খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২২ মে ২০২৫ | ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডাসহ একাধিক দেশ ইসরায়েলকে খোলাখুলি হুঁশিয়ারি

গাজায় ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদছে শিশুরা চাপ বাড়লেও থামছে না ইসরায়েল

খবর প্রতিবেদন |
০৬:১৬ পি.এম | ২১ মে ২০২৫


ইসরায়েলের অবরোধ ও বোমাবর্ষণের মধ্যে গাজা উপত্যকায় চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, উপত্যকার লাখো মানুষ অনাহারের মুখে, শিশুরা কাঁদছে ক্ষুধার যন্ত্রণায়, আর কিছু না হলে এই সংকট মৃত্যুতে পরিণত হবে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) পূর্ব জেরুজালেম প্রতিনিধি আন্তোয়ান রেনার্ড বলেন, ইসরায়েল কিছু সীমান্ত অস্থায়ীভাবে খুলে দিলেও তা ‘গাজায় তীব্র খাদ্য সংকটের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল’।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে সামান্য কয়েকটি ট্রাক গাজায় ঢুকতে পেরেছে। রেনার্ড জোর দিয়ে বলেন, জাতিসংঘের মাধ্যমে বিদ্যমান খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাই অব্যাহত রাখা দরকার; তা ভেঙে দিলে পুরো গাজার জনগোষ্ঠী অনাহারের মুখে পড়বে এবং আমরা তা ঠেকাতে পারবো না।
জাতিসংঘ আরও জানায়, কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও ইসরায়েলি বিধিনিষেধের কারণে সেগুলো বিতরণ করা যাচ্ছে না।
দক্ষিণ গাজার এক নার্স বিবিসিকে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় বলেন, আমরা তপ্ত রোদে তাঁবুর নিচে থাকি, পেটে কিছু নেই। আমার সন্তানরা ক্ষুধায় কাঁদছে। একজন মা হিসেবে আমি অসহায়-না পারছি ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করতে, না ক্ষুধা থেকে, না গরম কিংবা পোকামাকড় থেকে।
খান ইউনুসের এক বাবা জানান, আমি ভালো নেই, আমার সন্তানরাও নয়।
গাজা প্রশাসনের দাবি, গত ২ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের ‘ক্ষুধানীতির’ কারণে অন্তত ৩২৬ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, আরও অন্তত ১৪ হাজার শিশুর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে, যদি খাদ্য সহায়তা না পৌঁছায়।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝেই আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় নতুন করে হামলা অব্যাহত রেখেছে। মঙ্গলবার ভোর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনাও ইসরায়েলকে থামাতে পারছে না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে থেকে এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৫৩ হাজার ৫৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ২১ হাজার ৬৮৮ জন আহত হয়েছেন। তবে এখনো বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন এবং নিখোঁজদের মৃত বলে ধরা হলে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।  সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা
অবশেষে গাজায় প্রবেশের অনুমতি পেল ১০০ ত্রাণবাহী ট্রাক : গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়ায় ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডাসহ একাধিক দেশ ইসরায়েলকে খোলাখুলি হুঁশিয়ারি দিয়েছে।  আন্তর্জাতিক সেই চাপের মুখেই নেতানিয়াহু সরকার শেষ পর্যন্ত ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলো। খবর রয়টার্সের।
মঙ্গলবার সকালে পাঁচটি ট্রাকের পরে রাতে আরও ১০০টি মানবিক সাহায্যবাহী (খাদ্য, পানি এবং ওষুধ) ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার।
বর্বর ইসরায়েলের আড়াই মাসের অবরোধের ফলে গাজায় চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ, অনাহারে আছেন অন্তত পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি বোমা-ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি, অনাহারে, বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ।  বিশেষ করে শিশুরা। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবিক সহায়তা বিভাগের প্রধান টম ফ্লেচার সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন পর্যাপ্ত ত্রাণ না পৌঁছালে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় মৃত্যু হতে পারে ১৪ হাজার শিশুর! তার পরেই ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডাসহ একাধিক দেশ ইসরায়েলকে খোলাখুলি হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক সেই চাপের মুখেই নেতানিয়াহু সরকার শেষ পর্যন্ত ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলো। 
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগের আধিকারিক জেনস লার্কে মঙ্গলবার বিকেলে জেনেভায় বলেন, আমরা গাজায় আরও বেশি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি চেয়েছি।
প্রসঙ্গত, স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বরের হামলার পরেই অভিযান শুরু করেছিল তেলআভিভ।  কাতার, আমেরিকা এবং মিশরের উদ্যোগে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দু’পক্ষ। তবে প্রথম দফার ওই যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মার্চের গোড়ায় ফের গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। একই সঙ্গে গাজা ভূখণ্ডে খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করাসহ নানা নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। ফলে গাজায় কার্যত দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি) নামক এক সংস্থা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার মানুষদের করুণ চিত্র তুলে ধরেছে তাদের প্রতিবেদনে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, গাজার ২০ লাখ বাসিন্দার অধিকাংশই ভয়াবহ অপুষ্টির শিকার। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুরা। এই আবহে গত সপ্তাহে হামাসকে নির্মূল করে গাজায় নিরঙ্কুশ দখলদারি কায়েমের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। 
তার পরে খান ইউনুস থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে। ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিলেও গাজায় হামলা থামায়নি ইসরায়েল সেনারা। মঙ্গলবারও তাদের হামলায় অন্তত ৫০ জন সাধারণ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ