খুলনা | শনিবার | ২৪ মে ২০২৫ | ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে

|
১২:৪৮ এ.এম | ২৩ মে ২০২৫


বিগত সরকারের শাসনামলে ব্যাংক খাতে কী ধরনের লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, তা বহুল আলোচিত। শেখ হাসিনার শাসনামলের ১৫ বছরে ২০ ব্যাংকের প্রায় পৌনে ২ লাখ কোটি টাকার মূলধন খেয়ে ফেলেছে লুটেরারা। ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) দেশের ২০টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকায়; যা আগের প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ছিল ৫৩ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোতে বিপুল অঙ্কের মূলধন ঘাটতির চিত্র থেকেই স্পষ্ট বিগত সরকারের শাসনামলে এ খাতে কী ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। উলে­খ্য, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ১০ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ৩৯ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতের সম্মিলিত মূলধন ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংককে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বা ৫০০ কোটি টাকা (এর মধ্যে যেটি বেশি) মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়।  
জানা যায়, উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে। ফলে অনেক ব্যাংক তাদের মুনাফা থেকে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে, যা তাদের মূলধন ঘাটতিকে আরও তীব্র করেছে। বর্তমানে যেসব ব্যাংকে নতুন করে মূলধন ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে এ লোকসান বহন করছিল। তবে আগের সরকার দ্বারা তারা সুবিধাপ্রাপ্ত হওয়ায় এসব তথ্য গোপন ছিল। এখন সেগুলো প্রকাশ পাচ্ছে। মূলধন ঘাটতি হলে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের সক্ষমতা হ্রাস পায়, যা তার আর্থিক ভিত্তি দুর্বল করে। এসব ব্যাংক প্রভিশন বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে লভ্যাংশ দিতে পারবে না এবং ধীরে ধীরে গ্রাহকও হারাবে। মূলধন ঘাটতি দেখা দিলে বিদেশি ব্যাংকগুলোও তাদের সঙ্গে লেনদেনে সতর্কতা অবলম্বন করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এলসি খোলার সময় মার্জিনও বেড়ে যায়।  
দেশের ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ। বস্তুত দীর্ঘদিন ধরে চলমান এ সমস্যা পুঞ্জীভূত হয়ে বর্তমান আকার ধারণ করেছে। যেহেতু খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতে দুরারোগ্য ব্যাধির রূপ নিয়েছে, সেহেতু এ খাতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিগত সরকারের শাসনামলে ব্যাংক থেকে লুটপাট করা বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা কঠিন। তবু এ কাজে সফল হওয়ার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষকে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। ঋণ বিতরণে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানের লক্ষে এ খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। বিগত সরকারের আমলে দেশে ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাবে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছিল। কাজেই এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যা যা করণীয়, সবই করতে হবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ