডিআরএস) প্রতিষ্ঠা করেনি বিগত নির্বাচন কমিশনগুলো। ফলে ইসিতে স্থাপিত ডেটাবেজে বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা নাশকতা হলে জাতীয় পরিচয়পত্রসংক্রান্ত সব সেবা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকবে। ওই সময়ে ভোটার তালিকা প্রিন্ট করাও সম্ভব হবে না। এমনকি ভোটারদের তথ্য হারানোরও ঝুঁকি রয়েছে। শুধু তাই নয়, তথ্যভান্ডারের ওপেনসোর্স ডেটাবেজগুলো ব্যাকআপ রাখার জন্য আন্তর্জাতিক মানের ইন্টিগ্রেটেড একক টুলস নেই। প্রতিটি ব্যাকআপ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, তা মনিটরিং করার টুলস বা লগ দেখার ড্যাশবোর্ডও নেই। এমনকি অ্যাপ্লিকেশন অথবা ডেটাবেজগুলোয় কতটুকু রিসোর্স ব্যবহার হচ্ছে, তা দেখার জন্য দৃশ্যমান মনিটরিং টুলসও নেই। 
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, জাতীয় পরিচয়পত্র সিস্টেমের (ভোটার ডেটাবেজ, কোর-নেটওয়ার্ক, সার্ভার ও বিভিআরএস সফটওয়্যারের) টেকনিক্যাল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। ওই নিয়ন্ত্রণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পের অস্থায়ী কর্মকর্তাদের হাতে। ইতঃপূর্বে নির্বাচন কমিশনের ‘ইন্টারনাল সাইবার অডিট কমিটি’র প্রতিবেদনে তথ্যভান্ডারের কারিগরি ঝুঁকি, ত্র“টি ও দুর্বলতার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। 
এ বিষয়ে অবশ্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, সাইবার অডিট কমিটির প্রতিবেদনে উলে­খিত কিছু সুপারিশকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেওয়া হয়েছে। তথ্যভান্ডার এখনো নিরাপদ দাবি করে তিনি জানিয়েছেন, আগামী দিনেও যাতে এটি নিরাপদে রাখা যায়, সেই চেষ্টাও চলছে। নিজস্ব জনবলের সক্ষমতা বাড়িয়ে তথ্যভান্ডারের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ইসির তত্ত¡াবধানে নেওয়ার কাজও চলছে। এ বিষয়ে বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কোনো কারণে প্রধান তথ্যভান্ডার আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বিকল্প হিসাবে ডিআরএস-এর মাধ্যমে তথ্য পুনরুদ্ধার ও ব্যবহার করাই নিয়ম। এমন অবস্থায় সাইবার অডিট কমিটির প্রতিবেদনে দ্রুত ডিআরএস প্রতিষ্ঠার যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা অনুসরণ করাই শ্রেয়। আশার কথা, ডিআরএস প্রতিষ্ঠার জন্য ইসির কর্মকর্তারা স¤প্রতি কুমিল­া ও যশোরে সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেছেন। এখন প্রয়োজন দ্রুত বাস্তবায়ন। 
ভুলে গেলে চলবে না, ওই তথ্যভান্ডারে দেশের প্রায় সাড়ে ১২ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত ৪৬ ধরনের তথ্য এবং বায়োমেট্রিক ছাপ রয়েছে। এখান থেকেই নতুন ভোটার নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধন, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে যাচাইসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়া হয়। কাজেই অতি গুরুত্বপূর্ণ এ তথ্যভান্ডার থেকে কোনো তথ্য যাতে হারিয়ে যেতে কিংবা বেহাত হতে না পারে, সে ব্যাপারে গুরুত্বের সঙ্গেই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এর আগেও তথ্যভান্ডার হ্যাকারদের কবলে পড়ার নজির রয়েছে। তাই সব জটিলতাকে পাশ কাটিয়ে ইসির ‘ইন্টারনাল সাইবার অডিট কমিটি’র সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হবে, এটাই প্রত্যাশা।

 

্রিন্ট

আরও সংবদ