খুলনা | শুক্রবার | ১১ জুলাই ২০২৫ | ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

এবার ঢাকা অচলের ঘোষণা, আন্দোলনে নগর ভবনের কর্মচারীরাও, সেবা বন্ধের হুমকি

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৩ এ.এম | ২১ মে ২০২৫


ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথের ব্যবস্থা করতে টানা ষষ্ঠ দিনের আন্দোলন শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন ইশরাক হোসেনের অনুসারীরা। বুধবারের মধ্যে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া হলে ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এদিকে, আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে সব ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের পাঁচটি কর্মচারী ইউনিয়ন। মঙ্গলবার নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বুধবার (২১ মে) সকাল ১০টা থেকে নগর ভবনের সামনে আবারো অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
এদিন সকাল ১০টা থেকেই ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সামনে আসতে শুরু করেন ঢাকা মহানগরের আন্দোলনকারীরা। নগর ভবনের সামনেই অবস্থান নেন তারা। সেখান থেকে ইশরাক হোসেনকে অবিলম্বে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে নানাবিধ শ্লোগান দেন। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগও দাবি করা হয়।
ডিএসসিসি শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আরিফ চৌধুরী বলেন, আমি বর্তমান সরকারকে বলতে চাই, দয়া করে মানুষকে কষ্ট দিয়েন না। আমাদের দাবি মেনে নিন। সামনে কোরবানির ঈদ, আমরা কী করতে পারি আপনারা চিন্তাও করতে পারবেন না। আমরা ঢাকা অচল করে দেব। এরপর আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবেক সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান বলেন, বুধবার সকাল ১০টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সামনে আবারও জড়ো হবেন তারা।
আন্দোলনকারীরা সকাল থেকে গুলিস্তান-বঙ্গবাজার সড়ক বন্ধ করে ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। দুপুরের দিকে ঝুম বৃষ্টির মধ্যেও আন্দোলনকারীরা নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন। তারা নানা শ্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত করে তোলেন। এ সময় কর্মসূচি ঘোষণার মঞ্চে এই আন্দোলন ও দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বস্তরের কর্মচারী ইউনিয়ন। তাদের পক্ষ থেকে তাদের নগরবাসীর প্রত্যেক নাগরিক সেবা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত হয়ে ‘ঢাকাবাসী’র এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তারা ঘোষণা করেন, আগামীকাল (বুধবার) সকাল ১০টার মধ্যে দাবি মানা না হলে এরপর থেকে পরিচ্ছন্নতা সেবা, ময়লা পরিবহনসেবা এবং বিদ্যুৎ সেবাসহ সকল ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে। সংগঠনগুলো হলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্মচারী ইউনিয়ন, স্ক্যাভেঞ্জার এ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, পরিবহন চালক ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন, বিদ্যুৎ কর্মচারী সমাজ কল্যাণ সমিতি, ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারী সমাজ কল্যাণ সমিতি।
ঢাকার দয়াগঞ্জ থেকে আসা ছাত্রদল কর্মী সুমন হাসান বলেন, “ইশরাক হোসেন মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া নিয়ে সরকার বিশেষ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অন্যায় করছে। বিশেষ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সব নাটের গুরু। আমরা ইশরাক ভাইকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবো।”
লালবাগ এলাকার ব্যবসায়ী আদিলুর রহমান বলেন, ইশরাককে ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনে হারানো হয়েছিল। এতদিন পরে হলেও কোর্ট তাকে মেয়র ঘোষণা করেছে। যে কয়দিন মেয়াদ আছে ওই কয়দিন আমরা ইশরাককে মেয়রের চেয়ারে দেখতে চাই।
ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে সোমবার নগর ভবনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাবেক সচিব মশিউর রহমান। সে সময় তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে বসা নিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের দেয়া বিবৃতি চরম মিথ্যাচার। যদি বুধবারের মধ্যে এই দাবি মেনে নেওয়া না হয়, এর খেসারত সরকারকেই দিতে হবে। যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
এর আগে, সোমবার (১৯ মে) ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারী। সোমবার সকাল থেকেই নগর ভবন এলাকায় জড়ো হতে থাকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নগরবাসী। বেলা ১১টার কর্মসূচির আগে থেকেই নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরে বঙ্গমার্কেট এলাকা ব্লকেড করেন তারা। একই সঙ্গে গোলাপ শাহ মাজারের রাস্তাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কার্যত সকাল থেকেই অচলাবস্থা ছিল নগর ভবন, পুলিশ হেডকোয়ার্টারসহ আশপাশের এলাকা।
গত শনিবার এবং রোববার সচিবালয় অভিমুখে হাজার হাজার নগরবাসীর অংশগ্রহণে বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেন আন্দোলনকারীরা। তাদের অভিযোগ, আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ অন্তর্র্বর্তী সরকারকে বিতর্কিত করছেন। ইশরাক হোসেনকে মেয়রের শপথের আগ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা তাদের।
সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পথ করে দিতে কয়েকটি জটিলতায় পড়েছে সরকার। এসব জটিলতা দূর না হলে সরকারও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। আসিফ মাহমুদ বলেন, সকল ধরনের জটিলতা নিরসন না করে সিদ্ধান্তে যেতে পারছি না।  
২০২০ সালের ১ ফেব্র“য়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আ’লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে ইশরাকের শপথ অনুষ্ঠান এখনও হয়নি।
শপথ না হওয়ায় কোনো রাজনৈতিক দলকে দোষী মনে করেন কি না, গত শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্নের মুখেও পড়েন ইশরাক।
জবাবে তিনি বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো একক ব্যক্তি বা সরকারকে দোষারোপ করছি না। আমরা এর সমাধান চাচ্ছি।

্রিন্ট

আরও সংবদ